আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না: ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকি
'এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না।' এভাবেই সাংবাদিকদের হুমকি দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের বিজয় উপগ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা সবাই উপগ্রুপ বিজয়ের নেতা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) আলাওল হলে অবস্থিত সাংবাদিকদের রুমে এসে এ হুমকি দেয় তারা। এসময় সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা।
এ ঘটনায় সোমবার (১৯ জুন) ৯ জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
এ ঘটনায় জড়িত ৯ জন হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রানা আহমেদ ও ওয়ায়দুল হক লিমন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের আশিষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান, ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আবির আহমেদ ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জাহিদুল ইসলাম এবং সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের প্রমিত রুদ্র।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা ও ইতিবাচক প্রচারণার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে চবি সাংবাদিক সমিতি। ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে অবস্থান করছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব ব্লকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন কর্মরত সাংবাদিকের আসন রয়েছে। আমরা অনেকদিন যাবত লক্ষ্য করছি- চবি ছাত্রলীগের কিছু নামধারী কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত এসব কক্ষের প্রতি দখলদারি মনোভাব পোষণ করছে। যতবারই এখানকার কক্ষ ও আসন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, ততবারই সিনিয়রদের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে আমরা বিষয়গুলো সমাধান করেছি।
এ ছাড়া করোনা মহামারির ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর দেখা যায়, এই ব্লকের ওয়াইফাইয়ের তার চুরি হয়েছে। পরে তারটি লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী জোবায়ের নিলয়ের কক্ষে পাওয়া যায়। এরপর আলাওল হলের ২০২ ও ২০৯ নম্বর কক্ষ দখলের চেষ্টা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাদের সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তৎকালীন হল প্রভোস্টের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান করি।
কিন্তু সর্বশেষ গত ১৫ জুন (বুধবার) রাত দেড়টার দিকে আমাদের ব্লকে এসে ছাত্রলীগ কর্মী জোবায়ের নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। পরদিন ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টার দিকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার জেরে গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই আমরা হুমকি প্রদানকারী নামধারী শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সুযোগ পেলে এসব কর্মীরা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে পারে। সেজন্য ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিষ্কার ও ভবিষ্যতে যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিষয়টি বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসেকে জানানো হলে তিনি দেখছেন বলে ফোনকল কেটে দেন। এরপরও সাংবাদিকদের হেনস্তা অব্যহত রাখায় মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। আমরা মনে করি ইলিয়াসের পরোক্ষ মদদেই মূলত তারা বারবার এরকম আচরণ করার সাহস পেয়েছে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম ও এসএএম জিয়াউল ইসলাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
এ বিষয়ে আলাওল হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক অভিযোগ আমি পেয়েছি। আমি আবাসিক শিক্ষকদের সাথে আগামী মঙ্গলবার বসব। এরপর নেতাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
চবি সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, শুধু সাংবাদিক না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রকেই হুমকি দেয়ার অধিকার কারো নেই। আমরা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু অডিও রেকর্ডও আমাদের হাতে এসেছে। এমন অশালীন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে কখনোই কাম্য না। আমরা বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এসজি/