‘নিয়ম মান’

লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব, প্রতিনিধি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও প্রাচীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের মোট ১৭টি ছাত্র ও ছাত্রী হল আছে। ছাত্রদের জন্য উনসত্তরের গণ আন্দোলনে জীবনদান করা বাংলাদেশের একমাত্র অধ্যাপক শহীদ ড. শামসুজ্জোহা, একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া শহীদ অধ্যাপক হবিবুর রহমান, খালেদা জিয়ার নামে হল আছে। প্রতিটিই বড় ও দারুণ।
হলগুলোর সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের হয়রানি, নিপীড়ন ও শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে একসঙ্গে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা অভিভাবক, ছাত্র ও ছাত্রীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের প্রতিনিধি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম ছাত্র আসাদুল্লাহ গালিব খবরটি জানিয়ে আরো লিখেছেন, “সেদিন সোমবার, ১৩ জুন ক্যালেন্ডারের পাতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সরকারের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ‘শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবন’র পাশে বিখ্যাত প্যারিস রোডে সম্মিলিত এই মানববন্ধন কর্মসূচি শান্তিপূণভাবে পালিত হয়েছে। এরপর প্রতিবাদ।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃতি অধ্যাপকরা তাদের ছাত্র, ছাত্রীদের বাঁচাতে এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছেন তাদের পাশে অভিভাবকদের নিয়ে-‘আবাসিক হলগুলো দখল মুক্ত করতে হবে’, ‘সিট বাণিজ্য বন্ধ কর’, ‘শিক্ষার্থীদেরকে মুক্ত কর’, ‘নিয়ম মান’, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা নিশ্চিত কর’, ‘সংকট সমাধান চাই’, রাকসু নির্বাচন চাই’ ইত্যাদি।
সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানববন্ধনটির পর প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব, রসায়নের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ শামস বিন তারেক, অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন, ফিশারিজের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসাইন, আরবির অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সমাজকর্মের সহযোগী অধ্যাপক ড. আখতার মজুমদার, চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ। শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছেন।সমাবেশ উপস্থাপনা করেছেন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন। আরবির অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন, ‘যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূখ্য উদ্দেশ্য আজকে ধ্বংসের মুখে, যার ফল আমরা ভোগ করছি। বৈধভাবে সিট বরাদ্দ পেয়েও দিনের পর দিন বাইরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠলেও তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকরাও সত্য তুলে ধরতে গিয়ে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ছাত্রলীগের অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর রুম দখল করে আছে। অন্যরা প্রচার সেল, প্রকাশনা সেল রুমে লিখে দখল করে রেখেছে। ফলে হলের মসজিদের ইমামও তার ঘর বরাদ্দ পাচ্ছেন না। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বন্টন করুন। না হলে ছাত্র-শিক্ষকের আন্দোলন আরো ভয়াবহ হবে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ম্যাজিক লন্ঠনের প্রকাশক ড. কাজী মামুন হায়দার বলেছেন, ‘শুধু আবাসিকতার কথা বললেই হবে না। শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ে কি খায় প্রশাসন কি কখনো খোঁজ খবর নিয়েছে? নেয়নি। বিশেষ, বিশেষ লোকের জন্য হলে বিশেষ, বিশেষ রান্না হয়। আমাদের সব প্রভোস্টকে প্রত্যেক বেলা ডাইনিংয়ে খাওয়া উচিত। তবে যখন তারাও হলে খেতে যান, তখন খাবারের মান পাল্টে যায়। বাংলাদেশ ছাড়া এমন নিকৃষ্টতম কাজ আর অন্য কোনো দেশে হয় কি-না আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর বাবা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, ‘আমি আমার মেয়ের কাছে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভয়াবহতার কথা শুনেছি। মেয়েদের জন্য সান্ধ্য আইন করা হয়েছে। এর কারণ কি? কারণ হলো বখাটে ছেলেদের হাত থেকে মেয়েদেরকে রক্ষা। কোনো ক্যাম্পাসই তো কোনো বখাটে ছেলের জন্য নয়। তবে আমাদের প্রশাসনের আশ্বাসে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী বখাটে হয়ে উঠছেন। তাদের এখন আর দমন করতে পারছে না বলে এই সান্ধ্য আইন জারি আছে। এরকম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার জন্যে আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। আজকের বাংলাদেশ আমাদের সবাইকে হতাশ করছে।’
ওএস।
