চুয়েটে আজ ‘মুজিববর্ষ কার্নিভাল’
চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) আজ ৩১ মার্চ, ২০০২২ সকাল থেকে আনন্দ মুখর। আজ যে ‘মুজিববর্ষ কার্নিভাল’।
শুরু হয়েছে সকাল ১০টায়। তাতে অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রামের কৃতি প্রকৌশলী ও ‘দি ইনস্টিটিউটশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি)’র সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। শোভাযাত্রায় ছিলেন চুয়েটের সব অধ্যাপক ও ছাত্র, ছাত্রীরা। তাদের র্যালি প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে স্বাধীনতা চত্বরের পাশের বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিফলকে আসে। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন।
মুজিবর্ষ কার্নিভালটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সরকারি প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বিশেষ আয়োজন।
আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন সবাই। এরপর মুজিব শতবর্ষের সচিত্র উপস্থাপন। তারপর বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রামাণ্যচিত্র। উপস্থাপক অন্যতম সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফীন।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের আলোচনা উপস্থাপনা করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ চুয়েটের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার রায় ও পরিষদের প্রচার সম্পাদিকা নাহিদা সুলতানা।
প্রধান অতিথি ও আইইবির সাবেক সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রকৌশলী সমাজের অবদান রয়েছে। এই চুয়েটেরই আছেন দুজন শহীদ ছাত্র। তারা মুক্তিযুদ্ধে জীবনদান করেছেন।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও তার প্রেরণাতে বাঙালি যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। তিনি ক্ষমতায় থেকে আমাদের মুক্তির রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন।’
“বাংলাদেশ ‘রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র’ তৈরি করে শান্তির জন্য পারমানবিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্বের ৩২তম পারমানবিক দেশ হয়েছে তার মেয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। ফলে আমরা এখন শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ।”
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার ও আত্মীয়জনকে নিয়ে মেরে ফেলে তার চিহ্নটুকু মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে ১৯৭৫ সালে। তবে তার মেয়ে দেশকে নিজের স্বপ্নপূরণের মাধ্যমে অনেক এগিয়ে নিয়েছেন। ফলে আমরা অথনৈতিক শক্তি হয়ে চলেছি।’
‘দেশের সব উন্নয়নে আমাদের প্রকৌশলীদের অনন্য অবদান আছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা গর্বিত অংশীদার। আগামীতে সারা বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদান করতে প্রস্তুত। আরো এগুতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যেতে হবে। মাটি ও বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের শক্তিশালী করতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘বীর বাঙালিকে একাত্তরে চট্টগ্রামে কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। আমাদের এই জনপদের অন্যতম কেন্দ্রভূমি চট্টগ্রাম। ইতিহাস কত যে পুরোনো। এই বাংলাদেশ জনপদটিকে যারা শাসন করেছেন, শোষণই করেছেন। আমাদের তিন হাজার বছরের ইতিহাসে স্বাধীনতার আধুনিক স্বাদ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা জানি, তিনি ছোটবেলা থেকে মানবকল্যাণ ও জনকল্যাণে কাজ করেছেন। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের দেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ ও অনস্বীকার্য অবদানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
চুয়েটের উপাচায অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সেরা প্রকৈৗশলীদের অন্যতম মহাবিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনটিই জনগণের স্বার্থে ত্যাগ ও সংগ্রামে ভাস্মর। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ সমাজ গড়ে উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সহযোগিতা করে চলেছি। মুজিব কার্নিভালের মাধ্যমে দেশের জন্য আরো উন্নত এবং দক্ষ প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী গড়ে তোলা হচ্ছে।’
কার্নিভালে বিশেষ অতিথি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর। ছিলেন জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী।
মুজিব শতবর্ষ উদযাপন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. রণজিৎ কুমার সূত্রধর। তিনিও আলোচনা করেছেন।
ছিলেন চুয়েট শিক্ষকদের বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দীন আহাম্মদ। সহ-সভাপতি এবং তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক, সাধারণ সম্পাদক ও স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান, শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহি সদস্য ও পরিষদের সহ-সভাপতি (৩) অধ্যাপক ড. উজ্জ্বলকুমার দেব।
ছিলেন চুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিন মোহাম্মদ মুসা, স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।
ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে কার্নিভালে বক্তৃতা করেছেন সাজিলা সুলতানা ও ইমার হোসেন নিবর।
বিশেষ এই আনন্দমেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে কুইজ প্রতিযোগিতা হয়েছে। ‘মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশ’ নামের রচনা প্রতিযোগিতা, প্রগ্রামিং প্রতিযোগিতা, আইডিয়া শো-কেস কনটেস্ট, ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারী ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজির আয়োজন আছে।
ওএস।