গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাল তারকা চিহ্ন তুলে নিলো ইউজিসি
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল-দীর্ঘ তিনটি বছর পর অপেক্ষার পালা, কষ্টের দিন শেষ হলো তাদের। বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশ থেকে অবশেষে ‘লাল তারকা চিহ্ন’টি সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন ও চিকিৎসা খাতের প্রবাদ পুরুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ‘বিশেষ চিহ্ন’টি সরানো হয়েছে। তাদের ছাত্র, ছাত্রী সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। তবে তারা এও জানিয়েছেন, এর পেছনে তাদের শিক্ষাথীদের ৬৮ দিনের আন্দোলন, অধ্যাপক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও করোনাভাইরাসের আক্রমণের বিলম্ব দায়ী।
ঢাকা প্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইহসানুল কবীর আনিন জানিয়েছেন, “আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচটি অনাস ও মাস্টাস প্রগ্রাম-এমবিবিএস, বিডিএস, বিবিএ, ফিজিওথেরাপি ও পরিবেশ বিজ্ঞানে ভর্তির নানা পযায়ে ২০১৯ সালের মার্চে স্থগিতাদেশ দেয় ইউজিসি।’
‘এমবিবিএসের কারণ হলো, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজটি তখন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ইউজিসির কারণে এখন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি প্রদান করছেন।’
‘বিডিএসের কমজীবনের জন্য বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আছে বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল ও আলাদা সেন্টার।’
‘বিবিএ বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষক কম ছিলেন। এখন পর্যাপ্ত রয়েছে।’
‘ফিজিওথেরাপি বিভাগটি আলাদা ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও থেরাপিস্ট শিক্ষকের অভাবে ভুগছিল। সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে।’
‘পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র, ছাত্রী; শিক্ষক কম ছিলেন। এখন আর নেই।’
‘এই সমস্যাগুলো নিয়েই ভালো এই বিভাগগুলোর যাত্রা শুরু করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তাদের সারা দেশের ৩৬টি সাব সেন্টার চালানোর জন্য ও সাভারের এই অলাভজনক উদ্যোগ পরিচালনা করতে এমবিবিএস চালু করেছে।’
‘তবে এই সমস্যা ও সেগুলোর সমাধানের জন্য ২০১৯ সালের মার্চে ইউজিসি এই চিহ্নটি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে প্রদান করেন।’
‘এদিকে তার ছাত্র, ছাত্রীরা মার্চেই চিহ্নটি ওয়েবসাইটে দেখতে পেরে আন্দোলনে নামেন। তাদের আরেকটি দাবী ছিল, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বদলে পূর্ণকালীন ও ইউজিসির বৈধ উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।’
‘তখন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা, রোকেয়া হলের ৭১’র নেত্রী ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সন্তান অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু। তাকে তার ছাত্র, ছাত্রীরা খুব পছন্দ করত।’
‘তাদের ৬ এপ্রিল থেকে ৬৮ দিনের টানা আন্দোলন শুরু হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত চিকিৎসা ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আদালতে যান। আদালতের স্থগিতাদেশ এনে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান। শিক্ষাথীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে।’
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “করোনাভাইরাসের আক্রমণের প্রকোপে শুরু থেকে চাইলেও জীবনের নিরাপত্তায় এই বিষয়ে ২০১৯ সাল থেকেই কাজ করতে পারেনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়। আমিও ভিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে এই বিষয়গুলোতে নজর দিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে আরো এগিয়ে গেলাম। তারপর থেকে আমার দপ্তর থেকে নানা সময়ে ইউজিসিতে যোগাযোগ ও চিঠি আদান-প্রদান করা হয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছেন এবং নিজেরাও দেখেছেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনুমোদিত বিষয় নেই। বরং সমাজের লাভের জন্য গণ বিশ্ববিদ্যালয় কম টাকায়, ভালো মানের শিক্ষা প্রদান করে। সমাজের উপকারে অপ্রচলিত বিষয়ও পড়াচ্ছেন।’ তাদেরকে আমরা যাবতীয় প্রমাণাদি প্রদান করেছি। তাদের সকল প্রক্রিয়া শেষে আজ এই ‘লাল তারকা চিহ্ন’টি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি ইউজিসিকে লাল তারকা চিহ্নটি তুলে নেওয়ায় ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকায় আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করি, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিনে তাদের নীতিমালা অনুযায়ী আরো ভালোভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আগামীতে আরো অনেক সুন্দরভাবে সামনে এগিয়ে যাবে।’
লাল তারকা চিহ্ন সরিয়ে নেবার কথা জানিয়ে ইউজিসির বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় দপ্তরের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেছেন, 'যেসব অনুমোদিত কারণে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে রেড মার্ক দেওয়া হয়েছিল, কারণগুলো এখন আর নেই। তাই ইউজিসি চিহ্নটি তুলে নিয়েছে।”
লেখা ও ছবি : ইহসানুল কবীর আনিন, গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ওএস/এএস