নির্দিষ্ট তালিকা না থাকায় চবিতে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) খাবার ও পরিবহন ভাড়ার নির্দিষ্ট কোনো তালিকা না থাকায় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই শিক্ষার্থীরা সিএনজি, রিকশা ও বাস চালকদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডায় এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সিএনজি চালকরা। ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। আন্দোলনে নামলে পরে প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে প্রশাসনের দেওয়া নির্দিষ্ট কোনো ভাড়া নিয়ে তালিকা না থাকায় রিকশা, সিএনজি চালকরা সুযোগ পেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। ফলে তাদের পক্ষে বেশি ভাড়া দেওয়া কষ্টকর। এ ছাড়া তারা যে মারধরের শিকার হন এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে না। এ সমস্যার সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। প্রশাসনের কোনো শিক্ষক যদি তাদের মতো হয়রানির শিকার হতো তাহলে নিমিষেই সমাধান হয়ে যেত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়ার তালিকাই ছিল সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রশাসনের। বর্তমান প্রশাসন আসার পর থেকে নির্দিষ্ট কোনো ভাড়ার তালিকা দিতে পারেনি। রিকশা ও সিএনজি চালকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সুষ্ঠু সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে চবি প্রশাসন। যার কারণে প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীরা বাকবিতণ্ডায় জড়ায়।
ইফতেখার প্রশাসনের দেওয়া যে নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা ছিল তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঝুলানো ছিল। পরে দেখা যায় রিকশা ও সিএনজি চালকরা সুযোগ মতো খুলে ফেলে। প্রশাসন এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
শাওন ইসলাম নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা নতুন, ক্যাম্পাসে ক্যান্টিনের খাবারের নির্দিষ্ট কোনো দামের তালিকা না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। প্রায়ই আমরা বিপাকে পড়ি। আবার আমরা ক্যাম্পাসে সিএনজি ও রিকশা ভাড়া জানি না। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়। ফলে দেখা যায় আমরা নতুনরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হই। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। ক্যান্টিনের খাবার তদারকি করা উচিত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি। যেমন শাটল ট্রেনের সমস্যা, খাবারের সমস্যা, পরিবহন ভাড়া নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সিএনজি ও রিকশা ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে স্যারদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেই সঙ্গে কটেজ মালিকদের কথা বলেছি ভাড়া কমানোর জন্য। আর এখন যে খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মানটা নিম্নমানের হয়ে আছে এটা নিয়েও আমরা কাজ করতেছি।
এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, সিএনজি চালকরা যে শিক্ষার্থীদের মারধর করে এবং আগেও এরকমটা ঘটেছে আমি নিজে প্রক্টর অফিসে সিএনজি চালকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ও স্যারদের সঙ্গে বসেছি। যাদের আয়ের মাধ্যম শিক্ষার্থীরা, তারা কেন শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলবে। আমি এরকমও বলেছি যে,যদি কোনো চালক এরকম করে তাহলে তাদের ক্যাম্পাসে সিএনজি ও রিকশা চালাতে দেওয়া হবে না। আমরা ছাত্রলীগ সবসময় ছাত্রদের সঙ্গে ছিলাম,আছি, থাকব। আমরা সবসময় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে যাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড.শহীদুল ইসলাম বলেন, সিএনজি চালকরা দু-তিন মাস ধরে ভাড়া বাড়াতে চাচ্ছে কিন্তু আমরা দিচ্ছি না। দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া ৬ টাকা আছে আর উঠানামা ৫ টাকা। আর তারা যে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।
খাবারের দামের তালিকা নিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসে যেসব হলের সামনে ক্যান্টিন আছে সেগুলো স্ব স্ব হল প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে এক্ষেত্রে তারা যদি ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টা আমলে নেব।
এসএন