ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নীলুফা আক্তার বানু প্রভোষ্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন
লেখা ও ছবি : রায়হান মাহবুব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সেরা উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’র প্রভোস্ট ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানু পদত্যাগ করেছেন। তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে আজ ৯ মার্চ তার পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচায অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের কাছে জমা দিয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “ম্যাডাম ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করে পদত্যাগপত্রটি জমা দিয়েছেন।" কীভাবে হলটি চলবে-এই প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আপাতত হাউজ টিউটররা হল চালাবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম নারী অধ্যাপক বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই নামকরা শিক্ষকের অভাবে কিভাবে হলটি চলবে-তার উত্তরে বলেছেন, ‘ভিসি স্যার অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ক্যাম্পাসে ফিরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানু আজ এই প্রতিবেদককে তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া নিশ্চিত করেছেন ও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রশাসক হিসেবে সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি দায়িত্বভার পরিচালনা করবেন।
উল্লেখ্য, ৮ মার্চ আন্তজাতিক নারী দিবসে হল প্রভোষ্ট অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানুর বিপক্ষে অসদাচরণের অভিযোগে আন্দোলন শুরু করেন তার আবাসিক ছাত্রীরা। টানা দুটি ঘন্টা তারা আন্দোলন করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাত সাড়ে নয়টা থেকে হল ফটকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন ও তার বিপক্ষে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
তখন তাদের কাছে উপস্থিত হলে এই প্রতিবেদককে আন্দোলনকারী কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ৮ মার্চ সন্ধ্যায় ২০১৯-’২০ শিক্ষাবর্ষের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী ও অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কয়েকবার অসুস্থতায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এরপর তার সহপাঠী ও হলের আবাসিক ছাত্রীরা মিলে হলের প্রভোস্ট ম্যাডামকে কয়েকবার সাহায্য চেয়ে মোবাইলে ফোন করেন। তবে কী কারণে যেন তিনি তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা উপায়ান্তর না পেয়ে হাউজ টিউটর স্যারকে মোবাইলে ফোন করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করেন। তবে জরুরী সেবাদান গাড়িটি আসতে দেরী হচ্ছে বলে অসুস্থ ছাত্রীর উদ্বিঘ্ন বন্ধু ও স্বজনরা প্রভোস্ট ম্যাডামকে আবার টেলিফোন করেন। তারা কয়েকবার মোবাইলে ফোন করার পর অধ্যাপক ড. নীলুফা আক্তার বানু বিরক্ত হন ও বলেন, ‘বারবার ফোন করার কী আছে?’ তাতে ঠিকমতো হলে না আসা, কোনো অসুবিধায় হলের সবোচ্চ অভিভাবককে ঠিকমতো পাওয়া না যাওয়া এবং আরো নানা সমস্যায় কাতর ছাত্রীরা অ্যাম্বুলেন্সটি সময়মতো না পেয়ে প্রচণ্ড বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।
তারা অ্যাম্বুলেন্স আসা মাত্র ছাত্রী রাজিয়া সুলতানাকে প্রেরণ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শতাধিক ছাত্রীর এই আন্দোলনে প্রশাসনের টনক নড়ে ও প্রক্টরিয়াল বডি এসে তাদের সঙ্গে আলাপ ও সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা শুরু করেন। তবে অনড় ছাত্রীরা হল প্রভোস্টের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা করেন।
তারপর রাত ১২টায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান নিজে এসে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ হলটির হাউজ টিউটররা ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তারা দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন ও ছাত্রীরা তাদের রুমে ফিরে যান।
পরদিন আজ ৯ মার্চ তারা মোট ২৫টি দাবী জানিয়ে ও তার বিপক্ষে অভিযোগ করে একটি স্মারকলিপি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের দপ্তরে জমা দেন এবং তার সঙ্গে দাবীগুলো নিয়ে আবার কথা বলেন।
ওএস।