নারী দিবসে ‘ডে-কেয়ার সেন্টার’ চালুর দাবী নারী অধ্যাপকদের
লেখা ও ছবি : রায়হান মাহবুব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সেরা উচ্চতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী অধ্যাপকরা আজ ৮ মার্চ, ২০২২ সালের নারী দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডে-কেয়ার সেন্টার' চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবীটি পূরণ হলে দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানকে লালন-পালন করতে থাকা মায়েদের প্রয়োজনে মাতৃদুগ্ধ প্রদান, তাদের সন্তানদের দেখাশোনা, কাছে গিয়ে মা-সন্তানের বন্ধন পূরণ করা ও শিশু সন্তানের চাওয়াগুলো নিরাবণ করা সম্ভব হবে। তাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে। তাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সন্তানদের ভালোভাবে রাখা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী, শিক্ষিকা, নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ছাত্রীদের সবার বিনোদন, আলাপ-আলোচনার জন্য ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নারী ক্লাব’ চালু করার অভিনব ও সময়োপযোগী দাবী করেছেন তারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের কাছে দাবীগুলো পেশ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরা।
তারা জানিয়েছেন, “কুষ্টিয়াতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক হিসেবে ৪৩ বছর পার করেছে গৌরবের সঙ্গে। তবে অগৌরবের বিষয় হলো, কোনো নারী শিক্ষক তাদের সন্তানদের জন্য ‘ডে-কেয়ার সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তারা তাদের ছেলে ও মেয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বাসায় আত্মীয়-পরিজনের কাছে রেখে এসে ক্লাস করান এবং অন্যরাও চাকরিতে নানা ধরণের প্রশাসনিক কাজ করেন। তবে সন্তান তো চাকরি বোঝে না। তারা খিদেয় কাঁদে। ফলে মায়েরা সারাদিনের কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। তাদের খুব কষ্ট হয়। ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আধুনিক বিদ্যায়তনে প্রশাসনের উদ্যোগে নারী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুগ্ধপোষ্য সন্তাদের জন্য আলাদাভাবে ‘ডে-কেয়ার সেন্টার’ স্থাপন করতে হবে। এর বাদেও প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাদের জন্য কোনো সংগঠন বা ক্লাব গড়ে দেওয়া হয়নি। ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শত, শত নারী অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাওয়া ও পাওয়া, বিনোদন পূরণে কোনো আধুনিক মাধ্যম গড়ে ওঠেনি। এ অত্যন্ত দুঃখজনক।”
আজ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্মারক ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুর্যাল’-এর সামনে দাঁড়িয়ে আলোচনা সভায় এই দাবীগুলো পেশ করেছেন। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শোভাযাত্রা করেছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আন্তজাতিক নারী দিবস-৮ মার্চ’ পালনানুষ্ঠানে নারীরা প্রাধান্য বিস্তার করে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। আলোচনা সভার সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন। উপস্থাপনা করেছেন ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার আশা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও কর্তা, অফিসার, কর্মচারী নারীরা। ছিলেন ও আলোচনা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোষ্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানু ও আল ফিকহ আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. হামিদা খাতুন।
প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি এই সমস্যাগুলো এতকাল চোখে পড়েনি কেন-এজন্য বিস্ময় প্রকাশ করে সেগুলো অতিদ্রুত পূরণ করে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। নারী দিবসের আলোচনায় বলেছেন, ‘একজন নারী বা পুরুষের আগে আমি একজন মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের এই শিক্ষা প্রদান করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের আজীবন অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়ে গিয়েছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের নারী সমাজের অধিকার আদায়ের জন্যই আসলে সারাজীবন তার আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। তার মেয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। শেখ হাসিনার নারীবান্ধব অনেক কাজ আছে। তার আধুনিক দেশে নারী ও পুরুষ দেশের উন্নয়নে সমান ভূমিকা পালন করে চলেছেন।’
বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া।
আরো ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মু. আতাউর রহমান প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, দপ্তর, হলগুলোর নারী অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাতে যোগদান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অবদান বলেছেন।
ওএস।