রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

একজন মানবিক বিজ্ঞানী ও তার কোয়ান্টাম তত্ত্ব

আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম দুটি ভিত্তি হলো–আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিকস। আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব যেমন স্থান, কাল, মহাকর্ষ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমাদের ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে; তেমনি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্বও পারমাণবিক, অতিপারমাণবিক বিষয়াদি বোঝার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তবে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের বাইরে এসে কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্ম দেন। সে কারণেই তিনি এক ‘অনিচ্ছুক বিপ্লবী বিজ্ঞানী’।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বিজ্ঞানী হয়ে উঠার গল্পই তুলে ধরা হয়েছে ‘কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক–ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক’ গ্রন্থে। সাংবাদিক আবুল বাসারের লেখা এ বইয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই শুধু স্থান পায়নি। বরং এখানে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের শৈশব, তাঁর বেড়ে উঠা, তৎকালীন সমাজ বাস্তবতাও স্থান পেয়েছে। ভাষার প্রাঞ্জলতা এ বইটির একটি বিশেষত্ব, যা একজন পাঠককে পরবর্তী ধাপে টেনে নিয়ে যেতে পারে। সেখানে একজন বিজ্ঞানীর চিন্তা-চেতনার প্রতিফলনও দেখতে পাওয়া যায়–কীভাবে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক হয়ে উঠলেন বিজ্ঞানের বিপ্লবী।

বেড়ে উঠা

জার্মানির কিয়েল শহরে ১৮৫৮ সালের ২৩ এপ্রিল জোহান জুলিয়াস উইলহেম প্ল্যাঙ্ক এবং এমা প্যাটজিগের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। প্ল্যাঙ্ক পরিবার ছিল উচ্চশিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী। জোহান ছিলেন একজন আইনের প্রফেসর। এমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। জন্মকালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের নাম রাখা হয়েছিল কার্ল আর্নেস্ট লুডভিগ মার্ক্স প্ল্যাঙ্ক। নয় বছর বয়সী তাকে কিয়েলের একটি এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি করা হয়। এক বছর পর থেকে তিনি নিজের নাম একটু ছেঁটে লিখতে শুরু করেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। এরই পর থেকে এ নামেই তিনি পরিচিত হন।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে প্রবেশের পর থেকেই প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে। মিউনিখের ম্যাক্সিমিলিয়ান জিমনেসিয়াম স্কুলের গণিত শিক্ষক হারমান মুলার তা বুঝতে ভুল করেননি। গণিতে ম্যাক্সের প্রতিভা ছিল অন্য সবার চেয়ে পৃথক। হারমান তাই ম্যাক্সকে বাড়তি করে জোতির্বিজ্ঞান ও বলবিদ্যা পড়াতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হারমানের কাছেই তিনি লাভ করেন পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ ও মৌলিক পাঠ। ম্যাক্সের প্রতিভা শুধু গণিত, পদার্থবিজ্ঞানেই আটকে ছিল তা। সংগীত চর্চায়ও তিনি ছিলেন অনবদ্য।

বিজ্ঞানীর ধর্মবিশ্বাস

ম্যাক্স ১৮৭৪ সালে সতেরো বছর বয়সে পাড়ি জমান জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তবে পড়া শুরু করেই তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন পদার্থবিদের উপর বিরক্ত হন। কারণ তাদের ধারণা ছিল–পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সবই আবিষ্কৃত। তাই গতানুগতিক কাজেই তাদের গবেষণা সীমিত ছিল।

এ সময়ে তাঁর ধর্মবিশ্বাস পায় নতুন মাত্রা। জন্মগতভাবে খ্রিস্টধর্মানুসারী হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি লুথারান মতবাদকে ধারণ করেন। নাস্তিকতাকে তিনি অস্বীকার করতেন। তবে ভিন্নমত ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। ১৯৩৭ সালে ‘ধর্ম ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় ম্যাক্স তার ধর্মবিশ্বাস তুলে ধরেন। বিশ্বে খ্রিস্টধর্মের নামেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে বলে ক্যাথলিক চার্চকে আঘাত করেন। তার মতে, ঈশ্বরকে কোনো নির্দিষ্ট প্রতীকে বন্দি করে রাখা সম্ভব নয়। ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। প্রতীকে আবদ্ধ করার মানেই ঈশ্বরকে খণ্ডিত করা। ‘সায়েন্টিফিক অটোবায়োগ্রাফি অ্যান্ড আদার পেপারস’ শীর্ষক গ্রন্থে ম্যাক্স আরও বলেন, বিশ্বাসের মানেই হলো সত্যের উপলব্ধি। ক্রমাগত প্রাকৃতিক জ্ঞান আহরণের মধ্য দিয়ে সত্যের দিকে ধাবিত হতে পারে প্রকৃতি বিজ্ঞান।

কোয়ান্টামের পথে

১৮৭৭ সালে ২০ বছর বয়সী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বার্লিনের ফ্রেডরিখ উইলহেলম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য বদলি হন। সেখানে তিনি তাপগতিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৭৮ সালের শেষ দিকে বার্লিন থেকে ম্যাক্স মিউনিখে ফিরে আসেন। পরের বছর তিনি তাপগতিবিজ্ঞানের দ্বিতীয় সূত্রের উপর তার গবেষণা প্রবন্ধ জমা দেন এবং মাত্র ২১ বছর বয়সেই লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। পরের বছর তিনি আরও একটি গবেষণা প্রবন্ধ জমা দেন। এই গবেষণা প্রবন্ধই তাকে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ১৮৮৯ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সার্বক্ষণিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়।

সে সময় জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ডব্লিউ জে ভিনের সূত্র ছিল বৈজ্ঞানিক আলোচনার কেন্দ্রে। ১৮৯৬ সালে তাপগতিবিদ্যার তত্ত্ব প্রয়োগ করে কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালীতে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য শক্তি বণ্টন দুটি সূত্র প্রদান করেন এই বিজ্ঞানী। সূত্র দুটির নাম যথাক্রমে ভিনের সরণ সূত্র ও পঞ্চঘাত সূত্র। সূত্রটি হলো–কোন কৃষ্ণবস্তু থেকে সর্বাধিক শক্তি বিকিরণের জন্য তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কৃষ্ণবস্তুটির পরম তাপমাত্রার ব্যস্তানুপাতিক।

বিজ্ঞানীরা এ সূত্রের কিছু ত্রুটি খুঁজে পান। এর বিপরীতে অপর একটি সূত্র সামনে আসে, যা র্যালে-জিন্স সূত্র মানে পরিচিত। এ সূত্রানুসারে বস্তু যত উত্তপ্ত হতে থাকে, বিকিরণের তীব্রতা ততই অসীমের দিকে ধাবিত হতে থাকে। তবে এতেও ত্রুটি ছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, এ সূত্রটির কার্যকারিতা ভিনের সূত্রের ঠিক উল্টো। ভিনের সূত্র ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কার্যকর প্রমাণিত হলো, দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ছিল অকার্যকর। অপরদিকে, র্যালে জিন্স সূত্র দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কার্যকর প্রমাণিত হয়; কিন্তু ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তা সঠিক ফল দিচ্ছিল না।

এই সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। তিনি প্রস্তাব করেন যে, শক্তি অবিচ্ছিন্নভাবে যে কোনো পরিমাণে নির্গত হয় না; বরং নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্গত হয় যার নাম দেন তিনি ‘কোয়ান্টা’। প্ল্যাঙ্ক আরও বের করেন যে তড়িৎচুম্বক বিকিরণ এর সাথে বাহিত শক্তির পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। এ সংখ্যাটিকে আজ আমরা প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক বলেই জানি। এ সমীকরণ থেকে বোঝা যায়, যে কোনো বিকিরণের কোয়ান্টাম শক্তি তার কম্পাঙ্ক ও প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের (h) গুণফলের সমান। সহজ কথায়, কম্পাঙ্ক বাড়লে কোয়ান্টাম শক্তিও বাড়বে।

এখানে অবিভাজ্য একক শক্তি E=hv, এখানে v হলো কম্পাঙ্ক, h=৬.৬২৬০৬৯৫৭ X ১০-৩৪

১৯০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটির সভায় ম্যাক্স তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ ‘স্বাভাবিক বর্ণালির শক্তি বণ্টনের সূত্র’ উপস্থাপন করেন। সেদিন তিনি অনেক অভিনন্দন পেলেও হয়তো অনেকেই বুঝতে পারেননি প্ল্যাঙ্ক কী বিপ্লব সাধন করেছেন। এর কিছুকাল পর আইনস্টাইন, নিলস বোর, হাইজেনবার্গ, শ্রোডিঙ্গার, পাউলি ব্রগলির মতো তরুণ বিজ্ঞানীরা যে কোয়ান্টাম তত্ত্বকে এক শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাবেন, সেটাই বা কে জানত! ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন স্বীকার করে নেন, আলোর মধ্যেও এই অতিক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন গুচ্ছ বা প্যাকেট (বা কোয়ান্টা) থাকে। এই প্যাকেটকে আইনস্টাইন নাম দিয়েছিলেন কোয়ান্টা অব লাইট বা আলোর কণা।
এ দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার সম্পর্কে ম্যাক্স নিজেও যে সচেতন ছিলেন, তা-ও নয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমি জানি মৌলিক ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যায় কার্যের কোয়ান্টাম (h) পদার্থবিজ্ঞানে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমন কিছু যে হতে পারে, আমি আসলে তা সন্দেহ করতেও প্রস্তুত ছিলাম না।’

কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের সূত্র তথা কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯১৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক।

নাৎসিদের অধীনে জীবন

নাৎসি শাসন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ম্যাক্সের জীবনকে রীতিমতো তছনছ করে দিয়েছিল। ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি দল জার্মানির ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই শুরু হয় হিটলারের ইহুদিদের বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া। তখন ম্যাক্সের বয়স ৭৪ বছর। তিনি দেখলেন অনেক ইহুদি বন্ধু ও সহকর্মী তাদের পদ থেকে বহিষ্কৃত হলেন। অপমানিত করে ইহুদিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ি, এমনকি নাগরিক অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হতে থাকল।

হিটলারকে যে সহজেই ফেরানো সম্ভব নয়, তা বুঝে একে একে বিজ্ঞানীরা দেশ ছাড়তে শুরু করেন। ম্যাক্স বুঝতে পারলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে জার্মানি জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়বে। গেলেন হিটলারকে বোঝাতে। মিনিট চল্লিশেক আলোচনা হলেও, তা ছিল নিষ্ফল। হাজারো জ্ঞানী-গুণীজন জার্মানি ছেড়ে গেলেন। সেইসঙ্গে জার্মানি জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে সরে এলো। নাৎসি শাসনের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে যাননি ম্যাক্স। এরপরও নাৎসিরা তার ছেলেকে হিটলারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যা করেছিল।

প্রসঙ্গত, নাৎসিদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা না করলেও, তাদের সহযোগিতাও ম্যাক্স করেননি। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ছিল হিটলার তাঁর সহযোগিতায় হয়তো পারমাণবিক গবেষণা চালাচ্ছে। তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একাধিকবার ম্যাক্সের বাড়ি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। এক অসাধারণ বিজ্ঞানীর বহু গবেষণা ধসিয়ে দেওয়া হয় মাটির সঙ্গে। নাৎসি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ম্যাক্সের খোঁজে নামে মার্কিন বাহিনী। তাকে এক কৃষকের বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে আনা হয়। ম্যাক্সের স্ত্রী মার্গা আরেক পদার্থবিজ্ঞানী ভন লিউকে বলেছিলেন, জীবনের সব কষ্টের স্মৃতি ভুলতে পারলেও তিনি দুটো স্মৃতি ভুলবেন না। একটি হলো ম্যাক্সের ছেলে আরউইনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার মুহূর্ত এবং অপরটি হলো মার্কিন সেনারা যখন তার স্বামীকে জিপে তুলল, সেই মুহূর্তটি। তখন তিনি প্রচণ্ড ব্যথায় কেঁদে উঠেছিলেন।

মার্কিন বাহিনী ম্যাক্স ও অন্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়েও ইংল্যান্ডের প্রত্যন্ত এলাকার এক খামারবাড়িতে আটকে রাখে। পরে ছেড়ে দেওয়া হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ম্যাক্স বার্লিনে ফিরে দেখেন এক বিধ্বস্ত নগরী। পুরো নগরীর চেহারা যেন তার ধসে পড়া বাড়িটির মতোই।

শেষের কথা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার দুই বছর পর ১৯৪৭ সালের ৪ অক্টোবর ৮৯ বছর বয়সে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক জার্মানির গটিনগেন শহরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এ মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী মার্গার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন থেকে এক চিঠিতে আইনস্টাইন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘নেতাদের মধ্যে যদি এ রকম অনন্য মানুষ থাকত, তাহলে মানুষের পৃথিবী কত আলাদা আর ভালো হতো।’ বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের বাড়িতে যে সময়গুলো কাটিয়েছি এবং যে সময়গুলো এই চমৎকার মানুষটির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি, সেগুলো আমার বাকি জীবনের সুন্দরতম স্মৃতি হয়ে থাকবে। একটা মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল, সেই সত্যটা আমি বদলাতে পারব না।’

দুনিয়া পাল্টে দেওয়া এক তত্ত্বের আবিষ্কারক হওয়ার পরও ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক নিয়ে আলোচনা সেভাবে হয়নি। অথচ এর বিপরীতে আরেক দুনিয়া কাঁপানো আপেক্ষিকতা তত্ত্বের আবিষ্কারক আলবার্ট আইনস্টাইন বরাবরই ছিলেন আলোচনায়। তবে বাকি বিশ্বে আলোচনার বাইরে থাকলেও জার্মানিতে ম্যাক্সকে নিয়ে আলোচনা বরাবরই ছিল ও আছে। আর ইংরেজি নির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় আলোচনায় না থাকায়, যদিও বা কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়ে কিছু বই পাওয়া যায়, ম্যাক্সকে নিয়ে বাংলায় তেমন ভালো রচনা সেভাবে পাওয়া যায় না। আর এজন্যই আবুল বাসারের লেখা ‘কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক–ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক’ বইটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিজ্ঞানের আগ্রহীরা এ থেকে এক বিপ্লবী বিজ্ঞানীর প্রাথমিক সাক্ষাৎটুকু যে পেতে পারেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়।

বই: কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক

লেখক: আবুল বাসার

প্রকাশক: বাতিঘর

প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০২১

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

মূল্য: ২৮০ টাকা

এসএ/

Header Ad
Header Ad

একনেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পসহ মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

এ সময় উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে সঠিকভাবে অগ্রগতি না থাকায় এটি “সমুদ্র বন্দরও হবে না, খালের বন্দরও হবে না” - এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, নৌ ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Header Ad
Header Ad

বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় এনসিপি

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন অনুষ্ঠিত বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গত ১৫ বছরে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এজন্য নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের এবং যারা অনিয়মে যুক্ত ছিল, তাদের তদন্ত করে বিচার করতে হবে।

রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় নিয়ে গেছে এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে, যার দায় নির্বাচন কমিশনেরও রয়েছে।

বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান প্রবর্তন, প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছাই করে সত্যতা নিরূপণ, নির্বাচনে সহিংসতা রোধে আচরণবিধি সংস্কার, ঋণখেলাপিদের প্রার্থিতা বাতিল, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র মনিটরিং করা।

এছাড়া একই নামে একাধিক দলের নিবন্ধন, অফিসবিহীন দলকে বৈধতা দেওয়া এবং এসব বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। এনসিপি মনে করে, এসব বাস্তবায়ন না হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনুভা জাবীন।

Header Ad
Header Ad

এপ্রিলে ১৯ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

ছবি: সংগৃহীত

চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনেই দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীরা ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ডলারপ্রতি ১২২ টাকা ধরে যার পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ৯৬৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে—৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো দিয়ে ৯ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

এর আগেও চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে এক মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে—৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও যথাক্রমে ২১৯ কোটি ও ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা, ডলারের ভালো বিনিময় হার এবং রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রবাসীদের বাড়তি পাঠানোর প্রবণতা—এসব কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এপ্রিল শেষে এই প্রবাহ ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি হতে পারে, যা নতুন একটি রেকর্ড হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

একনেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন
বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় এনসিপি
এপ্রিলে ১৯ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া নিয়ে বিএনপির অভিমত
ফাইয়াজের মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার নেই: আসিফ নজরুল
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক ছাত্রীকে ৭ দিন ধরে আটকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ!
বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল মুসলিম সমাজ, হায়দ্রাবাদে গণবিক্ষোভ
ফকিরাপুলে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ
আল-আকসা ভেঙে মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা ফাঁস, ফিলিস্তিনের সতর্কবার্তা
শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে: চিফ প্রসিকিউটর
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
আইপিএলে অভিষেক ম্যাচেই তিন রেকর্ড গড়লেন ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী
৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতে ইসলামের
আজ স্বামীর প্রশংসা করার দিন
ইসরায়েলি অভিনেত্রী থাকায় নিষিদ্ধ হলো সিনেমা
রাজধানীর ডেমরা ও মিরপুরে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বিএনপি
যশোরের শার্শায় অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইকারী আটক