মুগ্ধতা ছড়াল তুরস্কের শিল্পীদের সুফিধারার সঙ্গীতসন্ধ্যা
সারাদিন ছিল বৃষ্টি। কখনো মুষলধারে, কখনোবা ঝিরিঝরি। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যাটি সংস্কৃতিপ্রেমী জন্য হয়ে ওঠে মনোরম। আধ্যাত্মবাদী আঙ্গিকের গানের সুর এবং সেই সুরের তালে উপস্থাপিত নৃত্য পরিবেশনা অবলোকনে কেটেছে সুসময়। সুফিধারার সঙ্গীতনির্ভর পরিবেশনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ ও তুরস্কের শিল্পীদল। তার মধ্যে তুরস্কের শিল্পীদের পরিবেশনা হৃদয় রাঙিয়েছে, মুগ্ধতা ছড়িয়েছে শ্রোতা-দর্শকের।
শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিন্নধারার এই আয়োজন। ‘সুফি এনকাউন্টার’ শিরোনামে অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকাস্থ তুরস্ক দূতাবাস। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যৌথভাবে অনুুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
তুরস্কের শিল্পীদের পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। যন্ত্রসংগীতের সুরে নৃত্যের মিশেলে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন দলটির শিল্পীরা। ইন্সট্রুমেন্টের তালে আর শাস্ত্রীয় ঘরানায় তুরস্কের সুফি শিল্পীরা তুলে ধরেন মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি, শামস তাবরেজি, হফিজ, সাদী, নিজামি গজনবী এবং ফেরদৌসীর সুফিদর্শন। দেশটির ট্র্যাডিশনাল মিউজিকের সম্মিলনে পরিবেশিত সুফি নাচ মুগ্ধতা ছড়ায় শ্রোতা-দর্শকের। ট্র্যাডিশনাল সুরের সাথে তুরস্কের সুফি শিল্পীদের ঘুর্ণি নাচে সুফিবাদের মাধ্যমে সমসাময়িক বিষয়গুলো তুলে ধরেন সুফিবাদের দেশ হিসেবে পরিচিত তুরস্কের সুফি ড্যান্সাররা। সুফিতত্ত্বের পরতে পরতে মানবতা ও শান্তির কথাই বলেন শিল্পীরা। সেই সাথে বাংলাদেশের বাউলশিল্পীদের ভাববাদি গান ভিন্নমাত্রা এনে দেয় সুফিবাদের এই আসরে।
যন্ত্রসঙ্গীতের সুরে ঘূর্ণায়মান নাচের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ ও মনোবাসনা তুলে ধরেন ভিনদেশীয় এই শিল্পীরা। নাচের বাঁকে বাঁকে ছিল স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ছিল মানবতার জয়গান আর সেই সাথে ছিল সকল হানাহানি আর বিদ্বেষ ভুলে শান্তির পৃথিবী গড়ার উদাত্ত আহবান। ইসলাম, শান্তি ও মানবতা যে একে অপরের পরিপূরক সুফির ঘুর্ণি নাচে সেটিরই নান্দনিক উপস্থাপন করলেন তুরস্কের চার সুফিশিল্পী ইসহাক উরিন, হাসান হেকিমগলু সায়ীদ সারকান সেলিক ও বুরাক মালকুক।
বাংলাদেশের পর্বে লালনের ভাববানী ও দেহতত্বের বাউল গান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির বাউলদল।
এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তোরান। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, সুফিবাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানবতার ধর্ম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও সব কিছুর আগে মানবতা ও শান্তির কথা এবং সাম্যের কথা বলেছেন। সবকিছুর আগে নবীজি মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে প্রাধাণ্য দিয়েছেন। সুফিবাদে ইসলামের সৌন্দর্য্য ও সাম্যের বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।