আনন্দ নগরের নায়ক দোমিনিক ল্যপিয়েরের প্রয়াণ
চলে গেলেন লব্ধপ্রতিষ্ঠ ফরাসি সাহিত্যিক দোমিনিক ল্যপিয়ের। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) এ সাহিত্যিকের প্রয়াণের খবর দিয়েছেন তার স্ত্রী।
ফরাসি পত্রিকা ভার-ম্যাতিনকে তার স্ত্রী জানান, দোমিনিক ল্যপিয়ের রবিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা, অসাধারণ মানবিক ও অনেক সত্য কাহিনির নায়ক দোমিনিক ল্যপিয়ের জন্মেছেন ১৯৩১ সালের ৩০ জুলাই। তার জন্মস্থান সাতরাইউ। একটি সাগরতীরবতী শহর। মোটে ১৩ বছর বয়সে লাপিয়ের তার বাবা আমেরিকায় ফরাসী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেশটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এরপর সেখানে থেকে যান। লেখাপড়ার শুরু করেন একটি ইহুদি বিদ্যালয়ে, নিউ অরলিয়ানসে। তিনি খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। তিনি একজন ফুলব্রাইট স্কলার ছিলেন।
জন্মসূত্রে ফরাসি হলেও ভারতের সঙ্গে প্রতি অমোঘ টান ছিল। কলকাতায় গিয়ে এক রিকশা চালকের জীবন নিয়ে তৈরি করেছিলেন দ্য সিটি অব জয়। এই উপন্যাসের দৌলতে তিনি খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যান। পরবর্তীকালে ওই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল সিনেমাও। ছবি মুক্তি পায় ১৯৯২-তে। অভিনয় করেন প্যাট্রিক সোয়েজ। ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রোন্যাল্ড জোফ।
মার্কিন সাহিত্যিক ল্যারি কলিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে রচিত তার উপন্যাস দ্য ফিফত হর্ষম্যান। ল্যারি কলিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে আরও একটি উপন্যাস পাঠক মনে সাড়া ফেলেছিল – ইজ প্যারিস বার্নিং। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় তার লেখা সিটি অব জয়।
ভারতের প্রতি গভীর মমতা অনুভব করতেন তিনি। ভারতপ্রেমী ল্যপিয়ের তার এই উপন্যাসের সব টাকা দেশটিতে মানবতাবাদী কাজে ব্যয় করার জন্য দিয়ে দিয়েছেন। এজন্য গড়েছিলেন দি সিটি অব জয় ফাউন্ডেশন। এই ছবির লাভের টাকাও তাকে এজন্য দেওয়া হয়েছে। পাঠক-পাঠিকাদের অনুদানও গ্রহণ করেছেন ল্যপিয়ের। ফলে ২০০৫ সালে লেখক বলেছেন, ‘আপনাদের সবার অংশগ্রহণে ২৪ বছরে ১০ লাখ মানুষ এই বই ও সিনেমার টাকায় যক্ষ্মা রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন। ৯ হাজার শিশু-কিশোরকেও কুষ্ঠরোগ থেকে বাঁচানো গেছে।’
ল্যারি কলিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে আরও কয়েকটি উপন্যাস লিখেছিলেন দোমিনিক ল্যপিয়ের। উপন্যাসগুলি হল ওর আই উইল ড্রেস ইউ ইন মোর্নিং (১৯৬৮), ও জেরুজালেম (১৯৭২), ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট (১৯৭৫), ইজ নিউ ইয়র্ক বার্নিং। ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে।
তার প্রয়াণে সাহিত্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়েছে শ্রদ্ধা আর স্মরণে।
ওএফএস/আরএ/