আদৌ কি এবার হবে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা
দীর্ঘকাল ধরেই এপার-ওপার দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন। এ বাংলা তো বটেই, বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বহু ছাত্র-ছাত্রী আসেন বিশ্বভারতী এবং রবীন্দ্রভারতীতে জ্ঞান ও মেধা চর্চা করতে। প্রতি বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়ে উঠে দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র। সমাবর্তনই শুধু নয়, পৌষমেলাও।
বছরের শেষে পৌষমেলার আস্বাদ নিতে ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও কলকাতা ও ঢাকা থেকে বহু মানুষ জড়ো হন পৌষমেলার প্রাঙ্গণে। গত কয়েক বছর করোনার দাপটে সেভাবে পৌষমেলা হতে পারেনি। করোনা ছাড়াও ছিল পৌষমেলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল এবং বিশ্বভারতীর বর্তমান প্রশাসক অর্থাৎ দিল্লির সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মধ্যে ক্ষমতার দড়ি টানাটানি। ফলে গত কয়েক বছর ধরেই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শান্তিনিকেতন চত্বর। আর তার ফল ভুগছিলেন ভারত, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা পড়ুয়া, অভিভাবক ও পৌষমেলার দর্শনার্থীরা। এবারে আশা করা গিয়েছিল, দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে পৌষমেলা হয়তো এবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে সে সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে বলেই মনে হচ্ছে। প্রতি বছর ৭-১০ পৌষ এই চার দিন শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে অনুষ্ঠিত হয় শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে করার দাবিতে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের দপ্তরের সামনে বলাকা গেটে বিক্ষোভ করেছে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা বাঁচাও কমিটি। প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানার নিয়ে বিশ্বভারতীর বলাকা গেটে করেন তারা। বিশ্বভারতী পৌষমেলা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের নামার হুমকিও দিয়েছেন তারা। এই মর্মে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা পড়েছে।
শেষবার ২০১৯ সালে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল পূর্বপল্লির মাঠে। সেই বছর নির্ধারিত সময় মেলার স্টল তোলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদ হয়। বিষয়টি হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছিল। জল গড়ায় আদালত পর্যন্তও। পাশাপাশি দূষণ নিয়ে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল বিশ্বভারতীকে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে পৌষমেলা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না বিশ্বভারতী।
গত বছর পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা না হলেও বাংলা সংস্কৃত মঞ্চ এবং বোলপুর ব্যবসায়ী সংগঠনের উদ্যোগে বীরভূম জেলা পরিষদের ডাকবাংলো মাঠে ছোট করে পৌষমেলা অনু্ষ্ঠিত হয়। রাজ্য সরকারের তরফেও সহযোগিতা করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন পৌষমেলা পূর্বপল্লির মাঠে হওয়া নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ইতোমধ্যে পৌষমেলা করা নিয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতীকে। ট্রাস্টের দাবি, এখনো পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে। পৌষমেলা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। এই জলের চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ভূবনডাঙার পৌষমেলার লাগোয়া বাঁধগুলিকে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সংস্কারের অভাবে সেই বাঁধগুলো কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। পৌষমেলা করার জন্য ওই জলাশয়গুলোর সংস্কারের কথাও বলেছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট।
বোলপুর পৌরসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বভারতীকে মেলা করার জন্য অনুরোধ করা হবে। পূর্বপল্লির মাঠেই যাতে পৌষমেলা করা হয়, সেই অনুরোধও করা হবে। কিন্তু পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতীর তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক বক্তব্য মেলেনি, আর সে কারণেই তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা।
এসএন