নাগরিক কোলাহলে নবান্ন উৎসব
খানিকটা ঘোলাটে হেমন্তের সকাল। মাঠজুড়ে ছড়ানো সোনা রঙের ধান। শিশিরে ভেজানো পাকা ধান শুকাতে শুরু করে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। সুবাস ছড়িয়ে জানান দেয় নবান্ন দুয়ারে দাঁড়িয়ে। ধুসর গোধূলি উৎসবের স্বপ্ন দেখাতে শুরু কৃষাণ-কৃষাণীদের। ঘরে ঘরে উঠে নতুন ধান, ঘরময় মৌ মৌ করে চাল ও আটার সুগন্ধ।
চোখ বন্ধ করলেই পেছনে ফেলে আসা এমন দৃশ্য আজো ভিড় করে মস্তিষ্কে। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষ যত ব্যস্তই থাকুক না কেন শিকড়ে ফিরতে সুযোগ খোঁজে এখনো। স্মৃতির সাগরে সাঁতার কাটতে ও পরবর্তী প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করাতে ভুলেন না নাগরিক মানুষ।
আজ বুধবার (১৬ নভ্ম্বের) অগ্রহায়ণের প্রথম দিন। রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। গ্রামাঞ্চলে নতুন ফসল ঘরে তোলে, বাঙালিয়ানা খাবারে মেতে থাকে গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা। ইট-পাথরের দালান কোঠার এ শহরেও আয়োজন করা হয়েছে নবান্ন উৎসবের। “এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে” স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো ২৪তম জাতীয় নবান্ন উৎসব-১৪২৯।
সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় এ উৎসব। সকাল-বিকেল দুই পর্বে বিভক্ত ‘নবান্ন উৎসব’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, নবান্নের এ উৎসব যুগের পর যুগ ধরে গ্রাম-গঞ্জে চলছে। নবান্নের উৎসব, এ পিঠাপুলির উৎসব হয়ে আসছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে ঘটা করে উদযাপন করা হচ্ছে নবান্ন উৎসব।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শহীদুল রশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
পরবর্তীতে চলতে থাকে নেচে-গেয়ে, আবৃতি করে গ্রামীণ ফসলকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা তুলে ধরার নানা আয়োজন। এ ছাড়াও উৎসবে আগতদের জন্য ছিল খই, মুড়ি, পিঠাপুলির ব্যবস্থা। বিকেল ৫টায় শুরু হয় নবান্ন উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব যা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ২৪টি সাংস্কৃতিক সংগঠন সারাদিন এই উৎসবে পরিবেশনায় অংশ নেয়।
এসএন