রাবেয়া খাতুনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা
কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদের চ্যানেল আই ভবনে এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণ করেছেন একুশে ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাবেয়া খাতুন তার লেখনির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। ৫০-এর দশকের সময় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যেভাবে তিনি স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, নারী জাগরণের কথা বলেছিলেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সেলিনা হোসেন আরও বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলা সাহিত্যের যে স্রোত তৈরি হয়েছিল, তার অন্যতম ধারক ছিলেন আমাদের রাবেয়া আপা। আমরা এখন পর্যন্ত সে স্রোতেই এগিয়ে যাচ্ছি। এটি একটি অসাধারণ দিক যে, আমরা সব সময় বলি ৪৭- এর পরে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, আবু জাফর শামসুদ্দীন, রাবেয়া খাতুন, রিজিয়া রহমানেরা সকলে মিলে সাহিত্যের যে ধারাটি তৈরি করেছিলেন, আমরা সকলে মিলে সেখানে নিমজ্জিত হয়েছি। আমাদের নবীন লেখকরাও সেই ধারাটিতে বহমান।’
সেলিনা হোসেন তার লেখায় রাবেয়া খাতুনের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার মধুমতি উপন্যাসটি পডয়েছি। উপন্যাসটি পড়ে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তাঁতী সম্প্রদায়কে নিয়ে কীভাবে একটি উপন্যাস তৈরি করা যায়, এটি ছিল সেই উপন্যাসের বিশাল দিক। তার লেখনিতে গণমানুষের জীবনধারাকে সাহিত্যে নিয়ে আসার যে বিষয় ছিল সেটি আমাকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
রাবেয়া খাতুনের ‘মধুমতি’ উপন্যাসে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীকালে জেলে পাড়া ঘুরে এসে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাসটি রচনা করেন বলে জানান সেলিনা হোসেন।
স্মরণসভায় আহসান উল্লাহ তমাল রাবেয়া খাতুন রচিত ‘ভুলনা মোরে চলে যদি যাই, পৃথিবীর পরপারে’ শিরোনামে কবিতা আবৃত্তি করেন। ১৯৫০ সালের ২৯ মার্চ রাবেয়া খাতৃুন এটি রচনা করেন।
আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট কবি মাকিদ হায়দার, কবি নাসির আহমেদ, রাবেয়া খাতুনের জামাতা প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু, শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম।
আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আমিনুর রহমান সুলতান, গীতালি হাসান, মোজাফ্ফর আহমেদ, আনজীর লিটন, স্বকৃত নোমান, মনি হায়দার, মিলা মাহফুজ, মারুফ রায়হান, রেজা উদ্দিন স্ট্যালিন, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২৭ ডিসেম্বর ছিল রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন। সেদিন চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদ’।
/এএন