‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি চর্চা না হয়, তাহলে সাহিত্যের উন্নতি ঘটবে না’
লেখা ও ছবি : গাজী মুনছুর আজিজ।
সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে ‘শিল্প-সাহিত্যের বৈঠক’ আয়োজন করে ‘বাংলায়ন সভা’।
এই ধারাবাহিকতায় হয়েছে সাহিত্য সভাটির তৃতীয় বৈঠক।
২৩ জুলাই, বিকেলে, অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার সেমিনার কক্ষে।
এবারের বিষয় ‘আধুনিকতার মহিমা : বাহ্লটার বেনিয়ামিন ও কাজী নজরুল ইসলাম।’
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন চিন্তক, গবেষক-লেখক ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)’র অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
চিন্তক-অধ্যাপক, গবেষক ড. সলিমুল্লাহ খান তার বক্তৃতায় বলেছেন, “বাহ্লটার বেনিয়ামিন তার সময়েই আধুনিক ছিলেন ও তার সাহিত্যে আমরা তা দেখতে পাই। একইভাবে বিদ্রোহী এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সাহিত্যে আধুনিকতা এনেছেন। যদিও অনেকে বলেন, নজরুল আধুনিক নন, তার সাহিত্যে আধুনিকতা দেখা যায় না। এ আসলে ভুল ধারণা। বরং নজরুলের সাহিত্যে ব্যাপকভাবে আধুনিকতা লক্ষ্য করা যায়। তাঁর ‘আমার কৈফিয়ৎ’সহ আরও অনেক লেখায় আধুনিকতার দৃষ্টান্ত স্পষ্ট। কবি কাজী নজরুল ইসলাম-ইসলামী সংগীত, শ্যামা সংগীত লিখেছেন বলে অনেকে বলেন, তিনি আধুনিকতা থেকে সরে গেছেন। এমন ভাবনাও ঠিক নয়। বরং ইসলামী, শ্যামা সংগীতের মাঝেও তিনি আধুনিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আবার অনেক পন্ডিত নজরুলের ‘গান’কে সাহিত্য হিসেবে মনে না করে নিছক গান মনে করেন। আমি মনে করি, সেটাও এক ধরনের ভুল ধারণা। বরং নজরুল বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে আধুনিকতা প্রতিস্থাপন করেছেন।”
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান আরও বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলা সাহিত্য মোটেও এগোয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে তার। বিভিন্ন কোম্পানি, বিভিন্ন নামে সাহিত্যিকদের পুরস্কার দিয়ে গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে সাহিত্য চর্চার পথ যেভাবে চলার কথা, সেভাবে চলেনি।”
ড. খান বলেন, ‘বাংলা সাহিত্য চর্চার বড় জায়গা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা সাহিত্য এখন তেমন পড়ানো হয় না। ফলে আজ আর সাহিত্য চর্চাও হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি সাহিত্য চর্চা না হয়, তাহলে সাহিত্যের মূলত উন্নতি ঘটবে না। এছাড়াও, শিল্প-সাহিত্যের নামে কেবল বড়, বড় ভবন করলেই হবে না, শিল্পচর্চার দিগন্তগুলো প্রসারিত করতে হবে।’
‘আধুনিকতার মহিমা : বাহ্লটার বেনিয়ামিন ও কাজী নজরুল ইসলাম’ বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা শেষে ড. সলিমুল্লাহ খান উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সঞ্চালনা করেছেন বাংলায়ন সভার সদস্য কবি গিরিশ গৈরিক।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন বাংলায়ন সভার সম্পাদক ফারুক সুমন।
সমাপনী বক্তব্য রেখেছেন তাদের মুখপাত্র কথাশিল্পী শামস সাঈদ।
বৈঠকে শতাধিক দর্শক শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের অন্যতম-কবি আমিনুল ইসলাম, গবেষক ফয়সাল আহমেদ, কবি সৌম্য সালেক, জব্বার আল নাঈম, চামেলী বসু, উপমা তালুকদার, খালেদ চৌধুরী, সুমন মাহমুদ, জোবায়ের মিলন, আবু সাঈদ তুলু, মনির উইসুফ, সাইফ বরকতুল্লাহ, আজিম হিয়া, হাসনাত কাদির প্রমুখ।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনা ধারণ করে ২১ জন কবি-লেখকের সংগঠন বাংলায়ন সভা, ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করেছে।
‘বাংলা বিশ্বময়’ শ্লোগানটিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রপ্রসারণে কাজ করছে সংগঠন।
মুখপাত্র শামস সাঈদ।
‘বাংলায়ন সভা’র সমন্বয়ক গাজী মুনছুর আজিজ।
ওএস।