অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪তম জন্মদিন আজ
দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪তম জন্মদিন আজ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজ করে চলেছেন তিনি। চার দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটি আলোকিত মানুষ তৈরির আন্দোলন করে যাচ্ছে। ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে পাঠচক্র শুরু করে, যার সদস্য এখন ২৫ লাখ।
দেশের তরুণ ও আলোকপ্রত্যাশী মানুষের মধ্যে বইয়ের আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের এই দিনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন শিক্ষক। ১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ১৯৬০ সালে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পরবর্তী সময়ে সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও ঢাকা কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সমাজসংস্কারক। অধ্যাপনা করেছেন ত্রিশ বছর (১৯৬২-১৯৯২) । তিনি মূলত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয় তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন সুবক্তাও। সত্তরের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
মাদকের করালগ্রাস আর সার্টিফিকেট সর্বস্ব বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষা ও সামাজিক বাস্তবতায় 'আলোকিত মানুষ চাই' স্লোগানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যেন একসূত্রে গাঁথা এক আলোকবর্তিকার নাম। ২০০০ সাল থেকে সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য অভিনন্দিত হন দেশব্যাপী। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলন, বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, প্রাণ পেয়েছে তার নেতৃতে।
বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুঁলিতে। লিখেছেন কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে ৫৭টি গ্রন্থ।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ অর্জন করেছেন নানা পুরস্কার। তার পাওয়া উল্লেখ্যযোগ্য পুরস্কার হলো— জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রোটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), এম এ হক ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক (২০০১), রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), ডা. ইব্রাহীম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০০৬), শেল্টেক্ পদক (২০০৬), পরিবেশ পদক (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ২০০৯), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৯), চ্যানেল আই আনন্দ আলো পুরস্কার (২০১০), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পুরস্কার (২০১১), কাজী আজাহার আলী স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১১), বাংলা একাডেমী পদক (২০১১)।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আব সায়ীদ কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে ৫৭টি গ্রন্থ লিখেছেন।
তিনি ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টেলিভিশনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উচ্চ প্রশংসিত বেশ কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন।
আরএ/