চতুর্থ জাতীয় আন্তঃকলেজ পরিবেশ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
কান পেতে শুনি, প্রকৃতির ধ্বনি-প্রতিপাদ্যে আয়োজিত হয়ে হয়েছে “৪র্থ জাতীয় আন্তঃকলেজ পরিবেশ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২২”। জাতীয় বিতর্ক সংগঠন ডিবেট ফর হিউম্যানিটি (ডিএফএইচ) এর উদ্যোগে ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর সার্বিক সহযোগিতায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে গত ২২ ও ২৩ জুলাই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানার আপ হয় নটরডেম কলেজ। তাদের বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল, এই সংসদ জলবায়ু তহবিল গঠনকে অনৈতিক মনে করে।
প্রতিযোগিতায় সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হোন নটরডেম কলেজের আবিদ মাহমুদ।
সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ডিবেট ফর হিউম্যানিটি (ডিএফএইচ) এর উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের জীবন হলো ‘চয়েজ অফ লাইফ’। আপনি কিভাবে চলবেন সেইটা আপনিই নির্ধারণ করবেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মধ্যে আছে যারা তোমার বিষাইছে বায়ু…। কবিতাটিতেও কবি দূষণকারীদের ক্ষমা করতে বলেছেন। তবে আমরা আমাদের শাসকদের বলবো তারা যেন পরিবেশের দিকে নজর দেয়। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভুটানও আমাদের চেয়ে বেশি পরিবেশ সচেতন। তাদের মহাসড়কগুলো অনেক পরিচ্ছন্ন। অথচ আমাদের মহাসড়কগুলো ততটাই নোংরা। আসুন সচেতন হই, নিজেকে বাঁচাই।
ডিএফএইচ-এর চেয়ারপার্সন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান-এর সভাপতিত্বে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও ডিএফএইচ এর উপদেষ্টা শীপা হাফিজা, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শায়লা নাসরিন এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহার।
শীপা হাফিজা বলেন, আমাদের তরুণরা তথ্য নির্ভর ও যুক্তিযুক্ত কথা বলে। তাদের মাঝে আমরা দেখতে পাই আগামীর নির্ভরশীল নেতৃত্ব। হয়তো এদের মধ্য থেকেই আমরা ভবিষ্যতের জাতির নেতৃত্ব খুঁজে পাব।
ড. শায়লা নাসরিন বলেন, আমরা বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য আগামী প্রজন্ম তৈরির চেষ্টা করছি। মানুষের জন্য উন্নয়ন। উন্নয়নের জন্য মানুষ নয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের গড় আয়ু ৫.৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের মা-বাবাকে আমরা অকালেই হারাচ্ছি। আমরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নমানের শহরে বাস করছি। একজন মা হিসেবে আমি চাই আমার সন্তানের সন্তান যেন একটু নিরাপদ পৃথিবীতে বাস করতে পারে। পরিবেশ নিয়ে কথা বললে মোটামুটি সবার বিরুদ্ধেই আমাদের দাঁড়াতে হয়। বিদ্যুৎ নিয়ে নানা সমস্যা চলছে। কিন্তু আমাদের ছাদগুলোকে সোলার প্যানেল ব্যবহার করলে আমরা ৪০% চাহিদা মেটাতে পারবো। তাই সবাইকেই পরিবেশ নিয়ে সচেতন হতে হবে।
এম এম আকাশ বলেন, প্লাস্টিক ভয়াবহ জিনিস। এটি খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের রক্তে ঢুকে যাচ্ছে। আমাদের নিজ জীবনের জন্যই পরিবেশ সচেতন হওয়া দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরকেও আমরা প্লাস্টিক মুক্ত রাখতে পারছি না। বুড়িগঙ্গা নদী তো আগেই গেছে। আমরা এখন প্লাস্টিকের বিকল্প পেয়েছি পাটের মধ্যে। ফলে ধীরে ধীরে আমরা এখন আমাদের জীবনকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
অধ্যাপক সাবিকুন নাহার বলেন, আমি কথা দিচ্ছি আগামীকাল থেকেই আমার কলেজকে প্লাস্টিক মুক্ত করার ব্যবস্থা নিব। আর প্লাস্টিক ব্যবহার হতে দিব না। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও আমরা পরিবেশ সচেতন করে গড়ে তুলবো এবং আগামীর সুন্দর পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে তারা হবে অগ্রগামী।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, দুইটি ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীকে আলো দেখাতে পারতাম। একটি হলো সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। আরেকটি হলো পাঁচটি নদী বেষ্টিত রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের কোথাও এমন শহর নেই। অথচ আমরা এই পাঁচটি নদী ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি। এর বাইরেও সারাদেশে আমরা আমাদের নদী ও বনজ এলাকাগুলো ধ্বংস করছি। তারপরেও আমরা আশাবাদী, আগুনের দিন শেষ হবে একদিন।