হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই)। ২০১২ সালের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত জনপ্রিয় এ কথাশিল্পী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। পরে তাকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে দাফন করা হয়।
নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও নুহাশপল্লীতে খতমে কুরআন, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বিভিন্ন স্তরের মানুষ তার কবরে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
অন্যদিকে, লেখকের জন্মভিটা মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখ বাড়ি নানার বাড়িতে মিলাদ ও কোরআনখানি তেলাওয়াত এবং পৈতৃক ভিটা কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে মিলাদ, কোরআনখানি তেলাওয়াত এবং শোক র্যালি হবে।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে মারণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর ২৩ জুলাই তার মরদেহ দেশে আনা হয়। ২৪ জুন তাকে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। উপন্যাসে তার প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাসাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাস ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে উঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তায় তিনি ছিলেন একক ও অনন্য।
জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। স্কুলজীবনে হুমায়ূন আহমেদকে বাবার চাকরিস্থল কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয়েছে। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর পাস করে প্রথমে প্রভাষক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি অর্জন করেন।
তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
১৯৭৩ সালে হুমায়ূন আহমেদ প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর নাতনী গুলতেকিনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমপক্ষে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ১৯৯০ সালে তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয়পক্ষে দুই ছেলে রয়েছে। শাওনের সঙ্গে স্বামীর এ অসম বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি গুলতেকিন। দাম্পত্য কলহের কারণে শেষপর্যন্ত ২০০৫ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
হুমায়ূন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ। তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, আজ হিমুর বিয়ে, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, আমিই মিছির আলী, দিঘির জলে কার ছায়া গো, কিছু শৈশব, হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, আগুনের পরশমণি, পাপ ৭১, শ্রাবণ মেঘের দিন।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে— শংখনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও শ্যামল ছায়া।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
আরএ/