নাগরিক স্মরণসভা
'হাসান আরিফ থাকলে হয়তো চিৎকার করে প্রতিবাদ করতেন'
'আমি আজ বাংলাদেশের রাস্তায় কোন বাঙ্গালী রমনীকে দেখি না। সব যেন বিদেশী, আফগানিস্তানী। আমাদের নারী নেত্রীরাও এই নিয়ে কথা বলছেন না। হাসান আরিফ থাকলে হয়তো চিৎকার করে প্রতিবাদ করতেন।' আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফের নাগরিক স্মরণসভায় কথাগুলো বলছিলেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন। শনিবার (২১ মে) বিকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। জোটের সভাপতি লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী আহকামউল্লাহ্।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের প্রতিনিধি ম. হামিদ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আক্তারুজ্জামান, মিনু হক, সাংবাদিক মুন্নী সাহা, মিলন কান্তি দে, রাবেয়া রওশন তুলি প্রমূখ।
প্রয়াত হাসান আরিফের স্মরণে অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় উপস্থিত নাগরিকেরা। তারপর ‘তোমারো পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শক্তি’ পরিবেশন করে জোটের সঙ্গীতশিল্পীরা। এরপর হাসান আরিফেরই নির্দেশিত আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ পরিবেশন করেন জোটের আবৃত্তিশিল্পীরা। সভায় হাসান আরিফের অকাল প্রয়াণে শোকগাঁথা পাঠ করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়।
সভায় এই গুণী শিল্পী স্মরণে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হাসান আরিফের সঙ্গে আমার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজপথে পরিচয়। হাসান আরিফ চলে যাওয়াতে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কারণ আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। সংস্কৃতিকর্মীদের জাগরণ থেকে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে তার অবদান থেকে বঞ্চিত হবো।
বক্তব্যে জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, হাসান আরিফকে কেবল একটা স্মরণসভার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না। তার মেধা প্রসূত সৃজনশীল কাজকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। হাসান আরিফের আগামী জন্মদিনে তার একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করব আমরা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, হাসান আরিফ আজীবন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন যদি আমরা তার মতো জীবন চর্চা করি।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হাসান আরিফ সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি নাম। তার কবিতা ও জীবনভাবনায় দার্শনিক মনোভাব আছে। তাই আরিফকে হারানো আমাদের সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমরা আজকে সবাই আরিফকে বুকে রেখে এক হয়ে সমষ্টি হওয়ার যে গুণ তার ছিল, তার অনুসরণ করব।
প্রসঙ্গত গত ১ এপ্রিল জোটের সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের অগ্রগণ্য আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ করোনা পরবর্তী জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়তার জন্য মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন শিল্প-সংস্কৃতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষ।
এমএ/এএজেড