থেমে গেল সন্তুরের মূর্ছনা, চলে গেলেন কিংবদন্তি শিবকুমার শর্মা
থেমে গেল সন্তুরের মূর্ছনা। প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। মঙ্গলবার (১০ মে) মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন শিবকুমার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি জম্মুর একটি সম্ভ্রান্ত সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্ম শিবকুমারের। তার বাবা উমা দত্তশর্মা ছিলেন প্রথিতযশা সঙ্গীত শিল্পী। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই শিবকুমার তাঁর বাবার কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। উমা সন্তুর নিয়ে অনেক গবেষণা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, পুত্রকে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সন্তুরবাদক হিসেবে গড়ে তুলবেন। এই চিন্তা থেকে শিবকুমারকে ১৩ বছর বয়স থেকে সন্তুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। পরে জম্মু ছেড়ে মুম্বাই চলে আসেন তিনি। ১৯৫৫ সালে সেখানেই জনসমক্ষে প্রথম সন্তুর বাজিয়েছিলেন।
সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমিসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার পেয়েছেন শিবকুমার। ২০০১ সালে পান পদ্মবিভূষণ সম্মাননা। এ ছাড়াও আমেরিকার সম্মাননীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তাকে।
বলিউডেও নিজের ছাপ রাখেন শিবকুমার। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির জন্য তৈরি করেন কালজয়ী সব সুর। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিলসিলা’ থেকে শুরু হয় সেই যাত্রা। এর পর ‘ফাসলে’, ‘চাঁদনী’, ‘লমহে’, ‘ডর’-এর মতো বহু ছবিতে কাজ করেন শিবকুমার। ১৯৫৬ সালে শান্তারামের ‘ঝনক ঝনক পায়েল বাজে রে’-র একটি দৃশ্যে নেপথ্য সংগীত তৈরি করেছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
শিল্পীর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন উস্তাদ আমজাদ আলি খান। তিনি লেখেন, ‘পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার প্রয়াণ একটি যুগাবসান। তিনি সন্তুর যন্ত্রটির অগ্রণী শিল্পী। আমার কাছে অবশ্য এটা ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্ত। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। তার সঙ্গীত বাজতে থাকুক আমাদের হৃদয়ে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–শোকপ্রকাশ করেছেন অনেকেই। মোদি লিখেছেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎ রিক্ত হলো পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার প্রয়াণে। ‘সন্তুর’ যন্ত্রটিকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।”
মমতার টুইট, ‘পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার প্রয়াণে গভীর ভাবে শোকপ্রকাশ করছি। তিনি শুধু যে বিখ্যাত সন্তুরবাদক ছিলেন তা-ই নয়, বহু ভারতীয় চলচ্চিত্রে সুরও করেছেন তিনি।’
প্রয়াত এ শিল্পী রেখে গেছেন স্ত্রী মনোরমা এবং পুত্র রাহুল শর্মাকে। রাহুল বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। সন্তুরবাদক হিসেবে তিনিও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
এসএ/