হাসান আরিফ চলে গেলেন অনন্তের পথে
প্রায় চার মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে গেলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক, খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। আজ শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
ঢাকাপ্রকাশকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের ভর্তি হয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরবর্তীতে নিউমোনিয়া, সেপ্টিসেমিয়া এবং মাল্টি-অরগান ফেইলরসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
খ্যাতিমান এই আবৃত্তিশিল্পীর মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রমুখ।
হাসান আরিফ দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আবৃত্তিশিল্পকে জনপ্রিয় এবং দেশের সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। শিল্প-সাধনা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনেও তিনি সামনে থেকে ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শহিদ জননীর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
সংগঠনভিত্তিক আবৃত্তি চর্চার শুরুর দিকে ১৯৮৩ সালে স্বরিত আবৃত্তিচক্র নামক সংগঠনের মা্ধ্যমে আবৃত্তিচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন হাসার আরিফ। সর্বশেষ তিনি আবৃত্তি সংগঠন শ্রুতিঘর-এর সভাপতি ছিলেন। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির এক সময় নির্বাহী সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন সংগঠনের আবৃত্তি প্রযোজনায় নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
হাসান আরিফের আবৃত্তি শুনতে ক্লিক করুন : হাসান আরিফ
আবৃত্তিশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে গত বছর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
হাসান আরিফ জন্ম ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লার সাহেববাড়িতে। তার মায়ের নাম রওশন আরা। বাবা প্রয়াত আবুল ফজল মো. মফিজুল হক। হাসান আরিফ ও আবৃত্তি শিল্পী লায়লা আফরোজ দম্পতি ছিলেন নি:সন্তান। মৃত্যকালে স্ত্রী, এক ভাই, এক বোন, অসংখ্যগুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক।হাসান আরিফের বিদেহী আত্মার শান্তিকামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, হাসান আরিফের চলে যাওয়া বাংলা আবৃত্তি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক বিকাশে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এক শোকবার্তায় বলেন, হাসান আরিফের মৃত্যুতে দেশ আবৃত্তি জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফের দেহদান করা হবে হাসপাতালে। সারা জীবন সংস্কৃতির সাধনায় নিবেদিত গুণী এই মানুষটি জীবিত থাকতেই তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন পরিবারের কাছে। তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হবে।
এদিকে, শনিবার সকাল ৯ টায় ধানমন্ডির বাসার পাশের মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বেলা ১১টায় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে মরদেহ। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে এবং বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জানাজা হবে।
শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মরদেহ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হবে।
হাসান আরিফের মৃত্যুতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রভৃতি সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহকামউল্লাহ শোক বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধাব্যক্তিত্ব, আজন্ম সংগ্রামী, আবৃত্তি শিল্পের প্রাণপুরুষ এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের অভিভাবক, স্বজন ও প্রিয়জন হাসান আরিফ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ প্রগতিশীল মানুষের কাছে তাঁর অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
এপি/কেএফ/