বইমেলা: যা পর্যবেক্ষণ করলেন সংশ্লিষ্টরা
দেখতে দেখতে শেষ দিনে এসে পৌঁছালো অমর একুশে বইমেলা। আজ ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার পর্দা নামছে প্রাণের বইমেলার।
মেলার শেষ দিনে এসে ঢাকাপ্রকাশের কাছে নিজেদের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন মেলা কর্তৃপক্ষ, লেখক, কবি ও প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির পরিচালক (বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগ) ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মেলা হবে কি না, হলেও কত দিনের হবে? এমন নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে মেলা শুরু হয়ে আজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। তাই বলতে পারি, মেলা সফল হয়েছে। অনেকের ভাবনা ছিল, মার্চ মাসে মেলা হলে কেমন হবে? কিন্তু এখন প্রমাণিত হয়েছে যে, মার্চ মাসেও মেলা হতে পারে।
অন্যান্য বছর ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী ২৮ বা ২৯ দিন বইমেলা হয়, কিন্তু এবার ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৩১ দিন মেলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জালাল আহমেদ বলেন, অতীতে এর চেয়ে বেশি সময়ব্যাপীও মেলা হয়েছে। কিন্তু এবার বেচা-কেনা ভালো হওয়া ও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এত ব্যাপক উপস্থিতির কারণ তিনটি বিষয়। সেগুলো হচ্ছে- এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ছিল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী ঘিরে। এ সংক্রান্ত প্রচুর বইও এবার প্রকাশ হয়েছে এবং বিক্রি হয়েছে। এদিক থেকেও মেলা সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ছাড়া আরেকটি বিষয়ও আছে। সেটি হচ্ছে করোনকালে মানুষ দীর্ঘদিন সেভাবে বাহিরে বের হতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে মেলা হওয়ার কারণেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশি হয়েছে, বই বিক্রিও ভালো হয়েছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব নেসার উদ্দীন আয়ুব বলেন, এবারের বইমেলায় প্রত্যাশার চেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে। পুরো মেলায় কত বিক্রি হয়েছে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা একাডেমি জানাবে।
জানতে চাইলে বেহুলা বাংলা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক সাজেদ আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় বিক্রি মোটামুটি ভালো হয়েছে। গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে ভালো হলেও মার্চ মাসে ততটা ভালো হয়নি।
মেলায় মোট কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যাটা ভালো না।
লেখক ও অভিনেতা মাসুম মাহমুদ বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতেও এত ভালো মেলা হবে ভাবিনি। দলবেঁধে মানুষ এসেছে, বই দেখেছে, বই কিনেছে, ছবি তুলেছে, আনন্দ করেছে। দেখে মন ভরে যেত।'
বইমেলার শিশু চত্বরে প্রতিদিন উপস্থিত থাকা এই লেখক বলেন, 'মেলায় শুধু কি বড়রা! ছোটরাও হাসতে হাসতে নাচতে নাচতে এসে মেলাপ্রাঙ্গণ রঙিন করে তুলেছে। এই অতিমারিতে এও কম কী!'
তিনি বলেন, 'তবে হ্যাঁ, মার্চ মাসে এসে ছুটির দিনগুলো ছাড়া অন্যান্যা দিনগুলোতে খুব একটা লোকজন হয়নি মেলায়। বোধ করি এটা প্রচারের অভাব। এই দিকটায় মেলা কর্তৃপক্ষ আরেকটু কাজ করতে পারতেন বোধ হয়। সবমিলিয়ে পাক্কা দুই বছর বাদে ফের বইমেলার একটা নিখাদ আনন্দ পাওয়া গেল।'
কবি জেবুন্নেছা মুনিয়া বললেন, 'এবারের মেলা অনেক ভালো হয়েছে। অনেক বেশি জমজমাট হয়েছে। করোনা কমে যাওয়ার কারণে এতো ভালো হয়েছে মনে হয়। এবার প্রচুর নতুন বই এসেছে। বিক্রিও ভালো হয়েছে।'
তরুণ লেখক মহিউদ্দিন মাসুদ মেলা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, 'যারা বই পড়েন না তারা সবচেয়ে বেশি বই সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে এই সংগ্রহকৃত বই খুলেও দেখবে না বরং বুক সেলফের শোভাবর্ধণ হবে।
যেমন কবিতার বই খুব কম মানুষই সংগ্রহ করে। গল্প উপন্যাস সংগ্রহে পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বরাবরের মতোই। আমার পরিচিত যারা কবিতার বই উপন্যাস সংগ্রহ করেছেন তারা বেশিরভাগই বন্ধু লেখকদের খুশি করানোর জন্যে বা সেলফি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করার জন্য সংগ্রহ করেছেন। আমার কাছে মনে হয়, যারা বই সংগ্রহ করেছেন তারা সত্যিকারের পাঠক এবং যারা বই ক্রয় করেছেন তারা ক্রেতা।'
এমএ/টিটি