রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

লালন কী জাত সংসারে

মহামারি করোনার কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় টানা দুই বছর কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় লালন ফকিরের আখড়াবাড়িতে চারটি উৎসব বন্ধ ছিল। এবার করোনার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আসায় লালনভক্ত সাধু-গুরু-আশেকানসহ দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের দাবি ছিল উৎসব আয়োজনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব।

লালন ফকির বেঁচে থাকতে তিনি তার ভাব-শিষ্য অনুসারী সাধু, গুরু, ভক্ত অনুরাগীদের নিয়ে দোলপূর্ণিমার তিথিতে সাধু সঙ্গ করতেন। তার মৃত্যুর পর থেকে ভক্তরা এ দিনের তিথিতে ফকিরকে স্মরণ করতে প্রাণের স্মরণোৎসবের আয়োজন করে আসছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, লালন ফকিরের নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। অনেকে লালনগীতির সুনাম কুড়িয়েছেন। আবার উৎসবকেন্দ্রিক ছেঁউরিয়ায় ব্যাপক মানুষের পদচারণা। অথচ তাঁর দর্শন সম্পর্কে জানা-বোঝা বা এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-গবেষণা হয়েছে খুব সামান্যই। অথচ লালনের কথা বা গান নিছক গান শুধু নয়। এতে অন্তর্নিহিত তাঁর দর্শন। তাই এখানে লালনের দর্শনই প্রধান, গান তার প্রকাশভঙ্গি মাত্র।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্বল্প পরিসরের একটি লেখায় লালনের জীবন-দর্শন তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে লালন নিয়ে পড়ার আগে তাঁর দর্শন সম্পর্কে একটি প্রাক-ধারণা হয়তো এখান থেকে পাঠক পেতে পারেন।

কে ছিলেন লালন

বাংলায় যে কয়জন দার্শনিকের জন্ম, তাদের মধ্যে অন্যতম লালন ফকির। লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ ও বিস্তারিত কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা নিয়েও রয়েছে হাজারও বিতর্ক। সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তাঁর নিজের রচিত গান। তবে লালনের কোনো গানে তাঁর জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি। কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে ‘লালন ফকির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। লালনের জন্ম কোথায়, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায়, লালন ১৭৭৪ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সঙ্গেও অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। জীবনের কিছু ঘটনাবলিই হয়তো তাঁর ‘ফকির’ হয়ে উঠার রসদ যুগিয়েছে।

আধ্যাত্মিক সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাৎ লালনের জীবনে নিয়ে আসে নতুন মোড়। সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে এসে লালন দিনে দিনে হয়ে উঠেন আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনার প্রাণকেন্দ্র। ফকির লালনের দর্শনে দ্বৈত-অদ্বৈত তত্ত্ব বিকাশ লাভ করে। তাঁর দর্শনের মূলে রয়েছে–মানবিকতা, আত্মের অন্বেষণ–নিজের ভেতরে পরমের সন্ধানই যেখানে সাধনার মূল। আবার তা মানব-বিচ্ছিন্ন নয়।

লালন বলেন–

আপনারে আপনি চিনি নে।
দিন দোনের পর যার নাম অধর
তারে চিনবো কেমনে।।

আপনারে চিনতাম যদি
মিলতো অটল চরণ-নিধি
মানুষের করণ হত সিদ্ধি
শুনি আগম পুরাণে।।

কর্তারূপের নাই অম্বেষণ
আত্মারে কি হয় নিরূপণ
আপ্ততত্ত্বে পায় শতধন
সহজ সাধক জনে।।

দিব্যজ্ঞানী যে জন হল
নিজতত্ত্বে নিরঞ্জন পেল
সিরাজ সাঁই কয় লালন র’ল
জন্ম-অন্ধ নিজ গুণে।।

গুরুবাদ

লালন দর্শনের একটি অন্যতম দিক হলো গুরুবাদ। গুরুর প্রতি ভক্তি, নিষ্ঠা ছাড়া পরমের সন্ধান সম্ভব নয়। ধ্যান ছাড়া যেমন গুরুকে ধারণ করা যায় না, তেমন গুরুর প্রতি অসামান্য ভক্তি ছাড়া অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ হয় না। এই গুরুতেই পরমের অস্তিত্ব। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, জীবে দয়া, সত্য কথা, সৎ কর্ম, সৎ উদ্দেশ্য–এই গুরুবাদী মানবধর্মের মূল কথা।

এই সাধনায় প্রধানত তিনটি স্তর দেখা যায়–প্রবর্ত: গুরুর করুণা প্রার্থনা; সাধক: দেহতত্ত্ব, মনের মানুষ, সাধনার স্বরূপের জ্ঞান লাভ; সিদ্ধ: সাধনায় পূর্ণতার স্বরূপ। লালন ফকির ছিলেন সেই সিদ্ধসত্তা।

লালন বলেন–

গুরু তত্ত্ব না জানিলে
ভজন হবেনা পড়বিরে গোলে।।
আগে জানগে কালুল্লা, আনল হক আল্লা,

যারে মানুষ বলে, পড়ে ভূত মন আর, হসনে বারংবার,
একবার তদখনা প্রেম নয়ন খুলে।।

আপনি সাঁই ফকির, আপনি হয় ফিকির,ও
সে লীলাছিলে আপনারে আপনি ভুলে,

রব্বানা আপনি ভাসে, আপন প্রেম জন্মে।
লায়লাহাতন, ইল্লাল্লা জীবন আছে প্রেমজালে,
লালন ফকির কয়, যাবি মন কোথায়,
আপনার আজ আপনি ভুলে।।

লালনের দর্শনে সনাতন, বৌদ্ধ এবং ইসলামের মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। সনাতন ধর্মের বৈষ্ণব মতবাদ, বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদ এবং ইসলামের সুফি মতবাদের আধ্যাত্মিক মেলবন্ধন এ দর্শনে সুস্পষ্ট। তবে এ দর্শনে সাংখ্য দর্শনের বিশেষ প্রভাবও লক্ষ্যণীয়। সাংখ্য দর্শন বিশ্বের সুপ্রাচীন দর্শনের একটি। এই দর্শনের প্রবক্তা কপিল প্রাচীন বাংলার অধিবাসী ছিলেন। যশোরের কপোতাক্ষ নদের পাশে কপিলমুনি গ্রামে এই দার্শনিকের জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সাংখ্যদর্শনের ভিত্তিতে রয়েছে অস্তিত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান–পুরুষ ও প্রকৃতি, পরমাত্মা ও জীবাত্মা। এ দর্শনটি দ্বৈতবাদী।

লালনের দর্শন মতে, শরীর উপায় মাত্র হতে পারে না, শরীরের মাঝেই ‘আমি’র বাস। সেই ‘আমি’ একইসঙ্গে কর্তা (সাংখ্যের পুরুষ বা পরমাত্মা) এবং প্রকৃতি বা জীবসত্তা। জীবদেহের বাইরে এই কর্তার আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ, মানুষ শুধু জীব নয়, একই সঙ্গে তাঁর মাঝে পরমের বাস। এমন এক সত্তা, যেখানে জীবের প্রবৃত্তি এবং দিব্যগুণ একই চরাচরে বিরাজমান। আবার এই দিব্যতা একান্তই রক্তমাংসের মানুষ রূপে হাজির। কর্তা তাঁর সাধনার মধ্য দিয়ে জীবের চরিত্র অতিক্রম করে দিব্যরূপ পরিগ্রহণ করতে পারেন।

ফকির লালন বলেন–

ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়
আপন ঘর না বুঝে বাহিরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়।।

আমি সত্য না হইলে
হয় গুরু সত্য কোন কাজে
আমি যেরূপ দেখ না সেরূপ দীন দয়াময়।।

আত্মরূপে সেই অ-ধর
সঙ্গী অংশে কলা তার
ভেদ না জেনে বনে বনে ফিরিলে কি হয়।।

আপনার আপনি না চিনে
ঘুরবি কত ভুবনে
লালন বলে, অন্তিম কালে নাই রে উপায়।।

দেহতত্ত্ব

আমাদের সমাজে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করাটাকে অনেক ক্ষেত্রেই ‘অশোভন’ বলে ধরে নেওয়া হয়। অথচ এটি সৃষ্টির আদিমতম সত্য। জীবনের কথা বলতে গেলে যৌনতাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। লাললের গানে, লালনের দর্শনে এ বিষয়টি খুবই স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।

কামহীন প্রেম যেমন এক যান্ত্রিক চিন্তা, তেমনি কাম আর প্রেমকে এক করে ফেলারও সুযোগ নেই। দেহতত্ত্ব লালনের দর্শনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এখানে নারী-পুরুষের মিলন-ঘটিত সাধনার কথাই বলা হয়েছে। এ দর্শনমতে, স্রষ্টার প্রকৃত ও চূড়ান্ত রূপ থাকে মানবদেহের প্রাণের ধারায়। পুরুষের বীজ আর নারীর রজঃ মিলেই মানবের জন্ম। মিলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সহজ মানুষ বা পরমাত্মার দিব্যরূপ উপস্থিত হয়।

ফকির লালন বলেন–

নিগম বিচারে সত্য গেল তাই জানা
মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা

পুরুষ পরওয়ারদেগার
অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তাহার,
প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার
সৃষ্ট সবজনা।।

নিগম খবর নাহি জেনে
কেবা সেই মায়েরে চেনে,
যাহার ভার দিন দুনিয়ায়
দিলেন রব্বানা।।

ডিম্বের মধ্যে কেবা ছিল
বের হয়ে কারে দেখিল
লালন বলে সে ভেদ সে পেল
ঘুচল দিনকানা।।

বর্ণ-গোত্রহীন লালন

লালন ফকির ছিলেন; কিন্তু উদাসীন ছিলেন না। সমাজে বিদ্যমান কলূষতা, জাতপাত, শ্রেণি ও নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ও সোচ্চার ছিলেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের বিরোধিতায় তাঁর যুক্তি–‘ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল, চামার, মুচি সকলেই এক জলে সূচি’। রজোবীজের প্রাকৃতিকতায় সব মানুষের সূচনা ঘটেছে ‘একই জলে’। প্রকৃতিতে যদি ভেদাভেদ না থাকে, তাহলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা যায় না।

জাতিবর্ণে বিরুদ্ধে, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর গানে উল্লেখ করেছেন–

সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কী রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।

কেউ মালায়, কেউ তাসবীহ গলায়
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলে
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়
জাতের চিহ্ন রয় কারে।।

যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।

জগত বেড়ে জাতির কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জাতের ফাতা
ডুবিয়েছে সাত বাজারে।।

এসএ/

Header Ad
Header Ad

বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরামপুরে পিকআপভ্যানের ধাক্কায় হাসান আলী (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নাঈম হোসেন নামে আরও এক যুবক।

দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পল্লবী (দোয়েল মোড়) এলাকায়।

নিহত হাসান আলী পৌর শহরের থানাপাড়া (লিচু বাগান) এলাকার বাসিন্দা মিলন হোসেনের ছেলে। সে এবার আমানুল্লাহ স্কুল থেকে এসএসসি ২০২৫ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিল বলে জানিয়েছেন স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর ইসলাম।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে মোটরসাইকেলে করে হাসান আলী ও তার বন্ধু নাঈম শহরে ঘুরতে বের হয়। তারা যখন পল্লবী মোড় এলাকায় পৌঁছায়, ঠিক তখন গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা একটি মালবাহী পিকআপ তাদের মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে হাসান আলী রাস্তায় ছিটকে পড়ে এবং পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়।

স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাহাজুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহত নাঈম হোসেন পৌর শহরের একই এলাকার নিয়ামত হক ভোলার ছেলে বলে জানা গেছে।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তরুণ শিক্ষার্থী হাসানের অকাল মৃত্যুতে সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাঝে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী হাফিজুর রহমান মিঠু। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডেভিল হান্টের অভিযানে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সক্রিয় যুবলীগ কর্মী হাফিজুর রহমান মিঠুকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে ভূঞাপুর পৌর শহরের ঘাটান্দি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, মধুপুর থানায় নাশকতার মামলায় ওই যুবলীগ কর্মীকে গ্রেফতারের পর মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল মুসলিম সমাজ, হায়দ্রাবাদে গণবিক্ষোভ

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে শনিবার (২০ এপ্রিল) এক বিশাল গণবিক্ষোভের আয়োজন করে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (AIMPLB)।

এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের প্রধান এবং হায়দরাবাদের প্রভাবশালী মুসলিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি এই আইনকে “সংবিধানের মূল চেতনার বিরুদ্ধে” উল্লেখ করে বাতিলের জোর দাবি জানান।

“এই আইন আমাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে। যতদিন না এটি বাতিল করা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন চলবে,”— বলেন ওয়াইসি।

তিনি আরও জানান, ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করায় মুসলিম সমাজে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং তা মেনে নেওয়া যায় না।

সম্প্রতি পাস হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন অনুসারে, অ-মুসলিমদেরও ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য করা সম্ভব হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত। এই আইনকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন মুসলিম নেতারা।

এই ইস্যুতে ইতোমধ্যেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে। আদালতে সরকার জানিয়েছে, মে মাসে মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অ-মুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

 

ছবি: সংগৃহীত

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের দুই কক্ষে পাস হয়েছে। আন্দোলন এখন হায়দরাবাদ ছাড়িয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানায়, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আহ্বানে এবং ওয়াইসির নেতৃত্বে এই আন্দোলন ক্রমেই সারা ভারতব্যাপী শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের রূপ নিচ্ছে।

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে, তা শুধু রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয় এবং সাংবিধানিক অধিকার নিয়েও গভীর প্রশ্ন তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, আদালতের রায়ে এবং গণআন্দোলনের চাপে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল মুসলিম সমাজ, হায়দ্রাবাদে গণবিক্ষোভ
ফকিরাপুলে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ
আল-আকসা ভেঙে মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা ফাঁস, ফিলিস্তিনের সতর্কবার্তা
শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে: চিফ প্রসিকিউটর
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
আইপিএলে অভিষেক ম্যাচেই তিন রেকর্ড গড়লেন ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী
৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতে ইসলামের
আজ স্বামীর প্রশংসা করার দিন
ইসরায়েলি অভিনেত্রী থাকায় নিষিদ্ধ হলো সিনেমা
রাজধানীর ডেমরা ও মিরপুরে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বিএনপি
যশোরের শার্শায় অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইকারী আটক
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: ট্রাইব্যুনালে সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, পলকসহ ১৯ জন
বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আইন উপদেষ্টা
হাতিরঝিলে যুবদল নেতার ওপর হামলা, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে
আপিল বিভাগে নতুন দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা
বিয়ের আসরে কনের বেশে শাশুড়ি, থানায় হাজির বর
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, রাস্তায় হাজারো মানুষ