বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

লালন কী জাত সংসারে

মহামারি করোনার কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় টানা দুই বছর কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় লালন ফকিরের আখড়াবাড়িতে চারটি উৎসব বন্ধ ছিল। এবার করোনার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আসায় লালনভক্ত সাধু-গুরু-আশেকানসহ দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের দাবি ছিল উৎসব আয়োজনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব।

লালন ফকির বেঁচে থাকতে তিনি তার ভাব-শিষ্য অনুসারী সাধু, গুরু, ভক্ত অনুরাগীদের নিয়ে দোলপূর্ণিমার তিথিতে সাধু সঙ্গ করতেন। তার মৃত্যুর পর থেকে ভক্তরা এ দিনের তিথিতে ফকিরকে স্মরণ করতে প্রাণের স্মরণোৎসবের আয়োজন করে আসছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, লালন ফকিরের নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। অনেকে লালনগীতির সুনাম কুড়িয়েছেন। আবার উৎসবকেন্দ্রিক ছেঁউরিয়ায় ব্যাপক মানুষের পদচারণা। অথচ তাঁর দর্শন সম্পর্কে জানা-বোঝা বা এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-গবেষণা হয়েছে খুব সামান্যই। অথচ লালনের কথা বা গান নিছক গান শুধু নয়। এতে অন্তর্নিহিত তাঁর দর্শন। তাই এখানে লালনের দর্শনই প্রধান, গান তার প্রকাশভঙ্গি মাত্র।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্বল্প পরিসরের একটি লেখায় লালনের জীবন-দর্শন তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে লালন নিয়ে পড়ার আগে তাঁর দর্শন সম্পর্কে একটি প্রাক-ধারণা হয়তো এখান থেকে পাঠক পেতে পারেন।

কে ছিলেন লালন

বাংলায় যে কয়জন দার্শনিকের জন্ম, তাদের মধ্যে অন্যতম লালন ফকির। লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ ও বিস্তারিত কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা নিয়েও রয়েছে হাজারও বিতর্ক। সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তাঁর নিজের রচিত গান। তবে লালনের কোনো গানে তাঁর জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি। কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে ‘লালন ফকির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। লালনের জন্ম কোথায়, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায়, লালন ১৭৭৪ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সঙ্গেও অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। জীবনের কিছু ঘটনাবলিই হয়তো তাঁর ‘ফকির’ হয়ে উঠার রসদ যুগিয়েছে।

আধ্যাত্মিক সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাৎ লালনের জীবনে নিয়ে আসে নতুন মোড়। সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে এসে লালন দিনে দিনে হয়ে উঠেন আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনার প্রাণকেন্দ্র। ফকির লালনের দর্শনে দ্বৈত-অদ্বৈত তত্ত্ব বিকাশ লাভ করে। তাঁর দর্শনের মূলে রয়েছে–মানবিকতা, আত্মের অন্বেষণ–নিজের ভেতরে পরমের সন্ধানই যেখানে সাধনার মূল। আবার তা মানব-বিচ্ছিন্ন নয়।

লালন বলেন–

আপনারে আপনি চিনি নে।
দিন দোনের পর যার নাম অধর
তারে চিনবো কেমনে।।

আপনারে চিনতাম যদি
মিলতো অটল চরণ-নিধি
মানুষের করণ হত সিদ্ধি
শুনি আগম পুরাণে।।

কর্তারূপের নাই অম্বেষণ
আত্মারে কি হয় নিরূপণ
আপ্ততত্ত্বে পায় শতধন
সহজ সাধক জনে।।

দিব্যজ্ঞানী যে জন হল
নিজতত্ত্বে নিরঞ্জন পেল
সিরাজ সাঁই কয় লালন র’ল
জন্ম-অন্ধ নিজ গুণে।।

গুরুবাদ

লালন দর্শনের একটি অন্যতম দিক হলো গুরুবাদ। গুরুর প্রতি ভক্তি, নিষ্ঠা ছাড়া পরমের সন্ধান সম্ভব নয়। ধ্যান ছাড়া যেমন গুরুকে ধারণ করা যায় না, তেমন গুরুর প্রতি অসামান্য ভক্তি ছাড়া অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ হয় না। এই গুরুতেই পরমের অস্তিত্ব। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, জীবে দয়া, সত্য কথা, সৎ কর্ম, সৎ উদ্দেশ্য–এই গুরুবাদী মানবধর্মের মূল কথা।

এই সাধনায় প্রধানত তিনটি স্তর দেখা যায়–প্রবর্ত: গুরুর করুণা প্রার্থনা; সাধক: দেহতত্ত্ব, মনের মানুষ, সাধনার স্বরূপের জ্ঞান লাভ; সিদ্ধ: সাধনায় পূর্ণতার স্বরূপ। লালন ফকির ছিলেন সেই সিদ্ধসত্তা।

লালন বলেন–

গুরু তত্ত্ব না জানিলে
ভজন হবেনা পড়বিরে গোলে।।
আগে জানগে কালুল্লা, আনল হক আল্লা,

যারে মানুষ বলে, পড়ে ভূত মন আর, হসনে বারংবার,
একবার তদখনা প্রেম নয়ন খুলে।।

আপনি সাঁই ফকির, আপনি হয় ফিকির,ও
সে লীলাছিলে আপনারে আপনি ভুলে,

রব্বানা আপনি ভাসে, আপন প্রেম জন্মে।
লায়লাহাতন, ইল্লাল্লা জীবন আছে প্রেমজালে,
লালন ফকির কয়, যাবি মন কোথায়,
আপনার আজ আপনি ভুলে।।

লালনের দর্শনে সনাতন, বৌদ্ধ এবং ইসলামের মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। সনাতন ধর্মের বৈষ্ণব মতবাদ, বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদ এবং ইসলামের সুফি মতবাদের আধ্যাত্মিক মেলবন্ধন এ দর্শনে সুস্পষ্ট। তবে এ দর্শনে সাংখ্য দর্শনের বিশেষ প্রভাবও লক্ষ্যণীয়। সাংখ্য দর্শন বিশ্বের সুপ্রাচীন দর্শনের একটি। এই দর্শনের প্রবক্তা কপিল প্রাচীন বাংলার অধিবাসী ছিলেন। যশোরের কপোতাক্ষ নদের পাশে কপিলমুনি গ্রামে এই দার্শনিকের জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সাংখ্যদর্শনের ভিত্তিতে রয়েছে অস্তিত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান–পুরুষ ও প্রকৃতি, পরমাত্মা ও জীবাত্মা। এ দর্শনটি দ্বৈতবাদী।

লালনের দর্শন মতে, শরীর উপায় মাত্র হতে পারে না, শরীরের মাঝেই ‘আমি’র বাস। সেই ‘আমি’ একইসঙ্গে কর্তা (সাংখ্যের পুরুষ বা পরমাত্মা) এবং প্রকৃতি বা জীবসত্তা। জীবদেহের বাইরে এই কর্তার আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ, মানুষ শুধু জীব নয়, একই সঙ্গে তাঁর মাঝে পরমের বাস। এমন এক সত্তা, যেখানে জীবের প্রবৃত্তি এবং দিব্যগুণ একই চরাচরে বিরাজমান। আবার এই দিব্যতা একান্তই রক্তমাংসের মানুষ রূপে হাজির। কর্তা তাঁর সাধনার মধ্য দিয়ে জীবের চরিত্র অতিক্রম করে দিব্যরূপ পরিগ্রহণ করতে পারেন।

ফকির লালন বলেন–

ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়
আপন ঘর না বুঝে বাহিরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়।।

আমি সত্য না হইলে
হয় গুরু সত্য কোন কাজে
আমি যেরূপ দেখ না সেরূপ দীন দয়াময়।।

আত্মরূপে সেই অ-ধর
সঙ্গী অংশে কলা তার
ভেদ না জেনে বনে বনে ফিরিলে কি হয়।।

আপনার আপনি না চিনে
ঘুরবি কত ভুবনে
লালন বলে, অন্তিম কালে নাই রে উপায়।।

দেহতত্ত্ব

আমাদের সমাজে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করাটাকে অনেক ক্ষেত্রেই ‘অশোভন’ বলে ধরে নেওয়া হয়। অথচ এটি সৃষ্টির আদিমতম সত্য। জীবনের কথা বলতে গেলে যৌনতাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। লাললের গানে, লালনের দর্শনে এ বিষয়টি খুবই স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।

কামহীন প্রেম যেমন এক যান্ত্রিক চিন্তা, তেমনি কাম আর প্রেমকে এক করে ফেলারও সুযোগ নেই। দেহতত্ত্ব লালনের দর্শনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এখানে নারী-পুরুষের মিলন-ঘটিত সাধনার কথাই বলা হয়েছে। এ দর্শনমতে, স্রষ্টার প্রকৃত ও চূড়ান্ত রূপ থাকে মানবদেহের প্রাণের ধারায়। পুরুষের বীজ আর নারীর রজঃ মিলেই মানবের জন্ম। মিলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সহজ মানুষ বা পরমাত্মার দিব্যরূপ উপস্থিত হয়।

ফকির লালন বলেন–

নিগম বিচারে সত্য গেল তাই জানা
মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা

পুরুষ পরওয়ারদেগার
অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তাহার,
প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার
সৃষ্ট সবজনা।।

নিগম খবর নাহি জেনে
কেবা সেই মায়েরে চেনে,
যাহার ভার দিন দুনিয়ায়
দিলেন রব্বানা।।

ডিম্বের মধ্যে কেবা ছিল
বের হয়ে কারে দেখিল
লালন বলে সে ভেদ সে পেল
ঘুচল দিনকানা।।

বর্ণ-গোত্রহীন লালন

লালন ফকির ছিলেন; কিন্তু উদাসীন ছিলেন না। সমাজে বিদ্যমান কলূষতা, জাতপাত, শ্রেণি ও নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ও সোচ্চার ছিলেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের বিরোধিতায় তাঁর যুক্তি–‘ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল, চামার, মুচি সকলেই এক জলে সূচি’। রজোবীজের প্রাকৃতিকতায় সব মানুষের সূচনা ঘটেছে ‘একই জলে’। প্রকৃতিতে যদি ভেদাভেদ না থাকে, তাহলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা যায় না।

জাতিবর্ণে বিরুদ্ধে, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর গানে উল্লেখ করেছেন–

সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কী রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।

কেউ মালায়, কেউ তাসবীহ গলায়
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলে
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়
জাতের চিহ্ন রয় কারে।।

যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।

জগত বেড়ে জাতির কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জাতের ফাতা
ডুবিয়েছে সাত বাজারে।।

এসএ/

Header Ad
Header Ad

২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংবাদ সম্মেলনে। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গ্রেটার সিটি ‘ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন।

এছাড়া ইমিগ্রেশনের জন্য পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। পাবলিক সার্ভিস পৃথক করে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।

এদিকে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিচার বিভাগ কোনো দিনও স্বাধীন ছিল না, তাই কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন করার প্রস্তাব দিয়েছে। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়া স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে বিচার সংস্কার কমিশন। পুলিশী তদন্ত অনেক সময় রাজনৈতিক হয়ে থাকে এজন্য এটা দরকার বলে জানানো হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট উপজেলা পর্যন্ত নেয়ার সুপারিশ, আর বিভাগীয় পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ করে প্রাইরোটি বেসিসে কিছু প্রস্তাবনাকে একত্রিত করা হবে যেখানে সব পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে সেটার নাম হবে জুলাই চার্টার। এই জুলাই চার্টাররের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো তার উপর নির্ভর করছে নির্বাচন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

Header Ad
Header Ad

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

হাইকোর্টের রায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সকল আসামি খালাস পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এই রায় দেওয়া হয়।

আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কায়সার কামাল ও মো. মাকসুদ উল্লাহ, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।

এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এ মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা খালাস চেয়ে আপিল করেন। আজকের রায়ে সবাইকে খালাস দেওয়া হলো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "এই মামলায় আইনের চরম অপপ্রয়োগ হয়েছে। কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল একটি পক্ষপাতদুষ্ট রায়। মামলার তদন্তও ছিল দুর্বল, অবহেলাজনিত ও কাল্পনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।"

তিনি আরও বলেন, "এই মামলায় দণ্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকি ৪৫ জনের মধ্যে ৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন, আর বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।"

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে হামলার শিকার হন। ট্রেন লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রথমদিকে বিএনপির ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

পরের বছর তদন্তে কোনো সাক্ষী না পাওয়ায় পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যা তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে গৃহীত হয়। তবে আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৫২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘদিন বিচারিক প্রক্রিয়া চলার পর অবশেষে আজ হাইকোর্টের রায়ে সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হলো।

Header Ad
Header Ad

হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও। ছবি: সংগৃহীত

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশি ইথিক্যাল হ্যাকিংগ্রুপ ‘সাইবার কমিউনিটি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ছাত্রলীগের পেজটি নিষ্ক্রিয় করেছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফেসবুকে একাধিকবার খুঁজেও পেজটি পাওয়া যায়নি।

এদিকে সাইবার কমিউনিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাত ৯টায় লাইভে আসার কথা।’ সেই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দিনগত রাত ২.১০ মিনিটে ছাত্রলীগের ওই পেজটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড পেজের বিরুদ্ধেও কাজ চলমান।

‘সাইবার কমিউনিটি’ জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশে সাইবার যোদ্ধা হিসেবে মানুষের আস্থার জায়গা করে নিয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন, হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।

ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্র-তরুণের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্র-তরুণের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই তিনি ও তার দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ  
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাত আবদুল্লাহর  
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ    
সুইডেনে স্কুলে বন্দুক হামলা নিহত ১০ জন  
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত গ্রেফতার  
জাবিতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের ঘোষণা  
মুসলিম লীগ যেমন বিলুপ্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগও বিলুপ্ত হবে : সলিমুল্লাহ খান
ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীসহ ৮ বুয়েট শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার  
জীবননগর সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বাংলাদেশি যুবক আটক