২৩তম দিনের অনুষ্ঠানমালা
বাঙালির সংস্কৃতির নানা রূপ বঙ্গবন্ধুর জীবনে প্রতিফলিত
অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন বুধবার (৯ মার্চ) বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। নির্ধারিত প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নানের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রবন্ধটি পাঠ করে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কেরামত মওলা, গোলাম কুদ্দুছ ও সৌম্য সালেক। সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘আমাদের ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মহাসম্মিলনে রচিত জাতীয় হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহে যিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নিখাদ বাঙালি ছিলেন। বাঙালিত্বের যা কিছু শুভ, সুন্দর ও কল্যাণময় তার বিচিত্র শক্তি ও সৌন্দর্যে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছিলেন। ফলে একজীবনে তিনি যে সংগ্রাম করেছেন, আত্মত্যাগের যে উজ্জ্বল মহিমা তিনি ছড়িয়ে গেছেন তা শুধু রাজনৈতিক ছিল না, ছিল শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিরও মুক্তি-সাধনা। তাঁর নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিচর্চার প্রতিজ্ঞা থেকে বাংলাদেশ শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছিল। নানামুখী প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত শিল্পী-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীগণ তাঁদের সাহিত্যসাধনা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রেখেছেন।’
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনা ছিল প্রসারিত। তিনি যে শিল্প-সাহিত্যের আদর্শে বিশ্বাস করতেন, তা বাংলার মহৎ সাহিত্যিকদেরই আদর্শ। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির নানা রূপ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে নানামাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে।’
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক বোধ, চিন্তা-চেতনার পেছনে শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্য। উত্তাল রাজনৈতিক জীবনে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন আর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রসারে আমৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যে রাজনীতি করেছেন, তা ছিল গণমানুষের রাজনীতি। তাই বাংলার শিল্প-সাহিত্যকেও তিনি গণমানুষের শিল্প-সাহিত্যে রূপান্তরিত করতে চেয়েছেন। বাঙালির সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার স্বপ্ন তিনি আজীবন লালন করেছেন।
লেখক বলছি
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন তপন বাগচী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মূল মঞ্চে আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আতাহার খান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ, শিমুল পারভীন এবং জেসমিন বন্যা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সালমা আকবরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতাঞ্জলি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, ছন্দা চক্রবর্তী, মীরা মন্ডল, প্রদীপ কুমার নন্দী, মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, প্রিয়াংকা গোপ এবং সম্পা দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), রিচার্ড কিশোর (গীটার) এবং রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড)।
বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যচর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জসিম মল্লিক ও শামস আল মমীন। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এপি/