বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

নারী পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। চারিদিকে বিজয়ের আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মনে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করতে পারেনি। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তখন মানসিকভাবে বিব্রত ও বিপর্যস্ত। যুদ্ধের সময় মানুষ কোনো রকম প্রাণে বেঁচে থাকাটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে।

কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেখা গেল প্রায় সাড়ে চার লাখ নারীর বেচেঁ থাকাটাই হয়ে উঠেছে লজ্জা আর অপমানের। শুধু ধর্ষণের শিকার নারীরাই নন, তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনের পরিবারও তাদের নিয়ে বিব্রত ছিল। এই পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে আত্মপরিচয় গোপন করেছে, অনেকে দেশ ত্যাগ করেছে। বাঙালির ঐতিহ্য বা প্রথা অনুসারে সমাজে ধর্ষিতার কোনো স্থান নেই। সে অপবিত্র, হেয় ও নিন্দার পাত্র। এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতে নির্যাতিতা নারীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মুস্তফা চৌধুরী তার’ ৭১- এর যুদ্ধশিশু অবিদিত ইতিহাস গ্রন্থের ৮ পৃষ্ঠায় বলেন—
‘১৯৭২- এর জানুয়ারি এবং এপ্রিল মাসের মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়ে যে দালিলিক প্রমাণ গেছে, তাতে ২০০ জন নারীর আত্মহত্যার উল্লেখ রয়েছে। ডা. ডেভিস ও তার সহকর্মীদের কাছে ২০০ আত্মহত্যার হিসেবটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তাদের মতে, যুদ্ধের পর পরিবারের ভালোর জন্য তারা মনে করেন আত্মহত্যার বিষয় সবাই একটু রক্ষণশীলতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।’

এ বিষয়ে ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ দৈনিক বাংলায় একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সম্পাদকীয়টির শিরোনামই ছিল— ‘অবলাদের আত্মহত্যা’।

‘একটি শঙ্কিত হবার মত সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুশো থেকে তিনশো নির্যাতিতা বীরাঙ্গনা আত্মহত্যা করছেন। কর্তৃপক্ষীয় সূত্র থেকে এ সংবাদটি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। সময়মতো সত্যিকার সাহায্য সহযোগিতা লাভে ব্যর্থ হয়েই এইসব নির্যাতিতা বীরাঙ্গনারা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য এই পথ বেছে নিয়েছেন।’

১০ জানুয়ারি ১৯৭২- এ বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আগেই জানতেন। কাজেই তিনি দেশে ফিরেই বদরুন্নেসা আহমেদ ও নূরজাহান মুর্শিদকে দায়িত্ব দেন একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য। সেই পরিকল্পনায় শুধু বীরাঙ্গনারাই নয়, থাকবে পরিত্যক্ত, আশ্রয়হীন বিধবা ও অসহায় নারীর পুনর্বাসনের প্রসঙ্গেও।
পরিকল্পনানুযায়ী ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গঠন করেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় নারীপুনর্বাসন বোর্ড’। বোর্ডকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হলেও এটি ছিল স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড। বোর্ডের চেয়্যারম্যান ছিলেন বিচারপতি জনাব কে এম সোবহান। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন মিস্টার আবদুল আউয়াল। এ ছাড়া সদস্য ছিলেন ১১ জন। এরা হলেন— বেগম বদরুন্নেসা এম সিএ, বেগম নূরজাহান মোরশেদ এম সিএ, বেগম সাজেদা চৌধুরী এম সি এ, বেগম মমতাজ বেগম এম সি এ, মিস রাফিয়া আখতার ডলি এম সিএ, ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীম, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, ডাক্তার মিসেস জাহানারা রাবিব, মিসেস মুনির চৌধুরী, মিসেস জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও মিসেস মোসফেকা মাহমুদ। ৯ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সারা বাংলাদেশের নির্যাতিতা নারীদের বিষয়ে একটি কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাবনা জেলার নগরবাড়ির উত্তরে বসন্তপুর গ্রামে যান। সেখানে বাঁধ নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন তিনি। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠবেন। এমন সময় বঙ্গবন্ধুর কাছে কয়েকজন নারী আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি লক্ষ করলেন এবং নির্দেশ দিলেন তাদের আসতে দিতে। তারা ছুটে এসে বঙ্গবন্ধুর সামনে তার পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। একজন জানালেন, হানাদার বাহিনী তাকে লাঞ্ছিত করেছে। তাই তার স্বামী তাকে সংসারে নিতে চাচ্ছে না। সমাজের মানুষও তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছেন না। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিলেন। বললেন, ‘আজ থেকে পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়। তারা এখন থেকে ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত। কেননা দেশের জন্য তারা ইজ্জত দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে তাদের অবদান কম নয়। বরং কয়েক ধাপ উপরে, যা আপনারা সবাই জানেন, বুঝিয়ে বলতে হবে না। তাই তাদের বীরাঙ্গনা মর্যাদা দিতে হবে এবং যথারীতি সম্মান দেখাতে হবে আর সেই স্বামী পিতাদের উদ্দেশে আমি বলছি যে আপনারাও ধন্য। কেননা এ ধরনের ত্যাগী ও মহৎ স্ত্রীর স্বামী বা মেয়ের পিতা হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু তাদের কেবল বীরঙ্গনা খেতাব ভূষিত করে চুপ করে বসে থাকেননি। তাদের পারিপারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ছিলেন। বীরাঙ্গনারা সবচেয়ে বড় লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন স্বাধীন দেশের নিজ সামজে। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ধর্ষিতা মেয়ে বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান। আর ঠিকানা লিখে দাও ধানমন্ডি বত্রিশ। মুক্তিযুদ্ধে আমার মেয়েরা যা দিয়েছে তার ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো।’ বলেই বঙ্গবন্ধু ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাদের দহন যন্ত্রণা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন সর্বজনীন পিতা, অসহায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, নির্ভরযোগ্য এক মহিরুহ। শুধু বঙ্গবন্ধু নন, বেগম মুজিবও এই সময় যোগ্যমায়ের ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসেন। ঢাকার দুটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান বেগম মুজিব। সেই সময় তিনি বলেন, ‘এই বীরাঙ্গনা রমণীদের জন্য জাতি গর্বিত। তাদের লজ্জা ও গ্লানিবোধের কোনো কারণ নেই।’

মার কাছে সন্তদানের কোনো লজ্জা ও গ্লানিবোধ নেই। সব লজ্জা ও গ্লানি তুচ্ছ করে তারা বেগম মুজিবকে মাতৃত্বের অধিকারে গ্রহণ করতে পারেন। তারা জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছেন সত্য, কিন্তু সব হারাননি। এই সামান্য সান্তনাই তাদের এই দুঃখ ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে বাঁচার প্রেরণা দেবে।

নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল প্রক্রিয়া। একটি সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা খুবই কষ্টসাধ্য। তবুও বঙ্গবন্ধু তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন এবং দেশি-বিদেশি সকল প্রতিষ্ঠানের সাহায্য কামনা করেছেন। এইসব নারীদের আঘাতের ক্ষত মুছে তাদের খাবার, আশ্রয় ও কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের হৃদয়ের যন্ত্রণা আন্তরিকতার সাথে অনুভব করতে পারতেন। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা। তার উদার বক্ষের আশ্রয় থেকে কেউ বঞ্চিত হোক এমনটা তিনি কখনোই ভাবেননি। তাই নিজের পৃষ্ঠপোষকতায় নারীপুনর্বাসনের মতো একটি জটিল প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। নারীর দৈনিক জীবন যাত্রার নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দিয়ে তার জীবনে গুনগত পরিবর্তন আনা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই কঠিন কাজ ছিল। তবু বঙ্গবন্ধু দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ন্যায় ও মূল্যবোধের পক্ষে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষুধার হাত থেকে লাঞ্ছিতা মহিলা ও এতিম শিশুদের বাঁচতে। দেশের সত্যিকার নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন বোর্ডকে।

সেই মোতাবেক বোর্ড মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। বোর্ড মহিলাদের ক্যারিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খোলে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল বাংলাদেশে প্রথম। বেইলি রোডে তাহেরুন্নেসা আবদুল্লাহর পরিচালনায় কাজ শুরু হয়। তাহেরুন্নেসা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন—আমি ডিরেক্টর ট্রেনিং হিসেবে সেখানে যোগ দিই। আমাদের মেইন অফিস ছিল মোহাম্মদপুরে। ওখানে একটি ট্রেনিং সেন্টারও ছিল। আর বেইলি রোডে ‘ফেডারেশন অব ইউনিভাসির্টি ওমনে’- এর বিল্ডিং-এ ‘উইমেন্স ক্যারিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ চালু করা হয়।” এ ছাড়া বোর্ড সেক্রেটারিয়াল কোর্স চালু করে হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শুরু হয়। মোহাম্মদপুর সেলাই ও কারুশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সাভারে খোলা হয় পোল্ট্রি ফার্ম।

নারীপুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল প্রেগন্যান্সি। নির্যাতনের শিকার, কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট জানিয়েছিল-
‘জানা যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যাপক ধর্ষণ চালিয়েছে প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী ও কমবয়সি মেয়েদের ওপর। অসংখ্য সূত্র থেকে ঘটনা সম্পর্কে স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে যে, ৭০,০০০- এর বেশি নারী এ সব ধর্ষনের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে।’

এ থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নারীর এই অবঞ্ছিত গর্ভধারনের জন্য সমাজ কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এর ফলে ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক ঐতিহ্য ও প্রথার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয় যা দূর করার জন্য বঙ্গবন্ধু এগিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের গর্ভপাতের জন্য ঢাকায় পৌঁছায় ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তাররা। এছাড়া ভারত ও ডেনমার্ক থেকেও আসেন। তারা বাংলাদেশে পৌঁছার পরেই স্থাপন করা হয় গর্ভপাত কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলো মূলত সেবা সদন নামেই পরিচিত পায়।
সেই সময় নির্যাতিতা নারীদের জন্য সরকারে পুর্নবাসন বোর্ড বাংলাদেশে ৫০টি সেবা সদন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় যার মধ্যে চারটি ঢাকায় এবং অপর ৪৬টি দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা পর্যায়।

৩ মার্চ ১৯৭২- এ নারীপুর্নবাসন বোর্ডের চেয়ারম্যান বিচারপতি কে এম সোবহান সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি জানান এ যাবৎ সংস্থার সেবা সদনে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের মধ্যে চৌদ্দ বছরের কম মেয়ের সংখ্যাই বেশি এবং এদের মধ্যে শতকরা প্রায় সত্তর ভাগই হচ্ছেন স্কুলের ছাত্রী।

বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া ছিল তাদের বিয়ে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি সমাজের প্রথা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতেন। তিনি জানতেন কাজটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই দুরূহ ও জটিল্ তবু তিনি ট্যাবু ভাঙলেন। যুবকদের আহ্বান জানালেন। বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতার দেশের তরুণ সমাজের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করেন। তিনি নির্যাতনের শিকার নারীদের সমাজে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তরুণদের বৈবাহিক সম্পর্কে স্থাপনে উৎসাহিত করেন। এ কারণে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেই বীরাঙ্গনাদের জীবন সঙ্গিনী করতে আগ্রহী হয়েছিল। এতে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চত থেকে যুবকেরা বীরাঙ্গনাদের বিয়ে করার জন্য চিঠি পাঠাতে লাগলেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশও হচ্ছিল পত্রিকায়। বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বাংলার বাণীসহ অন্যান্য পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছিল যাতে সমাজে বিদ্যমান ট্যাবু ভেঙে যায়। যাতে বীরাঙ্গনাদের দোষী ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা কমে যায়।

এদিকে বঙ্গবন্ধু নির্দেশে মফস্বলেও যে নারীপুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ ছিল এগিয়ে। তৎকালীন এমপি, সৈয়দ হায়দার আলী, এমএনএ মোতাহার হোসেন ও মহকুমা আওয়ামী লীগ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে মিটিং করেন এবং সিরাজগঞ্জে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যেগ নেন। ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ গঠিত হয় দশ সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন সখিনা হোসেন তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ মিসেস ফজিলাতুননেসা (স্বামী হাফিজুর রহমান), সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিনা লোহানী, সদস্য আমিনা বেগম মিনা (স্বামী আজিজুল হক বকুল, মুক্তিযোদ্ধা), মিসেস শাহানা আবেদিন (স্বামী জয়নাল আবেদীন), মিসেস ইসাবেলা হোসেন (স্বামী সিরাজ খলিফা), জসিম ডাক্তারের স্ত্রী ও সাহেব আলী ডাক্তারের স্ত্রী। এই সময়ে এসডিও মহকুমা প্রশাসক এস এ মালিক নারীপুনর্বসানের জন্য ভিক্টোরিয়া স্কুল রোডে পরিত্যক্ত টিনশেডের একটি বাড়ি অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দেন। সেই সময় সাফিনা লোহানীর উদ্যোগে নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছেন পরিত্যক্তা ও বীরাঙ্গনাদের খোঁজে। এই কেন্দ্রে শুরুতে খুব কম সংখ্যক নারী এলেও পরে প্রায় ১০০ জন বীরাঙ্গনা সেখানে আশ্রয় পেয়েছিলেন। স্থানীয়রা ছাড়াও সেখানে দূর-দূরান্ত থেকেও নারীরা এসেছিলেন এবং চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে গেছেন। সেই সময় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের ডা. রেজাউল করিম নির্যাতনের শিকার মা-বোনের চিকিৎসা সেবা দিতেন।

১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু ‘সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে শতকরা ১০টি শূন্যপদে নির্যাতিতা মহিলা বা মুক্তিযুদ্ধে যাহাদের আত্মীয় স্বজন মারা গেছে এমন সব মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখার আদেশ দেন।’
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বীরাঙ্গনাদের প্রসঙ্গটা একেবারেই অন্ধকারে তলিয়ে যায়। বীরাঙ্গনা প্রশ্নে সামাজিক ‘কলঙ্ক’ ইস্যুটি ক্রমেই একটি নীরবতার সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। একাত্তরের পর বিষয়টি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হলেও বঙ্গবন্ধু সেই ট্যাবু ভেঙে দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু ৭৫- এর পরে বিষয়টি একেবারেই নীরবতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

এখন জানা প্রায় অসম্ভব-পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠিক কতজন বীরাঙ্গনা কবে, কোথায়, কীভাবে, আশ্রয় পেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে দুর্বিষহ নির্যাতনের শিকার নারীদের আর্তনাদ, হাহাকার ইতিহাস গৌণ বিষয় হিসেবেই চাপা পড়ে গেল। ১৯৯০-এর দিকে পিপলস ট্রাইব্যুনাল বা গণ-আদালত প্রতিষ্ঠা হলেও তা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে কার্যত কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। অথচ বঙ্গবন্ধু এইসব নারীদের অবস্থানকে চিহ্নিত করেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থানের সমকক্ষ হিসেবেই। এজন্যই তিনি তাদের মা বলে ডেকেছিলেন। আর তিনিও হয়ে উঠেছিলেন তাদের সত্যিকারের পিতা।

ড. মাহবুবা রহমান: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা,

আরএ/

Header Ad

ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত বেড়ে ১০০, নিখোঁজ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের দক্ষিণে ভয়াবহ বন্যায় নিহত বেড়ে ১০০ তে পৌঁছেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১২৬ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধারকর্মীরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রাজিলের রিও গ্র্যান্ডে দো সুলেতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবন্ধতায় ৪০০ এর বেশি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার (৮ মে) পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যাদুর্গত প্রদেশটিতে ১২৬ জনের হদিস মিলছে না। সেইসঙ্গে ব্রাজিলের জাতীয় দুর্যোগ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার উচ্চ ঝুঁকি বিরাজ করছে এখনও। কারণ আবারও ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে।

ইতোমধ্যে রিও গ্র্যান্ডে দো সুলেতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ হয়ে গেছে। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ এবং টেলিফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা কবলিত এলাকায় দেড় লাখ সেনা, ফায়ারফাইটার, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য।

বায়ার্নকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২টি গোলই করেছেন জোসেলু। ছবি: সংগৃহীত

বায়ার্ন মিউনিখ নয়, ওয়েম্বলির টিকিট কাটল রিয়াল মাদ্রিদ। আরো একবার অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল দলটা। আরো একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তারা। ‘বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিট অনেক লম্বা সময়’ এই কথাটি রিয়াল সমর্থকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কথাটি ঠিক যে কতটা সত্য তার প্রমাণ পেল জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ।

বুধবার (৮ মে) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জোসেলুর জোড়া গোলে ২-১ গোলে জিতে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনাল নিশ্চিত করলো ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৫৭ শতাংশের অধিক সময় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে রিয়াল মাদ্রিদ । প্রতিপক্ষের ৭ শটের বিপরীতে তারা নেয় ১৯ শট।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে আচমকা লিড পায় বায়ার্ন। পাল্টা আক্রমণ থেকে হ্যারি কেনের বাড়ানো বল নিয়ে বাঁ-পায়ে নিশানাভেদ করেন কানাডিয়ান ফুটবলার আলফানসো ডেভিস।

এর কিছুক্ষণ পর ডেভিসের পায়ে লেগে বল বাভারিয়ানদের জালে জড়ালে সমতায় ফিরতে বসেছিল রিয়াল। তবে এ সময় জশুয়া কিমিচ ফাউলের শিকার হলে ভিএআরের সাহায্যে রেফারি গোল বাতিল করেন।

ম্যাচের ৮১ মিনিটে ফেদেরিকো ভালভার্দের পরিবর্তে জোসেলুকে মাঠে নামান কোচ আনচেলত্তি। সাত মিনিট পরই বাঁ-পায়ের শটে এ স্পেনিয়ার্ড বল জালে জড়িয়ে সমতা টানেন। অতিরিক্ত সময়ে আবারও গোল করেন হোসেলু। কিন্তু বাধ সাধে তার অবস্থান। পরে ভার রিভিউ দেখে রেফারি নিশ্চিত হন, অফসাইড নয়; সেটি গোলই। তাতে আনন্দের জোয়ার উঠে বার্নাব্যুতে।

আগামী ১ জুন ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে মাঠে নামবে রিয়াল। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মঙ্গলবার পিএসজিকে বিদায় করা বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

২৫ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এই রায় ঘোষণা করবেন।

গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।

স্ত্রী পারভীন সুলতানা দিতি ও দুই সন্তানের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী

চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ৩৮ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, মামলাটির বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও আদালতে এসেছে। আদালতে যারা এসেছেন, তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমেই প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়েছে।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে হাইকোর্টের আদেশে মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল।

২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারও সাত বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত বেড়ে ১০০, নিখোঁজ শতাধিক
বায়ার্নকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
হজের প্রথম ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়লেন ৪১৯ হজযাত্রী
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হলেন যারা
বগি লাইনচ্যুত: ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আবু সাঈদ
গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
দুই দিনের ঢাকা সফরে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
ছেলে-পুত্রবধূর অপমান সইতে না পেরে বৃদ্ধ মা-বাবার বিষপান
৪৬তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ হতে পারে আগামীকাল
জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট: প্রধানমন্ত্রী
ফের আলিয়া ভাটের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস!
‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের মালিক সিরাজ গ্রেপ্তার, দুই দিনের রিমান্ডে
এক লাফে ডলারের দাম বাড়ল ৭ টাকা
আজ বিশ্ব গাধা দিবস, পালন করা হয় যেভাবে...
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে: সিইসি
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে জাইকার প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা