শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

জগৎসভায় রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রতীর্থ শিলাইদহ

২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ, ৭ মে ১৮৬১ (সোমবার) দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে কলকাতার দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্ম। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ পিতার চতুর্দশ সন্তান, অষ্টম পুত্র। রবীন্দ্রনাথের চেতনায় নন্দনতত্ত্ব, বিশ্বমানবিকতা বা মানবধর্ম প্রধানত ছিল তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধিজাত ও সত্য। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং বিবর্তনের লীলাকে গ্রহণ করেও তিনি মানুষ এবং পৃথিবীর সামগ্রিক পরিপূর্ণ পরিচয় পাবার জন্য দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক দৃষ্টি উন্মুক্ত রেখেছিলেন, এখানেই তাঁর অনন্যতা এবং বিশেষত্ব। ১৩ নভেম্বর ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ‘গীতাঞ্জলি’র অনেক কবিতাই শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে বসেই তিনি রচনা করেছিলেন, এ মর্মে বেশ কিছু প্রমাণ রয়েছে। গীতাঞ্জলিই রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবির পরিচয় এনে দিয়েছে।

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি (নাইটহুড) দেয়। ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের শিখ ধর্মতীর্থস্থান জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড হয়। প্রতিবাদে ব্রিটিশ বড়লাটকে কবি তাঁর ঐতিহাসিক পত্র দেন ও ইংরেজের দেওয়া ‘স্যার’ উপাধি বর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর পরিণত বয়সে একাধিকবার কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এসেছেন। শেষবার এসেছিলেন সস্ত্রীক। উপলক্ষ জমিদারির খাজনা আদায়। যতো না খাজনা আদায় হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি তিনি গ্রাম-বাংলার অজপাড়াগাঁয়ের সৌন্দর্যসুধা প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন। পদ্মা-গড়াই পলি বিধৌত শান্ত-সমাহিত গ্রাম ও মেঠো পথের ছবি যেমন বক্ষে ধারণ করেছেন, তেমনি তাঁর কাব্যিক দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করেছেন, খেয়া পারাপারের মাঝিটিকে পর্যন্ত। এসকলেরই ছাপ ‘সোনার তরী’, ‘মানসী’ কাব্যে পাওয়া যায়।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যে শিশুটি ভূমিষ্ট হয়েছিল, উত্তরকালে তিনিই যে বাংলা সাহিত্য শাসন করবেন, ছোটবেলা থেকে তার আলামত পাওয়া গিয়েছিল। সাত বছর বয়সে অপেক্ষাকৃত বয়োজ্যেষ্ঠ ভাগ্নে জ্যোতি প্রকাশ পয়ার ছন্দে পদ্য লেখার কৌশল শিখিয়ে দেন। তারপর একটি নীল কাগজের খাতা সংগ্রহ করে শুরু হয় তাঁর পদ্য রচনার কসরত। হরিণ শিশু যেমন নতুন শিং গজালে যেখানে সেখানে গুঁতো মারে, বালক কবিও নতুন কাব্যোদ্গমে সেরকম উৎপাত শুরু করলেন। পদ্যের পর পদ্যে অচিরেই খাতা ভরে উঠল বালকের, কবিখ্যাতি বাড়ির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে অচিরেই স্কুলে পৌঁছে গেল। শিক্ষক সাতকড়ি দত্ত একদিন ডেকে জিজ্ঞেসা করলেন, ‘তুমি নাকি কবিতা লিখিয়া থাক।’ সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষার ব্যবস্থা। তিনি দু’লাইন লিখে কবিকে পরবর্তী দু’লাইনের পদপূরণের নির্দেশ দিলেন।

তিনি লিখলেন,
রবিকরে জ্বালাতন আছিল সবাই, বরষা ভরসা দিন আর ভয় নাই।

রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,
মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে, এখন তাহারা সুখে জলক্রীয়া করে।

শিশুরাজ্যে প্রবেশের অধিকার ও সামর্থ্য সকলের থাকে না। সহজ সরল কোমলমতি শিশুদের জন্য কোন রচনা শিশুর মতই সহজ সরল হওয়া দরকার; নয়তো পণ্ডশ্রম হয়। আর সহজ কথা লেখা যে মোটেই সহজ নয়, তা রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টই বলে গেছেন।

তাই কবিতার ভাষায় কবি বলেছেন,
সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।
লেখার কথা মাথায় যদি জোটে, তখন আমি লিখতে পারি হয়তো।
কঠিন লেখা নয়কো কঠিন মোটে, যা-তা লেখা তেমন সহজ নয় তো। (খাপছাড়া)

এমন কোনো বাঙালি নেই রবীন্দ্রনাথের ছড়া শুনতে শুনতে বেড়ে ওঠেননি। প্রত্যেক বাঙালি শিশুর অন্তঃকরণ অনুভব করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রতিটি বাঙালিরই মুখে বুলি ফুটেছে রবীন্দ্রনাথের ছড়া বলতে বলতে।

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।



কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ গ্রাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিখ্যাত নামের সঙ্গে জড়িত হয়ে সারা বিশ্বে পরিচিত হয়েছে। সম্ভবত: খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর দিকে শিলাইদহে শীলাদেবীর মন্দির ও শিলাকুঞ্জ বা দহ ছিল। সেই থেকে এই শিলাইদহ নামের উৎপত্তি। ড. নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাংলার নদনদী’ গ্রন্থে এর সমর্থন পাওয়া যায়। ১৭৯১-১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ রামলাচন ঠাকুর নাটোররাজ রামকৃষ্ণ রায়ের জমিদারী অঞ্চল বিরাহিমপুর পরগনা নিলামে ক্রয় করেন। ঠাকুরবাড়ির শিলাইদহ জমিদারি ছিল অবিভক্ত নদীয়া জেলার ৩৪৩০ সংখ্যক তৌজিভূক্ত। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকর সাহেব মি. শেলীর নীলচাষের জমিজমা ও কুঠিবাড়ি ক্রয় করেন এবং ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিলাইদহে চিনি কারখানা স্থাপন করেন। শিলাইদহে নীলকর সাহেবদের কুঠি নদীগর্ভে বিলীন হলে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে কুঠিবাড়ি নির্মিত হয় যা ১৩ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। শীলাদেবীর মন্দির, শিলাকুঞ্জসহ শিলাইদহ মৌজা এরও বহু পূর্বেই কীর্তিনাশা পদ্মা গ্রাস করে। এর ফলে শিলাইদহের বসতি খোরশেদপুর, কসবা ও হামিরহাট গ্রামে উঠে এসেছিল। রবীন্দ্রনাথের বর্তমান কুঠিবাড়ি, কাছারি, দাতব্য চিকিৎসালয়, পোস্ট অফিস প্রভৃতি তিনি ১৮৯২ সালে খোরশেদপুর মৌজায় তৈরি করেন। কিন্তু ডাকঘর, ইউনিয়ন প্রভৃতি এই সবের ডাকনাম শিলাইদহ নামে প্রচলিত রয়েছে।

শ্রীশচীন্দ্রনাথ অধিকারী তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও শিলাইদহ’ গ্রন্থে মাত্র ১৫ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে শিলাইদহে প্রথম আসেন। এখানকার জঙ্গলে বিশ্বনাথ শিকারির সঙ্গে বাঘশিকারের কথা কবি তাঁর ‘ছেলেবেলা’ গ্রন্থে লিখেছেন। ২৭ বছর বয়সে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে কবি শিলাইদহে এসে নৌকাবাস করেন। ২৯ বছর বয়সে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কবি জমিদারি দেখাশোনার ভার পান এবং শিলাইদহে এসে কাছারির পুণ্যাহ উৎসবে যোগ দেন, প্রজাদের সাথে কবির পরিচয় হয়। কিন্তু কবি ঐ বইতে তার আরো ছেলেবেলার স্মৃতিচারণে শিলাইদহের আব্দুল মাঝির কথা এবং অন্য পাতায় শিলাইদহে ফুল বাগানের মালির সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো বিষয়ে যা লিখেছেন তাতে সুস্পষ্ট ধারণা হয় তিনি ১৮৭৬ সালে অথবা তার আগেও শিলাইদহে এসেছিলেন।

পরবর্তীকালে ১৮৯১ সালে ‘ছিন্নপত্রে’ শিলাইদহ থেকে একখানা চিঠিতে যা লিখেছেন সেটাও ঐ ধারণার সহায়ক। এ ছাড়া এর আগে মাঝে কবি বাল্যকালে তাঁর দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে রেলগাড়িতে চড়ার শখে কুষ্টিয়া এসে তার পরে নদীপথে শিলাইদহে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে এসে জমিদারি পরিদর্শন করেন এবং সমুদয় ভার গ্রহণ করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে কবি কুষ্টিয়ায় পাট ব্যবসা শুরু করেন, আখমাড়াই কল সংগ্রহ করেন। শিলাইদহে তাঁত কারখানা, পান্টিতে সুতো-কাপড়ের হাট স্থাপন করেন। কবির উদ্যোগেই শিলাইদহে ‘বঙ্গলক্ষ্মী নাট্যসমাজ’ গঠিত হয়। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কবি শিলাইদহে পল্লী সংগঠনের পরিকল্পনা রূপায়ণ করেন, কুঠিবাড়িতে পুত্রকন্যাদের শিক্ষাদানের জন্য গৃহ-বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পল্লীপ্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষাদানের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের আদলেই পরবর্তীকালে (২২ ডিসেম্বর ১৯০১) কবি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয় অস্থায়ীভাবে শিলাইদহেও চলে।

সুদখোর মহাজনদের কবল থেকে কৃষকদের রক্ষার জন্য ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কবি শিলাইদহে কৃষিব্যাংক ও তাঁতশিল্প বিদ্যালয় স্থাপন করে বহুমুখী গ্রামোন্নয়ন শুরু করেন। কৃষিবিদ্যা শিক্ষালাভের জন্য কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় পাঠান এবং ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে রথীন্দ্রনাথ আমেরিকা থেকে শিলাইদহে ফিরে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ প্রবর্তন করেন। প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘বায়তের কথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ জমিদার হিসাবে মহাজনের কবল থেকে প্রজাকে রক্ষা করবার জন্য আজীবন কী করে এসেছেন, তা আমি সম্পূর্ণ জানি...রবীন্দ্রনাথ কবি হিসাবেও যেমন জমিদার হিসাবেও তেমন অনন্য।’

এই গ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছেন, ‘আমার জন্মগত পেশা জমিদারি। কিন্তু আমার স্বভাবগত পেশা আসমানদারি। এই কারণেই জমিদারির জমি আঁকড়ে থাকতে আমার অন্তরের প্রবৃত্তি নেই।... প্রজারা অন্ন জোগায়, আর আমলারা আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেয়- এর মধ্যে পৌরুষও নেই, গৌরব নেই।’

রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ১৮৯০-১৯১০। রবীন্দ্রনাথ পল্লীবাসী, শুধু পল্লীবাসী নন পল্লীহৃদয়ের অন্তঃপুরের অধিবাসী। সর্বপ্রথম তিনি সকলের সঙ্গে সমান হবার ব্রতেব্রতী। শিলাইদহে পদ্মা ও গড়াই নদীকে ভালবেসে- বিমুগ্ধচিত্তে ও অন্তর দিয়ে কবির লেখায় এ সবের ছাপ সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ১৮৮৯ সালে শিলাইদহ থেকে ‘ছিন্নপত্রের’ এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সন্ধ্যার সময়ই আমরা বেড়াতে বেরোই এবং সেই ছবিটাই মনে অঙ্কিত হয়ে আছে। পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দর, কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়।’ কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ প্রথমে ‘চিত্রা’ বজরায় নদীভ্রমণ করতেন। পরে তিনি জাপানি কারিগর দিয়ে বহু অর্থব্যয়ে পুননির্মাণ করেন তাঁর সুবিখ্যাত বজরা ‘পদ্মা’ এবং জমিদার রবীন্দ্রনাথ এই একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তাঁর সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত। এছাড়াও ‘চপলা’ ও ‘চঞ্চলা’ নামেও রবীন্দ্রনাথের দুটি বজরা ছিল।

পুত্র রথীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাবার গদ্য ও পদ্য দু’রকম লেখারই উৎস যেমন খুলে গিয়েছিল শিলাইদহে, এমন আর কোথাও হয়নি।’ কবির এখানে থাকার আন্তরিক ইচ্ছাকে আরো ঘনিষ্ট করে টেনে এনেছিল শিলাইদহ! অবশেষে ১৮৯২ সালে জমিদারির পূর্ণ ভারপ্রাপ্ত হয়ে এখানে থাকতে লাগলেন। জমিদারি পরিচালনার জন্য তিনশো টাকা মাসোহারা নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকেই সূচনা হল রবীন্দ্রনাথের কাব্য ও কর্মজীবনের এক অভূতপূর্ব যুগের বিকাশ। সাহিত্য সাধনা ও বিষয় সম্পত্তির তদারকীর অবসরে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক শোভা সৌন্দর্যের সঙ্গে পল্লীর মানুষগুলোর কথা তিনি গভীরভাবে ভাবতেন। রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ যুগে তাঁর কাছে দেশ ও জাতি পেয়েছে অপরিমেয় দান। শিলাইদহ অবস্থানকালে বহু বিখ্যাত ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে শিলাইদহে দেখা করেছেন আচার্য স্যার জগদীশচন্দ্র, কবি ও নাট্যকার ডি. এল. রায়, মানসী ও মর্মবাণী সম্পাদক মহারাজ জগদীন্দ্রনাথ রায়, দীনবন্ধু এন. ডব্লুজ, সিষ্টার নিবেদিতা, ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, শিল্পী নন্দলাল বসু, মুকুল দে, সুরেন্দ্রনাথ কর প্রমুখ সাহিত্যিক শিল্পীগণ।

১৯২২ সালে শিলাইদহের জমিদারি ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অংশে পড়ে। ঐ বছরেই কবিও শিলাইদহ ত্যাগ করেন। কিন্তু অল্প কয়েক দিন পরে যখন আবারো শিলাইদহে ফিরে আসেন তখন বিশ্বকবির বয়স ৬১! এটিই ছিল তাঁর শেষবার এবং শেষবারের ঐ একখানা চিঠিতে লিখেছেন, ‘শিলাইদহে ঘুরে এলুম। পদ্মা তাকে পরিত্যাগ করেছে, তাই মনে হল বীণা আছে তার নেই, তার না থাকুক অনেক কালের অনেক গানের স্মৃতি আছে। ভাল লাগলো, সেইসঙ্গে মন উদাস হলো।’ কবি পদ্মা নদীকে অত্যন্ত গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন, তাঁর অসংখ্য রচনায় সে চিহ্ন সুপরিস্ফুটিত; তেমনি পদ্মাচুম্বিত শিলাইদহের প্রতিও নিবিড় টান, যার দরুণ আবারো বারবার শিলাইদহ ঘুরে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

১৯৫১-১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গ সরকার এই জমিদারি অধিগ্রহণ করে। বাংলাদেশ হবার পর সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কুঠিবাড়িকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সরকারি পর্যায়ে ঘোষিত হয়েছিল কবিতীর্থ শিলাইদহে গড়ে তোলা হবে দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন। কবিতীর্থ শিলাইদহের এই গৌরবমণ্ডিত মর্যাদালাভের প্রত্যাশী দুই বাংলার মানুষ। রবীন্দ্রজীবনীকার শ্রীশচীন্দ্রনাথ অধিকারী ১৯৩৭ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন: ‘উত্তরায়ণের বারান্দায় কবি আত্মীয়স্বজন পরিবৃত হয়ে বসে আছেন। কবি কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে বসে রয়েছেন, দৃষ্টি যেন স্মৃতির রাজ্যে নিবন্ধ, একটি প্রশ্নেরও তিনি জবাব দিচ্ছেন না। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপনমনে বলে উঠলেন, ‘আর একবার শিলাইদহে গেলে বড়...।’ আর কথা শেষ করতে পারলেন না। জীবন সায়াহ্নের একখানি চিঠিতেও কবি হৃদয়ের অন্তহীন বেদনার রেখাচিত্র ফুটে উঠেছে, “সবই তেমনি আছে কেবল আমার চির পরিচিত পদ্মা শিলাইদহ ছেড়ে দুরে কোথায় চলে গেছে, তার আর নাগাল পাবার জো নেই।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্য-রস-সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ পল্লীতে।”

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

এসএ/

Header Ad

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের সোয়া এক ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টায় শনিবার (১৮ মে) বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর আগে শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, চারতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন লাগে।

সূত্রাপুর ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। কোনো হতাহতেরও খবর পাওয়া যায়নি।

টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই

বজ্রপাতে নিহত দুই ভাই। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মাঠে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- আফজাল হোসেন ও আমির হোসেন। তারা রংপুর জেলার উপজেলার চকদফরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই।

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার আউলিয়াবাদ বাজারে ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করতো। শনিবার (১৮ মে) ভোরে বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামের হযরত আলীর ধান ক্ষেতে তারা ৬ জন শ্রমিক ধান কাটছিল। এসময় বৃষ্টি শুরু হলে ধান ক্ষেত থেকে দৌড়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় আফজাল ও আমীরের ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়।

বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জানান, সকালে কয়েকজন শ্রমিক হযরত আলীর ক্ষেতে ধান কাটতে যান। এসময় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো চারজন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহাদাত হুসাইন জানান, ওই দুই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জেনেছি। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করাসহ মরদেহ স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মেসি-বার্সা চুক্তির সেই ন্যাপকিন বিক্রি হলো ১১ কোটি টাকায়

লিওনেল মেসি এবং সেই ঐতিহাসিক ন্যাপকিন। ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার প্রথম চুক্তি হয়েছিল যে ন্যাপকিন পেপারে, সেটা অবশেষে বিক্রি হলো নিলামে। ধারণা করা হয়েছিল এর দাম ৬ উঠতে পারে লাখ ৩৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।

তবে বিক্রির বেলায় দেখা গেল প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার ন্যাপকিন পেপারটি নিলামে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি ২৯ লাখ টাকা) বিক্রি হয়েছে। নিলামে ন্যাপকিন পেপারের ভিত্তিমূল্য ছিল ৩ লাখ ডলার।

লিওনেল মেসি এবং সেই ঐতিহাসিক ন্যাপকিন। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ নিলাম হাউস বোনহামসে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিলামে ন্যাপকিন পেপারের ভিত্তিমূল্য ছিল ৩ লাখ ডলার। ধারণা চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে এই নেপকিন পেপারটি।

আর্জেন্টাইন এজেন্ট হোরাশিও গ্যাগিওলি প্রথমে মেসির নাম সুপারিশ করেছিলেন। তার উপস্থিতিতে ন্যাপকিন পেপারে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। বোনহামস জানিয়েছে, ন্যাপকিন পেপারটি গ্যাগিওলির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি নিলামে যে দামে বিক্রি হয়েছে, সেখান থেকে একটি অংশ অনলাইন নিলামের প্রশাসনিক ফি হিসেবে দিতে হবে—এটি ‘ক্রেতার প্রিমিয়াম’।

লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহাসিক সেই ন্যাপকিন পেপার। বার্সার সঙ্গে মেসির প্রথম চুক্তিপত্র হিসেবে এই ন্যাপকিন পেপারকে বিবেচনা করা হয়।

১৩ বছর বয়সী মেসি এই ন্যাপকিন পেপারে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রায়ালের জন্য পরিবারের সঙ্গে বার্সেলোনায় যান মেসি। সঙ্গে ছিলেন দুই আর্জেন্টাইন প্রতিনিধি ফাবিয়ান সোলদিনি ও মার্তিন মনতেরো এবং গাজ্জোলি। ট্রায়ালে সবাইকে চমকে দেন মেসি। তাই চুক্তির আশা নিয়ে রোসারিওতে ফেরে তার পরিবার।

সেই সময়ের বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান গাসপার্ত অবশ্য হরমোনজনিত সমস্যায় ভোগা ১৩ বছর বয়সী একটি ছেলের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছিলেন। তাকে রাজি করানোর জন্য বার্সেলোনার তখনকার টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লো রেক্সাসকে চাপ দেন গাজ্জোলি ও মিনগেলা। শেষ পর্যন্ত চুক্তির কথা লেখা হয়েছিল ওই ন্যাপকিন পেপারে।

সর্বশেষ সংবাদ

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে
টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই
মেসি-বার্সা চুক্তির সেই ন্যাপকিন বিক্রি হলো ১১ কোটি টাকায়
এবার রাজধানীর ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন
কারওয়ান বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-বাতাসে রাজধানীতে স্বস্তি
সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল দুই শ্রমিকের, আহত ১১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
ভাঙা হাত নিয়েই ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ মাতালেন ঐশ্বরিয়া
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস, কমবে তাপপ্রবাহ
আচরণবিধি লঙ্ঘন: আ.লীগ নেতাকে জরিমানা, ৭ ডেগ খিচুড়ি জব্দ
সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
কেএনএফের নারী শাখার সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার
সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
দুধ দিয়ে গোসল করানো হলো মুক্ত নাবিক সাব্বিরকে, পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার
ট্যুরিস্ট ভিসায় ৩ দিন ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন না বাংলাদেশীরা
গোবিন্দগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার