ঢাকার ভেতরেই একদিনে ঘুরে আসুন ফুলের রাজ্যে থেকে
ছবি সংগৃহিত
বাংলাদেশে এমন বহু স্থান আছে যেখানে ছুটির দিনে অনেকেই ঘুরতে যান। সমুদ্রতীর, পার্ক ইত্যাদি ছাড়াও অনেকে আবার মনের মত খাওয়া দাওয়া করতেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান। তবে কেমন হয় যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীর তীর এবং ভালো খাওয়া দাওয়া একই স্থানে পাওয়া যায় ! ভাবলেই কত ভালো লাগে।
এমনই এক মনোরম স্থানের হদিস রয়েছে দেশের রাজধানীতে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এক জনপ্রিয় সময় কাটানোর জায়গা হল ঠিকানা রিসোর্ট, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বড় আকারের রেস্টুরেন্ট।
খোলামেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর চারদিক ঘিরে ফুটে থাকা হাজারো ফুলের সৌরভের কারণে ঠিকানা রেস্টুরেন্টটি এখন একটি রিসোর্ট হয়ে উঠেছে। পুরো রিসোর্টে গ্রামীণ শৈল্পিক ছোঁয়া, আকাশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য, বিভিন্ন সময়ে নানা রঙের সৌন্দর্য রয়েছে। তাছাড়া ঠিকানা রেস্টুরেন্টটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকাবাসীর কাছে প্রভূত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এই কারণেই প্রতিদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকেও এখানে অনেক মানুষ আসেন পরিবার বা বন্ধু- বান্ধবদের সাথে কিছু ভালো সময় কাটাতে। বলাই বাহুল্য যেকোনো সরকারি ছুটির দিন, এই রিসোর্টে ভিড় অনেক বেড়ে যায়। শীতের মরশুম জুড়ে পুরো রেস্টুরেন্ট এলাকা রং বাহারি ফুলে ভরে যায়, তাই এসময় ঠিকানা রিসোর্টের সৌন্দর্যও বেড়ে যায় বহুগুণ। ঠিকানায় মনোরম পরিবেশ অতিথিদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়, যা সামগ্রিক ছুটির অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ঠিকানায় থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা
ঠিকানায় থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঠিকানায় বিভিন্ন ধরনের দেশী বিদেশী খাবার পাওয়া যায়। এখানকার মেন্যুতে আছে বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও বেশ কিছু জনপ্রিয় দেশীয় খাবার। এখানে গিয়ে গ্রামীণ মাটির উনুনে (চুলায়) কিভাবে পিঠা তৈরি হয় তা দেখতে পারবেন, চাইলে আপনি উনুনের পাশের কুঁড়েঘরে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার আনন্দও নিতে পারেন, এছাড়া ঠিকানার নিজ ক্ষেতের সবজি ও মাছ খাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
তবে এগুলোর দাম একটু বেশি হবে। বলাই বাহুল্য, দেশি খাবার ছাড়াও ঠিকানায় রয়েছে নানা রকম বিদেশি সুস্বাদু খাবার। এছাড়াও ঠিকানায় রয়েছে একটি উন্নতমানের কফি শপ, যেখানে ব্রাজিলের বিন এনে কফি তৈরি করা হয়। তবে যাওয়ার আগে থেকেই টেবিল বুকিং করে নিতে হবে।রিসোর্টের মূল ভবনে পাশ্চাত্য স্থাপত্যের ছোঁয়া রয়েছে। পছন্দের খাবার খেতে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন এই রিসোর্ট থেকে।
ঠিকানা রিসোর্ট খরচ কেমন লাগে
ঠিকানা রিসোর্টে প্রবেশ করার জন্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে ফি দিতে হয়। কিন্তু কেউ যদি ৩০০ টাকার উপরে যে কোনো খাবার অর্ডার করে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রবেশ ফি লাগবেনা। খাবার না খেয়ে শুধু ঘুরাঘুরি করতে হলে ৩০০ টাকা ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এখানে খাবারের সর্বনিম্ন মেনুসেট ৬৫০ টাকা + ভ্যাট অর্থাৎ প্রায় ৭৫০ টাকা থেকে শুরু। এই ৬৫০ টাকার মেনু সেটের মধ্যে থাকবে ভুনা খিচুড়ি, বিফ ভুনা, অমলেট, বেগুন ভাজা, সালাদ, আচার এবং জল। কেউ চাইলে এর বাইরেও অন্য কিছু যোগ করতে পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
ঠিকানা ডে আউটারস এর সৌন্দর্য
বাড্ডা থানার ব্যারাইদ এলাকায় ঠিকানা ডে আউটারস অবস্থিত। এই রিসোর্টটি এক নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত। রিসোর্টটিতে অগণিত ফুল রয়েছে যা সারিবদ্ধভাবে সাজানো এবং এগুলো প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের আদলে তৈরি। এসব ছাড়াও রিসোর্টে বাচ্চাদের জন্য খেলার ব্যবস্থা আছে। তবে এই রিসোর্টে পোষ্য প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ।
এছাড়াও এখানে ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। ঠিকানা ডে আউটারস ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘরের নান্দনিক কারুকার্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর মূল ফটক থেকে শুরু করে পুরো রিসোর্টে গ্রামীণ শৈল্পিক ছোঁয়া রয়েছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই ঠিকানায় আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখতে পাবেন। “তায়্যেবা আফরিন” ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের স্বপ্নের ঠিকানা গড়ে তোলেন। তিনিই ক্যাফের ম্যানেজার এবং প্রতিষ্ঠাতা।
ঠিকানা রিসোর্ট কোথায় অবস্থিত
“ঠিকানা রিসোর্ট” ঢাকার গুলশান থেকে ২ – ৩ কলোমিটার দূরে মাদানি এভিনিউ, বড় বেরাইদ, বাড্ডা, বালু নদীর পাড়ে অবস্থিত। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর এই “ঠিকানা রিসোর্ট”-এ গিয়ে জন্মদিন, গায়ে হলুদ, বিবাহ সহ যে কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন, তবে এর জন্য আগেই বুকিং করে নিতে পারেন।
এছাড়াও শহরের কাছে পিঠে পরিবারের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এই রিসোর্টটির জুড়ি মেলা ভার। ঠিকানা রিসোর্ট এর আশেপাশের অঞ্চলের বিস্ময়কর দৃশ্য আপনাকে শহরের জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে এক মনোরম পরিবেশে বাঁচতে এবং আপনার মনকে সতেজ করে তুলতে সহায্য করবে।
ঠিকানা রিসোর্টে কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের ঢাকার নিউমার্কেট থেকে লেগুনা করে, বা উওর বাড্ডা থেকে অটো রিক্সা করে যেতে পারেন।
ঠিকানা রিসোর্টে প্রবেশের সময়
ঠিকানা রিসোর্ট প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ০৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই সময়ের মধ্যে আপনি যেকোনো সময় ঠিকানায় সময় কাটাতে যেতে পারবেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঠিকানায় আসার আগে আপনার এন্ট্রি বুকিং নিশ্চিত করতে, কল করুন বা এসএমএস পাঠান এই নাম্বরে – ০১৭৫৫৫৫৪৪৪৭ (কমপক্ষে ১ দিন আগে বুকিং নিশ্চিত করবেন)।
বুকিং ছাড়াও সরাসরি এসে টিকিট নিতে পারবেন। তবে সরকারি ছুটির দিনগুলতে ভিড় বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে ঠিকানা রিসোর্ট ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন : +৮৮ ০১৭৫৫৫৫৪৪৪৭ (বুকিং), +৮৮ ০১৭৫৫৫৫৪৪৪৮, +৮৮ ০৯৬৩৮২২৭৭০০। ইমেইল: thikanakk@gmail.com
ঠিকানা রিসোর্ট ঢাকার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা ঢাকা শহরের মানুষের নিকট একটি প্রিয় স্থান। রিসোর্ট প্রায়ই সব বয়সের জন্য উপযোগী সুবিধা এবং সেবা প্রদান করে। খাবার কিংবা ভ্রমণ যাই বলুন সবই পাবেন ঠিকানায়। আছে সুন্দর সবুজ পরিবেশ, তাই মানুষ অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে একটি সঠিক গন্তব্য এটি।