এই শীতে যেসব জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন
ছবি সংগৃহিত
শীতকাল মানেই ভ্রমণের শুরু। ভ্রমণপিপাসু মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই শীতকালের জন্য। কেননা এ সময় বাচ্চাদের শেষ হয়ে যায় ফাইনাল পরীক্ষা। বড়দের থাকে সেমিস্টার ব্রেক। আর চাকরিজীবীরা সারা বছরের ক্লান্তি শেষে একটু নিজের মতো সময় কাটাতে নেয় বার্ষিক ছুটি। সব মিলিয়ে শীতকাল ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আর এই উপযুক্ত সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে দরকার উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করা। শীতকালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গাগুলো সম্পর্কেই কথা বলব আমরা।
সুন্দরবন
শীতকালে ভ্রমণের জন্য সবার প্রথমেই আমার লিস্টে থাকবে পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। খুলনা, সাতক্ষীরা আর বাগেরহাট জেলার কিছু অংশজুড়ে রয়েছে পৃথিবীর অপার বিস্ময়ের এই বন। অরণ্যপ্রেমী ও ওয়াইল্ড লাইফ যাদের পছন্দ তাদের জন্য সুন্দরবন একটি আদর্শ জায়গা। সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ ছাড়া হরিণ, বানর, সাপ, কুমিরসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী ও পশুর অভয়ারণ্য। আমার ব্যক্তিগত মতামতে এতোসব কিছুর ঊর্ধ্বে সুন্দরবনের শব্দ সবার আগে স্থান পাবে। একটা পাতা পড়ার শব্দ, পানির শব্দ, বাতাসে গাছের শব্দ ও ছোট বড় খালগুলো আপনাকে নিয়ে যাবে এক নৈসর্গিক জাযগায়। তাই শীতকালে সুন্দরবন হতে পারে আপনার ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জায়গা।
সেন্টমার্টিন
পাহাড় না সমুদ্র? এই প্রশ্নের জবাবে কারো যদি ভোট আসে সমুদ্র, তাহলে তার অবশ্যই সেন্ট মার্টিন যাওয়া উচিত। সারি সারি নারিকেল গাছ, নীল আকাশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নীল জলরাশি ও প্রবাল পাথরের অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দেশের একমাত্র দ্বীপ এটি। অনেকে সমুদ্র বলতে কক্সবাজার ছুটে যান। কিন্তু আমার মতে যদি সমুদ্রের প্রকৃত ফিল পেতে চান তাহলে অবশ্যই সেন্টমার্টিন যান। এ ছাড়া সমুদ্র উত্তাল থাকে বলে অন্য সময় সেন্ট মার্টিন যাওয়া যায়ও না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সেন্ট মার্টিন যাওয়ার উপযুক্ত সময়। মাত্র ১৬ কিলোমিটার দ্বীপটি বৈচিত্র্যতার আধারে ঘেরা। স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকা, জেলেপাড়া, ও শুঁটকিপল্লীর পর্যবেক্ষণ ভ্রমণের আনন্দটা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ।
সাজেক
মেঘ পাহাড়ের মিতালির অপার বিস্ময় সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশের মানুষের ভ্রমণের লিস্টে কক্সবাজারের পরেই থাকে সাজেক। যাদের পাহাড় পছন্দ তারা অবশ্য শুরুতেই রাখবেন সাজেককে। চারপাশের অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মতো মেঘ আপনাকে হারিয়ে নিয়ে যাবে এক অন্য ভুবনে। যেখান থেকে আপনি ছুঁয়ে দেখতে পারবেন মেঘমালা।
কুয়াকাটা
কুয়াকাটাকে বাংলাদেশের সাগরকন্যা হিসেবে ধরা হয়। কেননা এটি এমন এক বিশেষ স্থান যেখান থেকে দেখা মেলে একই সঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। এ ছাড়া সমুদ্রের নীরব রূপ ও মানুষের কোলাহল থেকে মুক্ত থাকতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বিকল্প নেই। পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, দিগন্তজোড়া সমুদ্রসৈকত, সুনীল আকাশ ও সঙ্গে বেনাস হিসেবে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
কক্সবাজার
কক্সবাজার পৃথিবীর সবচেয়ে র্দীঘতম সমুদ্রসৈকত। শুধু এই লাইনের প্রচারেই দেশি বিদেশি লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন এই সমুদ্রসৈকতে। শীতকালে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা তুলনামূলক কম ঠান্ডা থাকে। তাই যারা সাগর পছন্দ করেন তারা সাগরপাড়ের এই বিশাল ঢেউয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে আসতে হবে এখানে।
সিলেট
বাংলাদেশে শীতকালে ঘোরাঘুরি নিয়ে কথা উঠলে সিলেট অবশ্যই থাকবে। ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্যের নাম সিলেট। উঁচু উঁচু পাহাড়, চা বাগান আর অসংখ্য ঝরনাধারা নিয়ে শীতকালে ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা সিলেট। রাতারগুল, শ্রীমঙ্গল, জাফলং, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, তামাবিল সিলেটের কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা। এ ছাড়া আরও অনেক চমৎকার জায়গা প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য দিয়ে ঢেলে দিয়েছে সিলেটের বুকজুড়ে। যেখানে গেলে মন জুড়িয়ে যেতে বাধ্য। শীতে অসংখ্য অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায়। আর এই অতিথি পাখি দেখতে বৃহত্তর সিলেট বিভাগেই পড়েছে হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো পছন্দের জায়গা। শীতকালীন ছুটি উপভোগ করার জন্য তাই এই সিলেট হতে পারে চমৎকার এক গন্তব্য।
বান্দরবান এবং রাঙামাটি
রাঙামাটি আর বান্দরবানের পাহাড়চূড়া মানেই সেখানে মেঘদের বসতি। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মেঘ ছুয়ে দেখার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সাকা হাফং, দামলং আর কেওক্রাডংয়ের মতো উচ্চতম পয়েন্টগুলোর দেখা মিলবে এই দুটি জেলায়। এত দিন ধরে এসব অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গা ছিল অপ্রকাশিত, যার বেশির ভাগই এখন ধরা পড়েছে পর্যটকদের চোখে। এই দুই জেলায় আছে বেশকিছু পাহাড়ি ঝরনা, মন্দিরসহ দর্শনীয় স্থান, যা আপনাকে বার বার আপ্লুত করবে।