ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করবে মোবাইল অপারেটররা
ফাইল ছবি
ফোর-জিসহ উচ্চ গতির ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড চালু করবে মোবাইল অপারেটররা। প্রথমে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পরে আবাসিক গ্রাহকেরা পাবেন এই সেবা। আগামী সপ্তাহেই অপারেটরদের লাইসেন্স দিতে পারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
তবে আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোবাইল অপারেটররা ব্রডব্যান্ড চালু করলে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাদানকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস বা তারবিহীন ব্রডব্যান্ড সেবা চালুর অনুমতি দিতে যাচ্ছে বিটিআরসি। এটি চালু হলে তারের ঝামেলা ছাড়াই উচ্চ গতির ফাইভ-জি ব্রডব্যান্ড সেবা পাবেন গ্রাহকেরা।
জানা গেছে, সিম ভিত্তিক রাউটার দিয়ে মোবাইল অপারেটররা ওয়াই-ফাই সেবা দিতে পারবে। শিগগিরই অপারেটরদের হাতে নতুন লাইসেন্স তুলে দেবে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার দেখেছি। প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো বিষয় কমপ্লাই করেছে। আশা করি অনুমোদন পেতে তাদের কোনও সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সিম বেজড রাউটার এলে তারহীন ওয়াই-ফাই সেবা পাওয়া যাবে। ব্যবহারকারী বাসা, অফিসের যেখানে থাকবেন সেখানেই রাউটার রেখে কাজ করতে পারবেন। ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ওয়াই-ফাই (আইএসপি) ও ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড (মোবাইল ইন্টারনেট) মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু হবে না। দুটো দুই ধরনের সেবা। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান এটা দেবে। মোবাইল ফোন অপারেটররা আগে এই সেবা দিতে পারতো না। ইউনিক লাইসেন্সে (এক লাইসেন্সের অধীনে সব লাইসেন্স) এই সুযোগ দেওয়া আছে। ফলে মোবাইল অপারেটররা এই সেবা দিতে পারবে।
দেশে টিপিলিংক-সহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের সিম বেজড রাউটার রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন সিম বেজড রাউটার তৈরির জন্য বিটিআরসির কাছে অনুমোদন চেয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী ভুঁইয়া জানান, আমরা উৎপাদনকারী হিসেবে সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার তৈরি করার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেছিলাম। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিটিআরসির ফ্যাক্টরি ভিজিট ছিল। যেসব বিষয় বিটিআরসির শর্ত ছিল আমরা সেসব কমপ্লাই করেছি। আশা করছি সিম বেজড ওফাই-ফাই রাউটার উৎপাদনের অনুমোদন পাবো। এটাই হবে দেশীয় সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ মার্চ বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে ইউনিক লাইসেন্স হস্তান্তর করবে। ১৫ বছরের জন্য দেওয়া হবে এই লাইসেন্স। এই একটি লাইসেন্স নিলে অপারেটরগুলোকে আলাদা কোনও লাইসেন্স (টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জির জন্য আলাদা লাইসেন্স) নিতে হবে না। একটি লাইসেন্স নিলে সেই লাইসেন্স সব কিছু কাভার করবে। এমন কী ফাইভ-জি বা তার পরে আরও যেসব প্রযুক্তি সেবা আসবে তার কোনও আলাদা কোনও লাইসেন্স নিতে হবে না অপারেটরগুলোকে। সেই ইউনিক লাইসেন্স বা ইউনিফায়েড লাইসেন্সের গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরগুলোর জন্য এফডাব্লিউএ (ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস) সেবাদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোও এই সেবা দিতে পারবে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, আমরা নতুন লাইসেন্স হাতে পাই। লাইসেন্স পেলে আমরাও ধীরে ধীরে এই সেবা চালু (ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড) করবো। এই সেবা এফডাব্লিউএ (ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস) সেবা হলো ফাইভ-জি অথবা ফোর-জি, এলটিই ওয়্যারলেস প্রযুক্তি।
নতুন এই সেবা আইএসপিগুলোর (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ব্রডব্যান্ড সেবার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক জানান, এ জায়গায় আমাদের আপত্তি আছে। ইউনিক লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বারবার বলা হয়েছে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের (আইএসপি ব্যবসায়ী) সুরক্ষা দেওয়া হবে। মোবাইল অপারেটররা যদি সিম বেজড রাউটারের মাধ্যমে ওয়াই-ফাই সেবা দেয় তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হলো? তিনি জানান, শিগগিরই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সঙ্গে বসবেন। বিষয়টির সুরাহা না হলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ঝুঁকিতে পড়বেন।