যা থাকছে রেড ম্যাজিক এইট প্রো ও এইট প্রো প্লাসে
বর্তমান বিশ্বজুড়ে চলছে মোবাইল ভিত্তিক গেমিং ট্রেন্ড। গেমিং ফোনের বাজারে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দিন দিন বাড়ছে গেমারের সংখ্যা। বাড়ছে আকর্ষণ-উত্তেজনা। এর সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে একের পর এক আসছে নতুন সব গেমিং ফোন। ফোন কোম্পানিগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে আধুনিক ফিচারসহ গেমিং ফোন বাজারে ছেড়ে হাইপ তৈরী করছে। গেমপ্রিয় নেটিজেনদের প্রধান আকর্ষণের বস্তু একটি গেমিং স্মার্টফোন। গেমিং স্মার্টফোনগুলোর বৈশিষ্ট্য অন্য আর দশটা সাধারণ স্মার্টফোনগুলোর চাইতে আলাদা। এসব ফোনে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর ও র্যাম ব্যবহার করা হয়। ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয় হাই রিফ্রেশ রেটের একটি বড় মনিটর। যাতে গেমিং হয় মসৃণ ও বাধাহীন। তাই এসকল স্মার্টফোনের মূল্য তুলনামূলক বেশি হয়।
গেমিং স্মার্টফোন ট্রেন্ডে অপর এক লিজেন্ড জেডটিই (ZTE) এর নুবিয়া রেড ম্যাজিক। এশিয়া মহাদেশে এই স্মার্টফোনের তেমন কদর না থাকলেও বিশ্ব বাজারে গেমারদের কাছে এর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ডিজাইন এবং আউটলুকের ক্ষেত্রে রেজ ম্যাজিক বরাবরই অনন্য। গেমিং স্মার্টফোন ট্রেন্ডের শুরুর দিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে নুবিয়া রেড ম্যাজিক বাজারে ছাড়ে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেডটিই। তারপর গেমিং ক্যাটাগরিতে ৫ বছরে ৪টি সিরিজে ১৫ টি মডেলের স্মার্টফোন বাজারে ছেড়েছে জেডটিই। নুবিয়া রেড ম্যাজিক সিরিজের সর্বশেষ সংযোজন রেড ম্যাজিক এইট প্রো ও এইট প্রো প্লাস। গেল বছরের ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববাজারে স্মার্টফোন দুটো উন্মুক্ত করে জেডটিই।
দুটো স্মার্টফোনেই প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের সর্বাধুনিক চার মিলিমিটার প্ল্যাটফরমের এইট জেন টু চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটির কার্যক্ষমতা ৩.২ গিগাহার্জ। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাড্রিনো ৭৪০। এখন পর্যন্ত কোয়ালকমের নতুন এই প্রসেসর ব্যবহার করা একমাত্র গেমিং স্মার্টফোন রেড ম্যাজিক এইট প্রো ও এইট প্রো প্লাস। ফোন দুটো চলবে অ্যান্ড্রোয়েড থারটিন অপারেটিং সিস্টেমে আর ইউজার ইন্টারফেস বা ইউআই থাকছে রেডম্যাজিক ওএস ৬। দুটো ফোনের স্টোরেজে ব্যবহার করা হয়েছে ইউএফএস ফোর টেকনলজি।
রেড ম্যাজিকের বেসিক ও প্রো সিরিজের মধ্যে মূল পার্থক্য হয় ব্যাটারি, ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ও সেলফি ক্যামেরায়।
নুবিয়া রেড ম্যাজিক এইট প্রো তে সহায়ক হিসাবে থাকছে ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত র্যাম। আরও থাকছে ১২৮ থেকে ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধা। এই ফোনটি পাওয়া যাবে ৮/১২৮; ৮/২৫৬; ১২/২৫৬ ও ১৬/৫১২ চারটি ভ্যারিয়েন্টে।
অপরদিকে রেড ম্যাজিক এইট প্রো প্লাসে সহায়ক হিসাবে থাকছে ১২ ও ১৬ গিগাবাইট র্যাম। আরও থাকছে ২৫৬ গিগাবাইট থেকে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধা। এই ফোনটি পাওয়া যাবে ১২/২৫৬; ১২/৫১২ ও ১৬/১টিবি তিনটি ভ্যারিয়েন্টে।
দুটো ফোনে একই ডিসপ্লে মডিউল ব্যবহার করা হবে। ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হবে ১ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড ৬.৮ ইঞ্চির অ্যামোলেড মনিটর। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১১১৬বাই২৪৮০ (ফুল এইচডি প্লাস)। ডিসপ্লে অপারেট করা যাবে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হবে কর্নিং গরিলা গ্লাস ফাইভ। তবে এক্ষেত্রে কর্নিং গরিলা গ্লাসের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক সংস্করণ গরিলা গ্লাস ভিক্টাস ব্যবহার করলে তা আরও বেশি সমৃদ্ধ হতো।
বরাবরের মতোই দুটো ফোনের পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে থাকছে ৩টি ক্যামেরা এবং একই ক্যামেরা সেটাপ। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৯ অ্যাপারচারের ৫০ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৫ মিলিমিটার ওয়াইড। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.২ অ্যাপারচারের ৮ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১৩ মিলিমিটার ও ১২০ ডিগ্রি আল্ট্রাওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৪ অ্যাপারচারের ২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ম্যাক্রো। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকছে ২ অ্যাপারচারের ১৬ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর। সেলফি ক্যামেরা গুলো ডিসপ্লের আড়ালে থাকবে যা বাহির থেকে বোঝা যাবে না। এর আগে রেড ম্যাজিক সেভেন সিরিজের স্মার্টফোনগুলোতে আন্ডার ডিসপ্লে সেলফি ক্যামেরা অর্থাৎ অদৃশ্য ক্যামেরার ব্যবহার শুরু করে জেডটিই।
বরাবরের মত দুটো ফোনেই সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকছে স্টেরিও স্পিকার এবং ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক। আলাদা মেমোরি কার্ড স্লট থাকছে না কোনো ফোনেই। দুটো ফোনই অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের। রেড ম্যাজিক এইট প্রো এর ওজন ২২৮ গ্রাম এবং এইট প্রো প্লাস এর ওজন ২৩০ গ্রাম।
এইট প্রো স্মার্টফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি এবং এইট প্রো প্লাস স্মার্টফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি। এইট প্রো স্মার্টফোনটি ৬৫ ও ৮০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড এবং এইট প্রো প্লাস স্মার্টফোনটি ১৬৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। ফোনের সুরক্ষায় দেওয়া হবে আন্ডার ডিসপ্লে অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। এর পাশাপাশি দুটো ফোনেই গেমিং এর জন্য প্রেশার সেনসিটিভ এয়ার ট্রিগার তো থাকছেই।
রেড ম্যাজিক প্রো ভ্যারিয়েন্টের এক বিশেষ সংযোজন ছিল ফিজিক্যাল এয়ারকুলিং সিস্টেম। এর সিক্স সিরিজ থেকে একটি কুলিং ফ্যান প্রসেসরের হিট অ্যাবজরব করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবারের মডেলেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। ফোন দুটো পাওয়া যাবে কালো ও স্বচ্ছ দুটো এডিশনে।
নুবিয়া রেড ম্যাজিক এইট প্রো-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ ইউএস ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা আর এইট প্রো প্লাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬০ ইউএস ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশে জেডটিই স্মার্টফোনের অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর না থাকায় বাংলাদেশে কখনোই অফিশিয়ালি এই স্মার্টফোন আসবে না।
/এএস