কর্মী ছাটাই করছে ‘টুইটার’ ও ‘মেটা’
কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই বিশ্বের অন্যতম সেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টুইটার’ তাদের নতুন মালিক ইলন মাস্কের সময়ে ৪ হাজার ৪ শ থেকে ৫ হাজার ৫ শ’রর বেশি চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাই করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টুইটার থেকে তাদের বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য মাস্কের আগ্রাসী প্রক্রিয়ার অন্যতম নজির এটি। অন্য গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস এবং সিএনবিসি দাবি করেছে, তাদের কোনো ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয়নি।
মার্কিন সিএনবিসি খবর প্রকাশ করেছে, চলে যাওয়া এই প্রযুক্তিভিত্তিক শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কেবল অনুমান করতে পেরেছেন যে, তাদের স্টক মাকেটে অবস্থান চলে যাওয়া এবং কর্ম পরিবর্তনের শিকার হয়েছেন তারা।
এই কর্মীদের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ ভারতের চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও রয়েছেন। তাদের কাছে পাঠানো প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল এবং বিজনেস ইনসাইডারের সেটি পাওয়া থেকে জানা গিয়েছে, টুইটার বলেছে তাদের চাকরি বাতিল করা ‘প্রতিষ্ঠানকে নুতন নির্বাহী আদেশে পুর্ণগঠন ও অনুশীলনের সঞ্চয়’ কার্যক্রমে অংশ।
সিএসবিসিকে সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, টুইটারের ভেতরের যোগাযোগ দলকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তাদের প্রধান ইলন মাস্ক ৪ হাজার ৪ শ কোটি টাকায় টুইটার কেনার পর থেকে তার বিচারে অপরিমেয় কর্মীদলকে কমানোর বিষয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন।
সামান্যতম জানার সুযোগ না দিয়ে বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটি অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করেছে। তবে গেল সপ্তাহে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘এই কাজ খুব দ্রুত বাড়ছে।’
তিনি কথাটি বলেছেন, তাদের এত বিপুল কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পরদিন। আর টুইটারে এসেই মাস্ক দ্রত সিইও পরাগ আগারওয়ালকে ছাঁটাই করেছেন। চাকরি বাতিল করেছেন প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নেড সেগালকে। এরপর তিনি চাকরি খেয়েছেন আইনি, বিশ্বাস ও নিরাপত্তা নীতিমালা বিভাগের প্রধান ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিজয়া গাড্ডিকেও।
এরপর চলে যাচ্ছেন কনটেন্ট মডারেশন বিভাগের প্রধানও। মাস্ক বিশ্বের অন্যতম ও প্রধান কার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানকে কর্মী দেউলিয়াত্বের দিকেও কঠোরভাবে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে গেল সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টেসলার মালিক তার কর্মীদের সামনের কঠিন দিনগুলোর জন্য ‘একজোট হতে’ বলেছেন।
সিএনবিসির পাওয়া এই ই-মেইলে তিনি আরও চেয়েছেন, অন্তত ৪০ ঘন্টা সপ্তাহে কাজ করবেন এমন একটি অফিসে তিনি তাদের দেখতে চান। তিনি টুইটারের ব্যবসায় মডেলটিও বদলে ফেলতে ইচ্ছুক। সেখানে অন্তত অর্ধেক আয় আনতে চান যারা টুইটারের সদস্য হবেন, তাদের কাছ থেকে।
বাকি টাকা আনবেন বিজ্ঞাপনের আয় থেকে। তবে সদস্য নয় বিজ্ঞাপনের দিকেই হয়তো তাকে নিয়মানুসারে মনোযোগ দিতে হবে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। টুইটারের এই বিপুল কর্মীকে বাতিল করে দেওয়াতে ‘সিলিকন ভ্যালি’তে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। উত্তর ক্যালিফোনিয়ার এই অঞ্চলটি বিশ্বের উচ্চতম প্রযুক্তি ও আবিষ্কারের কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে তাদের মাথায় হাত পড়েছে টুইটারের প্রতিপক্ষ ফেসবুকের মাতৃ-প্রতিষ্ঠান মেটা বিপুল মাত্রায় কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়ায়।
প্রযুক্তিগত সুবিধা ফেসবুককে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩ শতাংশ বা ১১ হাজার কর্মীকে বাড়ি চলে যেতে বলার ঘোষণা করেছে। এই বিষয়ে মেটা এবং ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ‘আমরা মেটার ইতিহাসে যে পরিবর্তনগুলো করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন একটি করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, মহামারি কভিড-১৯ রোগের মধ্যে তাদের বিপুল কর্মী ভাড়া করতে হয়েছে। তবে পরে তারা উপলব্ধি করেছেন, এই অতি গজন করা লোকবল স্থায়ী হবে না।
ওএফএস/