অনলাইনে কোনো কিছু ডিলিট হয় না?
বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, তাদের ডিজিটাল জীবনে যে, তারা ইন্টারনেটে তাদের দেওয়া পোস্টগুলো ডিলিট করে দিতে পারেন। তারা পছন্দের যেকোনো সার্ভিসে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ম্যাসেজগুলো পরিষ্কার করতে পারেন। তবে তাদের এই মনের আনন্দকে এই সপ্তাহে একটি টেকনোলজি শুনানি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
পাইটার সি জাটকো, যিনি ‘মার্জ’ নামে বহুল পরিচিত, টুইটারের সাবেক সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান, মার্কিন সিনেটের একটি কমিটিকে বলেছেন মঙ্গলবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিশ্বস্তভাবে যে ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্টগুলো ক্যানসেল করেছেন সেই তথ্যগুলোকে তারা মুছে দিতে পারে না। আকস্মিকভাবে প্রথম ফাঁসকারী হিসেবে একটি শুনানীর বিশদ বিবরণের সময় তিনি এই তথ্যটি দিয়েছেন।
সেই সংবাদটি প্রথম প্রকাশ করেছে সিএনএন আর গেল মাসে ছাপিয়েছে দি ওয়াশিংটন পোস্ট।
মার্জ সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে টুইটারে তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ে স্বাক্ষ্যদানের সময় বলেছেন, টুইটার বিশ্বস্তভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্যগুলো ডিলিট বা মুছে ফেলতে পারে না কোনো, কোনো ক্ষেত্রে। এর কারণ হলো, তারা তথ্য অনুসরণের পথটি শেষ পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।
মার্জের এই অভিযোগগুলোর বিপক্ষে টুইটার ব্যাপকভাবে প্রতিরোধ করেছে। বলেছে, তার ফাঁস করা বিষয়গুলোতে রঙ মাখানো হচ্ছে ও কম্পানির বিষয়ে একটি মিথ্যা বিবরণ প্রদান করছেন তিনি।
সিএনএনের এই বিষয়ের প্রশ্নগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি সাড়া দিয়েছে। তারা বলেছেন, তাদের একটি ডিলিট কর্মপ্রক্রিয়া আছে এবং নিজস্ব কর্মধারায় তারা একটি জায়গা থেকে কাজ করেন। তবে সাধারণত তারা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন কী না এই বিষয়ে বলেননি।
যখন মার্জের অভিযোগগুলো সবাইকে আশ্চর্য করে চলেছে, সান্ড্রা ম্যাটসের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের তথ্যগুলো অনলাইনে শেয়ার করি। বলেছিলেন, ‘এটি খুব সামান্য শব্দ করে। তবে যখন আপনি সেখানে তথ্য রাখবেন, কখনো আশা করবেন না এই তথ্যগুলো আর ব্যক্তিগত থাকবে।’ ম্যাটস একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গবেষক ও কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের একজন অধ্যাপক।
‘ইন্টারনেট থেকে কোনোকিছু প্রত্যাহার করতে রিসেট বাটনে আঘাত করা হলেও সেটি প্রায় অসম্ভব’, তিনি বলেছেন। আমাদের তথ্যগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজি ধরলেও এবং আমাদের সেটি ডিলিট করার ক্ষমতা আছে বলে আত্মবিশ্বাস থাকলেও এ বিষয়ে কোনোদিনও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এর আগে কোনো শুনানি হয়নি।
এই বিষয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন সবাই মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ‘রো ভার্সেস ওয়েড’ মামলায় উল্টো রায় দেওয়ার ফলে জুন মাসে। এখন সেখানে এই ধরণের ইতিহাসগুলো নিয়ে আলাপ ও কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা তৈরি হয়েছে।
এমনও বলা হয়েছে, লোকেশন ডাটা, এসএমএস বা টেক্সট ম্যাসেজসহ আরো অনেকগুলো সুবিধা কাজ করে সেই মানুষগুলোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, যারা অনলাইনে তথ্যগুলো বাতিল করে দেওয়ার সুযোগগুলোর তথ্য জানতে চান।
এর মধ্যে জুলাই মাসে ফেসবুকের মাতৃপ্রতিষ্ঠান মেটা কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণের দিকে ধাবিত হয়েছে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠানো এবং নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের একজন কিশোর ও তার মায়ের বিপক্ষে একটি বেআইনি কাজের মামলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যবহার করায়। তবে সেখানে কোনো ইঙ্গিত ছিল না যে, কোনো একটি ম্যাসেজ আগে ডিলিট করা হয়েছিল কী না।
ফলে ম্যাসেজ ডিলিটের সাধারণ ব্যবহারকারীদের সুবিধার প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ের গবেষক রবি সেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অন্যান্য গ্রুপগুলোকে এই বিষয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট বা বিশেষ ক্ষেত্রে ঠিক ধরণের টুলগুলো ব্যবহার করার সুযোগ থাকলে এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলে কোনো, কোনো ক্ষেত্রে ডিলিট করা তথ্যগুলো উদ্ধার করা যায়।’ তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘অনেক মানুষ জানেন না তাদের তথ্যটি কোথায় গিয়ে থামে সেই প্রক্রিয়াটিই। যেকোনো পোস্ট সেটি একটি ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কমেন্ট বা ডিলিট করা ম্যাসেজ সাধারণত ব্যবহারকারীর ডিভাইসে সেইভ হয়ে যায়। থাকে সেভাবে গ্রহণকারীর ডিভাইসে এবং কম্পানিটির সার্ভারে, যাদের প্ল্যাটফর্ম আপনি ব্যবহার করেন। আদর্শগতভাবে যে ব্যবহারকারী কনটেন্টটি তৈরি করলেন, তিনি যদি সেটি ডিলিট করেন, তাহলে এই তিনটি স্থান থেকে সেটি চলে যাবার কথা। তবে সাধারণত তত সহজে সেটি হয় না। আপনি যদি কম্পানিটি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন এবং তাদের সার্ভারগুলো থেকে আপনার তথ্যটি ডিলিট করতে বলেন, তাহলে সেটি অবশ্যই ঘটতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যায় না।’
ফলে আপনার অনলাইন তথ্যকে নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যে প্রাথমিক অ্যাপসগুলো ব্যবহার করা, যারা একের পর এক তথ্যকে জোড়া লাগানোর কাজ করে বা তথ্যভিত্তিক অ্যাপস হিসেবে ব্যবহৃত হয়-এই কথাটি বলেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তারা আরো বলেছেন, আরেকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ক্লাউড ব্যাকআপ সেটিংসকে ম্যানেজ করা। তাতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কোনো জায়গায় ব্যবহার করা হবে না নিশ্চিত করা।
মার্জ বলেছেন, ‘তবে যখন কোনো একজন ব্যবহারকারীর সব ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাই শেষ সীমায় এসে পৌঁছায়, আপনি কোনো কিছু অনলাইনে দিলে তখন আসলে আপনার নিয়ন্ত্রণ হারালেন। এখন টুইটার এখন পোস্টগুলোকে ডিলিট করে বা আপনি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলেন, এর মধ্যেই কোনো একজন কোথাও আপনার পোস্টটি কপি করলেন হয়ে যেতে পারে।’
ম্যাটস এজন্য সুপারিশ করেছেন, মানুষকে বড় টেকনোলজিভিত্তিক প্লাটফর্মগুলোতে কোনো কিছু শেয়ার করার সময় আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে। তিনি মনে করেন, অনলাইনে মোটের ওপর সতর্কভাবে চলতে হবে। শেষে বলেছেন, ‘কেবল ধারণা করা যায় যে, আপনি সেখানে যা কিছু রাখলেন, অন্যের দ্বারা ব্যবহার হতে পারে, অনন্তকাল সেখানে থাকতে পারে।’
(সিএনএন অবলম্বনে)