বড় ইমেজ সেন্সরে গো প্রো হিরো ইলেভেন ও ইলেভেন মিনি
চলছে প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগ। আর এই যুগে ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমের কল্যাণে পুরো পৃথিবীর স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র এখন মানুষের চোখের সামনে। হোক সেটা আকাশে মেঘের উপরের চিত্র বা গভীর সমুদ্রের তলদেশের চিত্র। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের ভিডিওচিত্র মানুষ দেখতে পাচ্ছে হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনে। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে একটি ছোট ক্যামেরার মাধ্যমে। যাকে বলা হচ্ছে অ্যাকশন ক্যামেরা।
মানুষ বরাবরই নিজেকে প্রকাশ করতে উৎসাহী। প্রাত্যহিক জীবনের ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলো ভিডিওচিত্রে ধারণ করে রাখা এখন রীতিমতো একটা ট্রেন্ড। গ্লোভাল ভিলেজের যে ধারণা একটা সময় কেবল পরিকল্পনা ছিল তা আজ বাস্তব। মটো ভ্লগার, ট্যুরার, এক্সপ্লোরার, ডিপ সি ডাইভারসহ বহুমুখী ফ্রিল্যান্সরা এসব ঘটনা নেটিজেনদের সামনে তুলে আনছেন। আর নেটিজেনরাও এসব ভিডিওচিত্র দেখে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছেন। যেই মানুষটি জীবনে কখনো সমুদ্রে যাননি সেই মানুষটিও এখন ভিডিওচিত্রের কল্যাণে সমুদ্রের তলদেশের ভিডিও দেখতে পারছেন। আর তা যদি হয় অ্যাকশন ক্যামেরার ভিডিও তাহলে তো কথাই নেই। দর্শকের কাছে মনে হয় তিনি নিজেই ভিডিও চিত্রের স্থানে উপস্থিত আছেন।
মূলত অ্যাকশন ভিডিও ক্যামেরার লেন্স স্বাভাবিক ক্যামেরার লেন্সের চেয়ে অধিক প্রশস্থ হয়। যা অনেক বড় এরিয়ার চিত্র ধারণ করে। আমরা খালি চোখে যা দেখি একই ধরনের চিত্র তুলে আনতে পারে অ্যাকশন ক্যামেরা। ফলে এই ক্যামেরায় ধারণকৃত চিত্র অধিক বাস্তব মনে হয়। তা ছাড়া এই ক্যামেরা আকৃতিতে অতি ক্ষুদ্র, সহজে বহনযোগ্য ও আঘাত সহনশীল হওয়ায় এটি ব্যবহারে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। কিছু কিছু অ্যাকশন ক্যামেরা এতটাই পানি নিরোধক হয় যে সমুদ্রের গভীর তলদেশেও কর্মক্ষম থাকে। এই ক্ষুদ্র ক্যামেরাগুলোর ভিডিওচিত্র যে কোনো প্রফেশনাল ক্যামেরার উচ্চ মানের ভিডিওচিত্রকেও হারিয়ে দিতে সক্ষম।
অ্যাকশন ক্যামেরার জগতে সর্বাধিক বিক্রিত ও সর্বোচ্চ জনপ্রিয় কোম্পানি গো-প্রো। ২০০৫ সাল থেকে অ্যাকশন ক্যামেরার উদ্ভাবন ঘটানো এই কোম্পানি ২০২১ সালে সর্বশেষ বাজারের ছাড়ে গো-প্রো হিরো টেন। তাদের এই মডেলটি বাজারে যথেষ্ঠ সাড়া ফেলেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অ্যাকশন ক্যামেরার নতুন মডেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিল তারা। অর্থাৎ বাজারে আসছে গো-প্রো হিরো ইলেভেন ও ইলেভেন মিনি।
পূর্বের গো-প্রো হিরো টেন এর ডিজাইনের সঙ্গে ইলেভেনের তেমন কোনো পার্থক্য থাকছে না। আকৃতিও একই থাকছে। পার্থক্য থাকছে ক্যামেরা সেন্সরে। হিরো টেনে ছিল ২৩.৬ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর। তার পরিবর্তে হিরো ইলেভেনে দেওয়া হয়েছে ২৭ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর এবং লেন্স আগের চেয়েও প্রশস্থ। ফ্রন্ট মিনি ডিসপ্লে ও মেইন এলসিডি ডিসপ্লে একই থাকছে।
অপরদিকে গো-প্রো হিরো টেন বোনস এর মতই হিরো ইলেভেন মিনিতে থাকছেনা কোনো ডিসপ্লে। তবে বোনস এ ১৯.৬ মেগা পিক্সেল ইমেজ সেন্সর থাকলেও ইলেভেন মিনিতে থাকছে ২৪.৭ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর। গো-প্রো দাবি করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে আঘাত সহনশীল অ্যাকশন ক্যামেরা ইলেভেন মিনি। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইলেভেন মিনির কার্যক্ষমতা অক্ষুণ্ন থাকবে।
দুটি ক্যামেরাতেই থাকছে হাইপার স্মুদ ৫ টেকনলজি। যা ভিডিও চিত্রকে করবে সুপার স্টেবল ও নয়েজ ফ্রি। ভিডিও ধারণ করা যাবে ৫.৩ কে (5.3k) রেজুলেশনে। দুটি ক্যামেরাই পানির ৩৩ ফুট বা ১০ মিটার গভীরেও সচল থাকবে।
গো-প্রো এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে হিরো ব্ল্যাক ইলেভেনের দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৫৪৯ ইউএস ডলার বা ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা। তবে গো-প্রো সাবসক্রিপশন থাকলে দাম পড়বে ৩৯৯ ইউএস ডলার বা ৪১ হাজার ৭০০ টাকা। ইলেভেন ব্ল্যাক মিনির দাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি, শীঘ্রই এর দাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে গো-প্রো। ধারণা করা হচ্ছে এর দাম ৪০০ ডলারের আশেপাশেই থাকবে। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪২ হাজার টাকার মত খরচ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইতোমধ্যেই হিরো ইলেভেন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। আর ২৫ অক্টোবর থেকে ইলেভেন মিনি কিনতে পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেছে গো-প্রো।
/এএস