অ্যাপলসহ সব স্মার্টওয়াচই সঠিক রিডিং দিতে অক্ষম
বর্তমান সময়ের একটি বহুল জনপ্রিয় প্রযুক্তি স্মার্টওয়াচ। প্রযুক্তি সচেতন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে স্মার্টফোনের পাশাপাশি এটিও একটি অপরিহার্য গেজেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া স্মার্টওয়াচ এখন ফ্যাশনেরও অংশ। একটি আকর্ষণীয় স্মার্টওয়াচ একজন মানুষের রুচির প্রতিনিধিত্ব করে।
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ভিন্ন মাণ ও ভিন্ন দামের স্মার্টওয়াচ আছে। অ্যাপল, স্যামসাং, শাওমি, রিয়েলমিসহ প্রায় সব স্মার্টফোন কোম্পানিই স্মার্টওয়াচ বানায়। ব্র্যান্ড ভ্যালু, মাণ ও ফিচারের ভিত্তিতে এসব স্মার্টওয়াচের দামও ভিন্ন হয়। এ দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে অ্যাপলের স্মার্ট ওয়াচ। আরও আছে স্যামসাং এর গ্যালাক্সি ওয়াচ, গুগলের পিক্সেল ওয়াচ, অ্যামাজ ফিট, আসুস জেন ওয়াচসহ আরও অনেক। এসব স্মার্ট ওয়াচের মূল্য ১০০ মার্কিন ডলার থেকে ৮০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর বাহিরেও বিশেষভাবে বানানো কিছু স্মার্টওয়াচ রয়েছে যাদের মূল্য প্রায় ১৫০০ মার্কিন ডলার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত (বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ কোটি ৬০ হাজার টাকা)।
স্মার্টওয়াচের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। সময় দেখানোর পাশাপাশি স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন দেখানো, স্মার্টফোনের বিভিন্ন ফিচার নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি। এ ছাড়াও মানবদেহের হার্টরেট, প্রাত্যহিক হাঁটাচলার হিসাব রাখা অর্থাৎ ফিটনেস ট্র্যাকিং করা স্মার্টওয়াচের একটি প্রধান ফিচার। এমনকি স্মার্টফোনে সংযুক্ত অবস্থায় কিছু কিছু স্মার্টওয়াচ দিয়ে কথাও বলা যায়।
যেই স্মার্টওয়াচ নিয়ে এত কথা, সম্প্রতি সেই স্মার্টওয়াচের অন্যতম প্রধান ফিচার 'ফিটনেস ট্র্যাকিং' এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা তুলেছেন কিছু প্রযুক্তি বিষারদ। তাদের দাবি, অ্যাপল ওয়াচসহ প্রায় সব স্মার্টওয়াচেরই ফিটনেস ট্র্যাকিং এর রিডিং সঠিক নয়। এবং কোনো স্মার্টওয়াচই সঠিক রিডিং দিতে সক্ষম নয়।
১১ মে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে স্ট্রংগার বাই সাইন্স নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। হার্টরেট এবং ফিটনেস ট্র্যাকিং এ পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলোর কার্যক্ষমতা ও উপযোগিতা আসলে কতটা তা জানতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গবেষণা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২২ থেকে ২৭ বছর বয়সী ৬০ জন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নারী পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। অ্যাপল ওয়াচ সিক্স, পোলার ভিন্টেজ ভি এবং ফিটবিট সেন্স এ তিনটি স্মার্টওয়াচ গবেষণায় ব্যবহার করা হয় ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। গবেষণার রেফারেন্স ডিভাইস হিসাবে, পোলার এইচ টেন চেস্ট স্ট্র্যাপ এবং মেটাম্যাক্স থ্রি বি ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষোণায় ব্যবহৃত তিনটি স্মার্টওয়াচই আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত। প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় প্রায় সমস্ত কার্যক্রমে ক্যালোরি ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে সবগুলো ডিভাইস বেশ দুর্বল ছিল। ক্যালোরি বার্ন, হাঁটা চলা হার্টরেটসহ সব ফলাফলই ছিল অপ্রত্যাশিত ও তিনটি ভিভাইসই ভিন্ন ভিন্ন ও ভুল তথ্য প্রদর্শন করেছে। গবেষণায় এও দেখা গেছে যে যাদের ক্যালোরি বার্ন গড় ফলাফল অনুযায়ী কম বা বেশি তাদের ক্ষেত্রে স্মার্টওয়াচগুলো আরও বেশি ভুল তথ্য প্রদর্শন করে।
তিনটি ডিভাইসের মধ্যে অ্যাপল ওয়াচ সিক্স হার্ট রেটের ক্ষেত্রে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ফলাফল প্রদর্শন করছিল। কিন্তু ফিটবিট ও পোলার ভিন্টেজ শারীরিক অনুশীলনের সাথে উঠানামা করছিল।
গবেষণার ফলাফলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্মার্টওয়াচ গুলো ক্যালরি বার্ন ও অন্য ফিটনেস ট্র্যাকিং এর ক্ষেত্রে যে ফলাফল দেয় তা খুবই অপ্রত্যাশিত, তবে এসবের মাঝে হার্ট রেট ও স্টেপ কাউন্টিং এর ফলাফল কিছুটা গ্রহণযোগ্য।
এতসব সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গবেষকরা বলছেন একটি স্মার্টওয়াচ একজন মানুষের জীবনে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। স্মার্টওয়াচ ব্যবহারকারীরা নিজেদের দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে, যা ভালো লক্ষণ।
তথ্যসূত্র: স্ট্রংগারবাইসাইন্স ডট কম