বিশ্বের প্রথম ৩৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লের ল্যাপটপ
সিঙ্গাপুর-আমেরিকার যৌথ বাণিজ্যিক কোম্পানি বিখ্যাত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান 'রেজার ইনকর্পোরেটেড'। বিশ্বজুড়ে রেজার এর খ্যাতি তাদের উচ্চক্ষমতা-সম্পন্ন গেমিং ল্যাপটপের জন্য। গেমিং পারফরম্যান্সে রেজারকে টেক্কা দিতে অন্য কম্পিউটার কোম্পানিগুলোর রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। গেমারদের কাছে এই কোম্পানির ল্যাপটপ রীতিমতো স্বপ্ন।
আন্তর্জাতিক বাজারে রেজার যখনই কোনো নতুন ডিভাইস লঞ্চ করেছে সেটিই বিশ্ব বাজারে হইচই ফেলে দিয়েছে। কম্পিউটিং জগতে একের পর এক নতুন চমক নিয়ে হাজির হয় রেজার। বলা যায় কম্পিউটিং জগতে নতুন নতুন চমক তারাই সবার আগে দেখায়। এবারও তেমনই এক চমক নিয়ে হাজির হয়েছে রেজার।
গেল ৪ মে ব্লেড ফিফটিন সিরিজের নতুন ল্যাপটপ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে রেজার। এটি বিশ্বের প্রথম ল্যাপটপ যাতে ৩৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তবে এর বাহিরে ল্যাপটপটির অন্যান্য যন্ত্রাংশে নতুন কোনো পরিবর্তন বা চামক আনেনি রেজার। রেজার জানিয়েছে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরেই নতুন ব্লেড ফিফটিন বিশ্ব বাজারে সহজলভ্য হবে।
ল্যাপটপটির মাদারবোর্ডে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টেল কোর আই নাইন (Core i9) সিরিজের ১২ তম জেনারেশনের চিপসেট। ১৪ কোরের এই প্রসেসরটির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ৩.৮০ গিগাহার্জ যা ওভার ক্লক বা বুস্ট আপ করলে ৫ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পিড আপ করতে সক্ষম। সহায়ক মেমোরি হিসাবে থাকছে ১৬ বা ৩২ গিগাবাইটের ডিডিআর ফাইভ (৪৮০০ মেগাহার্জ) র্যাম। প্রাথমিক স্টোরেজ হিসাবে থাকছে ১ টেরাবাইট ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি পিসিআইই স্টোরেজ কার্ড (এনভিএমই) এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত স্টোরেজ যুক্ত করার জন্য থাকছে একটি এম ডট টু (M.2) স্লট। প্রাথমিক এবং অতিরিক্ত স্টোরেজ উভয়ই ২ টেরাবাইট পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এনভিডিয়া জি ফোর্স আরটিএক্স ৩০৮০ টিআই (ল্যাপটপ) জিপিউ। এছাড়া ইন্টেলের নিজস্ব ইউএইচডি গ্রাফিক্স কার্ড তো থাকছেই।
ল্যাপটপটির সাথে উইন্ডোজ ইলেভেন অপারেটিং সিস্টেম প্রি ইনস্টলড থাকবে।
রেজার বলেছে তারা ব্লেড ফিফটিন সিরিজের ল্যাপটপটির ডিসপ্লেতে তিনটি ভ্যারিয়েন্ট রাখছে। তবে সবগুলো মনিটরের প্যানেলই ওএলইডি। রেজারের দাবি নতুন এই ল্যাপটপটির ডিসপ্লেগুলোর রেসপন্স রেট ২ মাইক্রোসেকেন্ড এবং ডিসপ্লেগুলো শতভাগ এসআরজিবি কালার সাপোর্টেড।
প্রথম ভ্যারিয়েন্টের ডিসপ্লে হিসাবে থাকছে একটি ১৫ ইঞ্চি ফুল এইচডি (১৯২০বাই১০৮০) রেজুলেশনের মনিটর যা ৩৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। দ্বিতীয় ভ্যারিয়েন্টের ডিসপ্লে হিসাবে থাকছে একটি ১৫ ইঞ্চি কোয়াড এইচডি (২৫৬০বাই১৪৪০) রেজুলেশনের মনিটর যা অপারেট করা যাবে ২৪০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে। আর তৃতীয় ভ্যারিয়েন্টের ডিসপ্লে হিসাবে থাকছে একটি ১৫ ইঞ্চি ফোর কে (৩৮৪০বাই২১৬০) রেজুলেশনের মনিটর যা অপারেট করা যাবে ১৪৪ হার্জ রিফ্রেশ রেটে।
ল্যাপটপটির কুলিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ভেপর চেম্বার টেকনলজি। চেম্বারের বাহিরের আবরণ হবে গ্রাফাইটের যা প্রসেসর ও গ্রাফিক্স কার্ডকে একত্রে আবৃত করে রাখবে। চেম্বারের ভিতরে থাকবে লিকুইড কুলেন্ট। কুলেন্ট ঠান্ডা করার জন্য থাকবে ৮৮ ব্লেড বিশিষ্ট দুইটি ফ্যান।
রেজারের আগের ল্যাপটপগুলোতে একক কালারের ব্যাকলিট কিবোর্ড ব্যবহার করা হলেও নতুন ব্লেড ফিফটিন ল্যাপটপে দেওয়া হয়েছে আরজিবি (রেড, গ্রিন, ব্লু) অ্যান্টিঘোস্ট ব্যাকলিট কিবোর্ড। ব্যবহারকারী চাইলে ল্যাপটপে প্রি লোডেড ১৫০ রেজার ক্রোমা থেকে নিজের পছন্দ মত লাইটিং বেছে নিতে পারবেন। আরও থাকছে সুপার সেন্সিটিভ মাইক্রোসফট প্রিসিশন গ্লাস টাচপ্যাড।
ল্যাপটপটির সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে টিএইচএক্স সাররাউন্ড অডিও তাছাড়া ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাক তো থাকছেই। সাউন্ড ইনপুট হিসাবে থাকবে চারটি অ্যারে মাইক্রোফোন।
ব্লেড ফিফটিন ল্যাপটপটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ৮০ ওয়াট আওয়ার (WHr) এর ব্যাটারি। যা চার্জ করতে ল্যাপটের সঙ্গে একটি ২৩০ ওয়াটের কমপ্যাক্ট পাওয়ার অ্যাডাপ্টার দেওয়া হবে।
ল্যাপটপটিতে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যেসকল সুবিধাদি থাকছে তা হল; কার্ড রিডার স্লট একটি, ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট দুইটি (একটি থান্ডারবোল্ট পোর্ট), ইউএসবি টাইপ এ পোর্ট তিনটি, একটি এইচডিএমআই পোর্ট, পাওয়ার পোর্ট, ইথারনেট পোর্ট। ল্যাপটপটির ওজন ২ কেজি ২০০ গ্রাম।
আন্তর্জাতিক বাজারে ল্যাপটপটির প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৩ লাখ টাকারও বেশি। তবে অফিসিয়াল পরিবেশক না থাকায় এই ল্যাপটপটি বাংলাদেশে কখনো আসবেনা।
/এএস