ডিজিটাল যুগে কাগজ বলে কিছু থাকবে না: মোস্তাফা জব্বার
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল যুগে প্রচলিত ব্যবসা-বাণিজ্য অনিবার্য কারণেই ডিজিটাল বাণিজ্যে রূপান্তরিত হবে। ডিজিটাল যুগ হবে ক্যাশল্যাস সোস্যাইটির যুগ। এরই ধারাবাহিকতায় কাগজের সভ্যতা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সামনের দিনে প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কারণে কাগজ বলে কিছু থাকবে না বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডিজিটাল প্লাটফর্মে ই-ক্যাব আয়োজিত ঈদ আড্ডায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথায় বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল কমার্সকে বাণিজ্যখাত হিসেবে গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাই বলে যে কোন খাত গড়ে তুলতে বাণিজ্যিক সংগঠন অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিকাশের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)‘এর উদ্যোগ তুলে ধরেন বিসিএস এর সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, মাত্র ৩৬ সদস্যের বিসিএস এর মাধ্যমে ৯৮-৯৯ সালে কম্পিউটারের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারের মাধ্যমে কম্পিউটার জনগণের কাছে সহজলভ্য করার প্রচেষ্টা বিসিএস‘র সমন্বিত উদ্যোগের ফসল।
বাণিজ্যিক প্লাটফর্ম হিসেবে ই-ক্যাবকেও অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও উপদেষ্টা মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন ডিজিটাল বাণিজ্যতো দূরের কথা ই- কমার্স বোঝার লোক ছিল না এক সময়। কিন্তু করোনাকালে আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন গরুর হাট পর্যন্ত অন লাইনে হতে পারে। ই-ক্যাবকে দেশে ডিজিটাল কমার্স রূপান্তরের অগ্রণী সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, গ্রাহকরা যাতে কোন ভাবেই প্রতারিত না হয় সে দিকে ই-ক্যাবকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, সুযোগ যেখানে থাকবে অপরাধীরা সেখানে অপরাধ করবে-সেটা প্রতিটি ক্ষেত্রেই । এটা বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কাজেই ডিজিটাল অপরাধ ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। যে যত বেশি ডিজিটাল দক্ষ হবে সে তত বেশি ব্যবসায় সফল হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে ই-ক্যাবকে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি এক্ষেত্রে ই-ক্যাবকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এখন কোন বাণিজ্য সংগঠন কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক একটি কেন্দ্রিয় কমিটি করে সেই খাতকে দেশব্যাপী ছড়াতে পারবেনা। বিসিএস প্রমাণ করেছে শাখা কমিটি কতো প্রয়োজনীয়। এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসাতো কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক নয়-তাই দেশব্যাপী ট্রেড বডির সংগঠন থাকতে হবে। তিনি ই-ক্যাবকে বিভাগ, জেলা বা উপজেলা পর্যন্ত সাংগঠনিক কাটামো গড়ে তোলার ও তাদেরকে সক্রিয় করার আহ্বান জানান। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল কমার্সের বিকাশে ডাকঘরের বিশাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডাক বিভাগ হবে ডিজিটাল কমার্স প্রসারের ডিজিটাল মহাসড়ক।
ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব তমালের সঞ্চালনায় ই-ক্যাবের কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। তারা ই-ক্যাব ও ডিজিটাল বাণিজ্য বিষয়ক নানা প্রসঙ্গ আলোচনা করেন। একজন বক্তা ইন্টারনেট এর গুণগত মান উন্নত হবার বিষয়ে প্রশংসা করে জানান যে তিনি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জুমে এই সভায় অংশ নিতে পারছেন। তিনি করোনাকালে ইন্টারনেটের সচল সজীব থাকারও প্রশংসা করেন।
শমী কায়সার কোভিডকালে ডিজিটাল কমার্সের অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করেন। তিনি ডিজিটাল কমার্সকে শিল্পখাত হিসেবে ঘোষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।