২০১১ এর কষ্ট তোমাকে দেখে ভুলে গিয়েছি জেমি: মাশরাফি

২০১১ সাল, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসবে। চারিদিকে সাজসাজ রব। উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর মাঠে বসে সরাসরি খেলা দেখার আশায় দেহ-মনে উত্তেজনার ঢেউ। সবাই অপেক্ষার প্রহর গুণছেন, আসবে কখন বিশ্বকাপ শুরুর লগন। কিন্তু এরই মাঝে নেমে আসে বিষাদ। নেমে আসে রাজ্যের দুঃখ। এই দুঃখের কারণ ছিল মাশরাফির কান্না।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই বিশ্বকাপ খেলতে পারেবন না তিনি। এটা চিন্তা করেই মাশরাফি নিজের কান্না সংবরণ করে রাখতে পারেননি। অঝোর ধারায় কেঁদেছেন মিডিয়ার সামনে। এর আগে তিনি দেশের হয়ে দুইটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। কিন্তু ঘরের মাঠে খেলতে পারবেন না মনে করেই তার এই কান্না। মাশরাফির সেই কান্না ছুঁয়ে গেছে ভক্ত সমর্থকসহ দেশবাসীকে। তার কান্নার কারণ ছিল, ইনজুরির কারণে দল থেকে বাদ পড়া। যদিও তিনি মনে করেছিলেন এই ইনজুরি নিয়ে খেলতে পারতেন। কিন্তু সেটি মনে করেননি সে সময়কার দলের কোচ জেমি সিডন্স। তাই তিনি মাশরাফিকে দলে না রাখার পক্ষে ছিলেন। তখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। এই ঘটনা সেখানেই শেষ।
এরপর ইনজুরি মুক্ত হয়ে মাশরাফি আবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন। নেতৃত্বের ভার উঠে তার কাঁধে। সেই দায়িত্ব নিয়ে তিনি পরে খেলেছেন আরও দুইটি বিশ্বকাপ। ওয়াানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন নিজেদের সেরা অর্জনে। এসেছে অনেক অনেক বড় জয়। বেশ কয়েকটি আসরের ফাইনাল খেলা হয়েছে। একটি আসরে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। আইসিসির চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথমবারের মতো মাশরাফির নেতৃত্বে সেমি ফাইনালও খেলে বাংলাদেশ।
যে জেমি সিডন্সের কারণে মাশরাফির ঘরের মাঠে খেলা হয়নি বিশ্বকাপ ক্রিকেট, কালের চক্র ঘুরে সেই জেমি সিডন্স আবার বাংলাদেশ দলে। এবার ভূমিকা ভিন্ন। ব্যাটিং পরামর্শক। বর্তমানে বিপিএল খেলতে সবগুলো দল সিলেটে অবস্থান করছে। জেমি সিডন্সও চলে গেছেন সিলেটে। সিডন্সের কারণে মাশরাফি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, তা হয়তো তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু সিডন্সকে দেখে আবার মনে হওয়ারই কথা। কিন্তু নড়াইল এক্সপ্রেসের হয়েছে উল্টোটা। সিডন্সকে দেখেই নাকি তিনি সব দুঃখ ভুলে গেছেন। ফেসবুকে পোস্ট করে সে রকমটিই জানিয়েছেন মাশরাফি। সিলেটে সিডন্সের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি পোস্ট করে সেখানে মাশরাফি লিখেছেন, ‘২০১১ এর কষ্ট তোমাকে দেখে ভুলে গিয়েছি জেমি।’
সিডন্সের সঙ্গে মাশরাফির দেখা হয়েছে প্রায় ১০ বছর পর। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর সিডন্সকে বাদ দিয়েছিল বিসিবি। এরপর আর কোথাও দুই জনের দেখা হয়নি। সেই পোস্টে মাশরাফি আরও লিখেছেন, ‘মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট এ পর্যন্ত আসার পেছনে যাদের অবদান আছে তুমি তাদের ভেতর অন্যতম। আমি হয়তো টিমে আর আসব না তবে তোমার জন্য শুভ কামনা। তোমার প্রতিটি শিক্ষা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বয়ে আনুক নতুনত্ব, হয়ে উঠুক আনন্দময়। তোমার প্রতি অগাধ আস্থা রেখেই বলছি। সামাজিক দূরত্বে থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা। বাংলাদেশও তোমাকে ভালোবাসে।’
এমপি/টিটি
