ঢাকায় দুই ম্যাচেই ব্যাপক রদ-বদল
ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা হয়ে বিপিএল ট্রেন এখন সিলেটে। সিলেটের বিভাগীয় আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে খেলা মাঠে গড়াবে ৭ ফেব্রুয়ারি। সিলেটে কোনো বিরতি ছাড়াই তিনদিনে ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই দিন খেলার পর একদিন বিরতি ছিল। সিলেট পর্ব শেষ বিপিএল আবার যখন ঢাকায় ফিরবে, তখন মোটামুটি স্বচ্ছ একটা ধারণা পাওয়া যাবে কারা কারা যাচ্ছে প্লে অফ রাউন্ডে। যে টুকু সংশয় থাকবে তা নির্ধারণ হবে ঢাকার দুই দিনে চার ম্যাচে। ঢাকায় ফেরার সময় একমাত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও খুলনা টাইগার্স ছাড়া বাকি সব দলেরই একটি করে ম্যাচ থাকবে। কুমিল্লা ও খুলনা দুইটি ম্যাচই খেলবে নিজেদের বিপক্ষে। স্বাগতিক হিসেবে সিলেট সানরাইজার্সের প্রতিদিনই ম্যাচ আছে।
সিলেট যাওয়ার আগে চট্টগ্রাম থেকে সংক্ষিপ্ত সফরে বিপিএলে ঢাকা এসে প্রকৃতির প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়ে। দুই দিনে চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে শেষ দিন শুক্রবার ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু বৃষ্টির কাছে হার মানতে হয়। অনুষ্ঠিত হতে পারেনি দুইটি ম্যাচের একটিও। যে কারণে চট্টগ্রাম পর্বের ব্যাটে-বলে মনমুগ্ধ লড়াই ঢাকায় সেভাবে দেখা না গেলেও যে একদিন খেলা হয়েছে, সেখানে কিন্তু ব্যাটে-বলে মুগ্ধতা ছিল। যেমন বল হাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে কুমিল্লার মোস্তাফিজের ৪ ওভার বোলিং করে ২৭ রানে ৫ উইকেটে নেওয়া। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এবার এটিই ছিল প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার ঘটনা।
ব্যাটিংয়ে হয়নি কোনো বড় ইনিংস। যে দুইটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, দুইটি ছিল লো-স্কোরিং। অবশ্য সেই লো-স্কোরিং ম্যাচেও দেখা গেছে ব্যাটিং তাণ্ডব। প্রথম দিন সিলেট সানরাইজার্সের ৫ উইকেটে করা ১৪২ রান খুলনা টাইগার্স টর্নেডো গতিতে মাত্র ১৪ ওভার ২ বলে ১ উইকেট হারিয়ে টপকে যায়। সময় নিয়েছিল মাত্র ৬৯ মিনিট। চট্টগ্রাম-কুমিল্লার পরের ম্যাচে বৃষ্টি হানা দিয়েছিল। তবে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়নি।
১৮ ওভারে নেমে এসেছিল। চট্টগ্রামের ৮ উইকেটে ১৩৮ রান পরে বৃষ্টি আইনে বেড়ে গিয়ে হয়েছিল ১৪৪। বৃষ্টির পর আবার খেলা শুরু হলে মোস্তাফিজ টানা ৩ ওভার বোলিং করেন। প্রতি ওভারে ২টি করে উইকেট পড়ে। পাঁচটি ছিল মোস্তাফিজের, একটি রান আউট। কুমিল্লা সেই রান টপকে যায় ১৬ ওভার ৩ বলে। এই দুই ম্যাচেই পাঁচটি মারমুখি হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে। কুমিল্লার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস, সিলেটের মোহাম্মদ মিঠুন, চট্টগ্রামের উইল জ্যাকস এবং খুলনার আন্দ্রে ফ্লেচার এ হাফ সেঞ্চুরিগুলো করেন। সিলেটের হয়ে মোহাম্মদ মিঠুন ৫১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলা পর খুলনার হয়ে আন্দ্রে ফ্লেচার ৪৭ বলে অপরাজিত ৭১ রান করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামের উইল জ্যাকস ৩৭ বলে ৫৭ রান করেন। তার জবাব দেন ইমরুল কায়েস প্রথমবারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করতে নেসে ৬২ বলে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলে। তার পার্টনার লিটন দাস খেলেন ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
ঢাকায় একদিনের ম্যাচেই পয়েন্ট টেবিলের ব্যাপক রদ-বদল হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় শীর্ষে থেকে ফিরেছিল ফরচুন বরিশাল। এখন তারা নেমে গেছে দুইয়ে। উপরে উঠে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। দুই দলেরই পয়েন্ট ৯ করে। বরিশাল খেলেছে ৭ ম্যাচ। কুমিল্লার ম্যাচ একটি কম। চট্টগ্রাম পর্ব শেষে দুইয়ে থাকা মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা এক ধাপ নিচে নেমে গেছে। ৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৭। পাঁচে থাকা খুলনা টাইগার্স ৬ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এসেছে চারে। চারে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নেমে গেছে পাঁচে। তাদের পয়েন্টও ৬। তবে তারা ম্যাচ খেলেছে সবার থেকে বেশি ৮টি। সবার নিচে আছে ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে সিলেট সানরাইজার্স।
পয়েন্ট টেবিলে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি পরিবর্তন এসেছে সর্বোচ্চ রান ও সর্বাধিক উইকেট শিকারির ক্ষেত্রেও। শীর্ষে থাকা তামিম ইকবালকে হটিয়ে প্রথমবারের মতো সবার উপরে উঠে এসেছেন বিদেশি ব্যাটসম্যান। তিনি হলেন চট্টগ্রামের উইল জ্যাকস। তার রান ৭ ম্যাচে ২৮০। তামিম ইকবাল ঢাকায় ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়াতে। ২৬২ রান নিয়ে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। আগে ১৯৪ রান করে তিনি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তিনিও তামিমের মতো ব্যাটিং করতে পারেননি। যে কারণে তাকে হটিয়ে তিনে উঠে এসেছেন আরেক বিদেশি খুলনার আন্দ্রে ফ্লেচার। তার রান ২০৬। মাহমুদউল্লাহর অবস্থান চারে।
চট্টগ্রামে ১০টি করে উইকেট নিয়ে এক, দুই ও তিনে ছিলেন যথাক্রমে বরিশালের সাকিব, ডুয়াইন ব্রাভো ও খুলনার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ঢাকায় এক ম্যাচ ৫ উইকেট নিয়ে এদের সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার উইকেট ১১টি। কামরুল ইসলাম রাব্বির উইকেটও ১১টি। তিনি আছেনর দুইয়ে। আর সবার উপরে থাকা সাকিব নেমে গেছেন তিনে। ঢাকায় তিনি কোনো ম্যাচ খেলতে পারেনি পরিত্যক্ত হওয়াতে। দুইয়ে থাকা ব্রাভোর অবস্থান চারে।
এমপি/এসএন