চট্টগ্রামকে হারিয়ে শীর্ষে বরিশাল
৩ উইকেটে ১৩০। সেখান থেকে ১৪৯ রানে অলআউট। মাত্র ২০ বলে ১৯ রানে নেই ৭ উইকেট। যেখানে দলের রান হওয়ার কথা ১৭০ এর উপরে বা এর কাছাকাছি, সেখানে ফরচুন বরিশাল অলআউট হয় ১৪৯ রানে। চট্টগ্রামের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের সামনে এই রান কখনই ভরসার নয়? কিন্তু বরিশালের বোলিং লাইনও অসম্ভব শক্তিশালী। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ১৪১ ও ১৪৫ রান করেও তারা ম্যাচ জিতেছিল। এবার সংগ্রহ ছিল আরেকটু বেশি। সেই সংগ্রহ নিয়েই বরিশালের বোলাররা আরেকবার লড়াই করে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় ১৪ রানে ম্যাচ জিতে। চট্টগ্রাম অলআউট হয় ১৯.৪ ওভারে ১৩৫ রানে। এই জয়ে বরিশাল ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে উঠে এসেছে। ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রামের অবস্থানে এক ধাপ নিচে নেমে চারে। এর আগে তিন নম্বরে ছিল দলটি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব।
বরিশালের ইনিংস বড় হতে দেননি সিলেটের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা বাঁহতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তিনি যখন আক্রমণে আসেন, তখন বরিশালের রান ১৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩০। ক্রিজে সাকিব ৪৯ রানে, সঙ্গে নতুন যোগ দেওয়া ডুয়াইন ব্রাভো। মৃত্যুঞ্জয়ের প্রথম বলেই এক রান নিয়ে সাকিব চলতি আসরে নিজের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন ৩০ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে। পরের বলে ব্রাভো ১ রান নেয়ার পর সাকিব স্ট্রাইকে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে আফিফের হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু তখনো বুঝা যায়নি সামনে কি ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে বরিশালের আঙ্গিনায়। মৃত্যুঞ্জয়ের পরের ওভারে সেই ঘূর্ণিঝড়। সেই ওভারেই তুলে নেন তিন তিনটি উইকেট। নুরুল হাসান সোহানকে নিজের বলে নিজেই আউট করার এক বল পর একে একে আউট করেন ইরফান শুক্কুর ও মুজিব-উর রহমানকে। সম্ভাবনা তৈরি হয় হ্যাটট্রিকের। মেহেদী হাসানকে করা পরের বল নো বল হলে হ্যাটট্টিকের সম্ভাবনা জেগে থাকে। কিন্তু মেহেদী হাসান সেই হ্যাটট্রিক আর করতে দেননি। মেরে দেন বাউণ্ডারি। কিন্তু হ্যাটট্রিক না হলেও মৃত্যুঞ্জয় যে ক্ষতি করার তা করে ফেলেন বরিশালের।
মৃত্যুঞ্জয় আক্রমণে আসার আগে বরিশালের বড় সংগ্রহের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গে যায় ২ রানে। গেইলের সঙ্গে নতুন করে ইনিংসের উদ্বোধন করতে আসা মুনিম শাহরিয়ার ফিরে যান শরিফুলের বলে আগের ম্যাচের হ্যাটট্রিক ম্যান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর গেইল ( ১৯ বলে ২৫), নাজমুল হোসেন শান্ত ( ২৯ বলে ২৮), সাকিব ( ৩১ বলে ৫০) ও তৌহিদ হৃদয় ( ১৭ বলে ২২) মিলে সেই বড় সংগ্রহের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন। যা শেষে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
চট্টগ্রামে এদিন তাদের সেরা একাদশে পরিবর্তন আসে। হার্ড হিটার হিসেবে দলে নিয়েছিল উইন্ডিজের বিশাল দেহের কেনার লুইসকে। কিন্তু তিনি নিজের নামের প্রতি মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। টানা ছয় ম্যাচ খেলে একটি মাত্র ম্যাচে দুই অংকের রান করতে পেরেছিলেন ২৫। তাই তাকে এ ম্যাচে বাদ দিয়ে চাদউইক ওয়ালটনকে সেরা একাদশে রাখা হয়। ফলে ওপেনিংয়ে আসে পরিবর্তন। ইনফর্ম উইল জ্যাকসের সঙ্গে আফিফ হোসেন উদ্বোধন করেন। জ্যাকস প্রথম ওভারেই মুজিব-উর রহমানের শিকার হলেও শামীম পাটোয়ারি প্রমোশন পেয়ে ওয়ান ডাউনে নেমে তার যোগ্য প্রতিদান দেন। আফিফের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০ রান যোগ করেন ১০ ওভারে। সাকিব বল করতে এসে প্রথম ওভারেই আফিফকে প্লেইড অন হয়ে যান। ৩২ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৯ রান করেন তিনি। আফিফ ফিরে যাওয়ার পরপরই শামীমও ফিরে যান ৩০ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৯ রান করে। মেহেদী হাসান রানার বলে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপরই ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে চট্টগ্রাম। সাকিবের সঙ্গে মুজিব উর রহমান আক্রমণে ফিরে এসে দুজনে মিলে পটাপট আরো তিন উইকেট তুলে নেন। ফলে চট্টগ্রামের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭০ থেকে ৬ উইকেটে ৮১। ২.৫ ওভারে ১০ রানে নেই ৫ উইকেট। ক্রিজে দাঁড়িয়ে যাওয়া চাদউইকে ওয়ালটনকেও ( ১৮ বলে ১৬ রান) থামিয়ে দেন সাকিব। শতরানের আগেই নেই ৭ উইকেট। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের হার এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। আটে নামা মেহেদী হাসান মিরাজের ১৩ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ রান শুধুই হারের ব্যবধান কমিয়ে এনেছিল। মুজিব উর রহমান ৯ রানে ও সাকিব ২৩ রানে নেন ৩টি করে উইকেট। মেহেদী হাসান রানা নেন ২ উইকেট।
এমপি/এসআইএইচ