বিপিএলে ঢাকা পর্বের খুঁটিনাটি
চার ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার পয়েন্ট ২। ফরচুন বরিশালেরও পয়েন্ট ২। তাদের ম্যাচ একটি কম। ৬ দলের বিপিএলে পয়েন্ট টেবিলে এ দুই দলের অবস্থান তলানির দিকে। বরিশাল পাঁচে, ঢাকা ছয়ে। দল দুইটি সম্বন্ধে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, পয়েন্ট টেবিল দেখে তাদের চোখ কপালে উঠার অবস্থা হবে।
অনেকেই হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। আর করবেনই বা কী করে? যে দল দুইটি শিরোপার জোর দাবিদার, যে দলের একটি ঢাকাতে আছেন তামিম-মাহমুদউল্লাহ-তামিম-আন্দ্রে রাসেল-মোহাম্মদ শাহজাদ-রুবেল হোসেন-মোহাম্মদ নাঈমের মতো ক্রিকেটার খেলে থাকেন, অপরদল বরিশালে আছেন সাকিব-গেইল-ব্রাভো-নাজমুল শান্ত-তাইজুলর, তাদের অবস্থানতো পয়েন্ট টেবিলের উপরের দিকেই হওয়ার কথা! কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিপিএলে তা হতে দেননি অন্য দলগুলো।
ঢাকা পর্ব শেষে এ দলগুলো অবস্থানের নিচের দিকে থাকলেও সবার উপরে আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ২ ম্যাচে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট তাদের। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আছে দ্বিতীয় স্থানে। তিনে থাকা সিলেট সানারাইজার্সের অবস্থান দেখে আবার অনেকেই অবাক হবেন। কারণ এই দলটি এবারের আসরে সবচেয়ে দূর্বল। পয়েন্ট টেবিলে নিচের দিকে নয়, নিচেই থাকার কথা তাদের। কিন্তু ২ ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে তারা উঠে এসেছে তিনে। এ অবস্থান তৈরি করতে তারা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে হারিয়েছে মিনিষ্টার গ্রুপ ঢাকাকে। সিলেটের সমান ম্যাচ খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স। আপাাতত এ অবস্থান নিয়ে দলগুলো এবার শুরু করবে চট্টগ্রাম পর্ব। এ পর্ব শুরু হবে ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার।
চট্টগ্রামে বিপিএলের বসত হবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দুই দিন খেলার পর একদিন বিরতি। এরপর আবার দুই দিন খেলা। তারপর বিপিএল আবার ফিরে আসবে ঢাকাতে। চট্টগ্রামে খেলা হবে মোট চার দিন। এ চার দিনে অনুষ্ঠিত হবে আটটি ম্যাচ। যেখানে স্বাগতিক হিসেবে চট্টগ্রামের খেলা আছে প্রতিদিনই। যেমনটি ছিল ঢাকায় মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার। একইভাবে সিলেটে যে তিন দিন খেলা হবে, সেখানেও স্বাগতিক হিসেবে সিলেটের খেলা রাখা হয়েছে প্রতিদিনই।
ঢাকা পর্বে দলগুলোর নাটকীয় উত্থান-পতনের মাঝে আরেকটি বিষয় ছিল চোখে পড়ার মতো। দিনের প্রথম ম্যাচে রান বেশি না হওয়া। যে চার দিন খেলা হয়েছে, সেখানে প্রথম ম্যাচে সর্বোচ্চ রান ছিল বরিশাল ফরচুনের ৮ উইকেটে ১২৯। সর্বনিম্ন রান ছিল সিলেট সানরাইজার্সের ৯৬। অপর দুইটি ম্যাচে রান ছিল ঢাকার ১০০ ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ৮ উইকেটে ১২৫।
ঢাকা পর্বে চার দিনে যে আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে অলআউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে চারবার। স্বাগতিক মিনিস্টার ঢাকা অলআউট হয়েছে দুইবার। একবার করে সিলেট সানরাইজার্স ও ফরচুন বরিশাল। মোট উইকেট পতন হয়েছে ১০৪টি। যেখানে মোট উইকেট ছিল ১৬০টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকরা উইকেট পতনের চেয়ে চার-ছক্কার বাহারি মার দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু প্রতিবার বিপিএলে দৃশ্যটির উপস্থিতি কমই দেখা যায়। আট ম্যাচের ১৬০ উইকেটের মাঝে ১০৪টির পতনেই ধারণা করা যায় বোলারদের দাপট কতোটা বেশি ছিল। আট ম্যাচের ছয়টিতেই ম্যাচ সেরা পুরস্কার গিয়েছে বোলারদের ঝুলিতে। ছয়জনের মাঝে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের নাহিদুল ইসলামই হয়েছেন দুইবার। তবে এখানে তার ব্যাটিংয়ের কিঞ্চিৎ ভূমিকাও ছিল। বাকি চারজন হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, বেনি হাওয়েল, নাজমুল ইসলাম। ব্যাটসম্যান হয়েছেন দুইবার। তারা হলেন রনি তালুকদার ও মাহমুদউল্লাহ।
ম্যাচসেরা পুরস্কারে বোলারদের দাপটের কারণে বিষয়টি আরো বেশি করে দৃশ্যমান হয়ে উঠে যে ব্যাটসম্যানদের রাজত্ব কতোটা কম ছিল। প্রথম ম্যাচ তো রান খরা বিষয়টি সবারই জানা। দ্বিতীয় ম্যাচে রান উঠেছে ঠিকই। তবে তা প্রথম দিনেই। সে দিন ঢাকার করা ৬ উইকেটে ১৮৩ রান খুলনা অতিক্রম করে গিয়েছিল ১৯ ওভারেই। পরের তিন ম্যাচের দুইটিতে রান উঠলেও তাড়া করতে গিয়ে ভালোই হোচট খেয়েছে দলগুলো। যেমন দ্বিতীয় দিনের ম্যাচে চট্টগ্রাম ৮ উইকেটে ১৬১ রান করলেও রান তাড়া করতে গিয়ে ঢাকা ১৩১ রানে গুটিয়ে যায়। তৃতীয় দিন চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে এবারের আসরের সর্বোচ্চ ১৯০ রান করার পর খুলনা টাইগার্স করতে পেরেছিল ৯ উইকেটে ১৬৫ রান। চতুর্থ দিন তো কুমিল্লার ৭ উইকেটে ১৫৮ রানের জবাব দিতে গিয়ে মাত্র ৯৫ রানে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বরিশাল।
আসরে যখন বোলারদের রাজত্ব কায়েম হয়, তখন সেখানে কোনো সেঞ্চুরি আশা করা যায় না। এমন কি আশে-পাশেও কেউ যেতে পারেননি। সর্বোচ্চ ইনিংস খুলনা টাইগার্সের রনি তালুকদারের ৬১ রানের। হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি। বাকি দুইটি তামিম ইকবালের ৫২ ও ৫০। বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার ঘটনা আছে একাধিক। সেরা ১৬ রানে ৪টি চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান মিরাজের। এরপর সিলেটের নাজমুল ইসলাম অপুর ১৮ রানে ৪টি। চট্টগ্রামের শরিফুলও ৪ উইকেট নিয়েছেন একটু বেশি ৩৪ রান দিয়ে। ৩টি করে উইকটে নেওয়ার ঘটনা আছে ৮টি।
এবারের বিপিএলে একটি বিষয় ছিল খুবই আশা জাগানিয়া। তা হলো দেশি ক্রিকেটারদের দাপট। ব্যাটিং যেমন সব কটি হাফ সেঞ্চুরি দেশি ব্যাটসম্যানদের, তেমনি বোলিংয়েও অনেকটা। ৪ উইকেট সবগুলো বেশি বোলারদের। ৩টি করে উইকেট নেওয়া বোলার আটজনের মাঝে মাত্র দুইজন বোলার বিদেশি। দুইজনেই বরিশালের জেসেফ ও ব্রাভো। বাকি ছয়জন হলেন- নাজমুল ইসলাস অপু, নাহিদুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি। আবার ম্যাচ সেরা পুরস্কার শুধু একটি গিয়েছে বিদেশিদের হাতে। তিনি হলেন চট্টগ্রামের বেনি হাওয়েল। বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে আছেন সিলেটের নাজমুল ইসলাম অপু।
৬টি করে উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। এরপর ৫টি করে উইকেট আছে ৪ জনের। ব্যাটিংয়ে শতরানের উপরে আছে তিনজনের। যার দুইজনই আবার অবিশ্বাস্যভাবে আসরের তলানির দিকে থাকা ঢাকার। ৪ ম্যাচে ১২৪ রান করে সবার উপর আছেন দলপতি মাহমুদউল্লাহ। তামিম ইকবাল দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ১০৫ রান করে আছেন তৃতীয় স্থানে। ৩ ম্যাচে ১১২ রানে করে দ্বিতীয় স্থানে চট্টগ্রামের বেনি হাওয়েল।
এবার দেখার পালা চট্টগ্রাম পর্ব শেষে পয়েন্ট টেবিলে কী রকম পরিবর্তন আসে কিংবা দেশি ক্রিকেটারদের আধিপত্য বজায় থাকে কি না?
এমপি/এসএন