পিছিয়ে পড়লে ফিরে আসা কঠিন: প্রিন্স
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে বাংলাদেশ দল আকাশে উড়ছিল। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনই তারা মাটিতে নেমে এসেছে। টেস্টের যে চিত্র দাঁড়িয়েছে তাতে করে আগামীকালই শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ম্যাচকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অসম্ভব রকম ভালো ব্যাটিং করতে হবে। বলা যায় মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম ইনিংসে যে ব্যাটিং করেছিল। টিকে ছিল ১৭৭.২ ওভার। রান করেছিল ৪৫৮। বাংলাদেশের ব্যাটিং যেভাবে পুরানো রোগে আক্রান্ত হয়েছে, প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪১.২ ওভারে ১২৬ রান করে অলআউট হয়েছে তাতে করে তাদের কাছে এ রকম প্রত্যাশা করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। আলাদিনের চেরাগ কিংবা কোনো যাদুর কাঠির পরশে যদি জেগে উঠতে পারে, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা?
কিন্তু এ রকম হলো। এক সপ্তাহ আগেও যারা নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়েছে। ছিনিয়ে এনেছে জয়। সেই দলই কি না এখন হাবুঢুবু খাচ্ছে। দলের ব্যাটিং কোচ অ্যাসওয়েল প্রিন্স মনে করেন ব্যাটিং অর্ডারের টপ পাঁচ ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডের ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকেই তিনটি ফিফটিসহ ২৬৪ রান। সেখানে এই টেস্টে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২১ রান। তিন ফিফটির বিপরীতে দুইটি শুন্য রানের ইনিংস! কোচের কন্ঠে এ নিয়ে ঝরেছে আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই হতাশ। আমরা গত সপ্তাহে খুবই ভালো খেলেছি। একটি মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ১৭৩ ওভার ( হবে ১৭৭.২ ওভার) খেলেছি। আমরা জানতাম এই টেস্টে নিউ জিল্যান্ড খুবই ভালোভাবে ফিরে আসবে। আপনি যদি দুইটি খেলার তুলনা করেন তাহলে দেখবেন যেন একবার পিছিয়ে পড়লে আপনি যদি এক নাম্বার দলও হন ফিরে আসা কঠিন হয়। গতকাল তারা খুবই ভালো শুরু করে। আজ সকালেও তা অব্যাহত ছিল। বল হাতে শুরুটাও ভালো করেছিল। এভাবে ভালো খেলে তারা আমাদের জন্য ফিরে আসার রাস্তা কঠিন করে তুলেছে। আমাদের লড়াই করে ফিরে আসতে হবে।’
তাহলে কি এই টেস্টে বাংলাদেশের ফিরে আসার কোনোই সম্ভাবনা নেই? শেষ চেষ্টা করে দেখবেন বলে জানিয়ে ব্যাটিং কোচ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কিউইদের কাছ থেকে শিখেছি যে তারা অফ স্টাম্পের বাইরে অনেক বেশি বল ছেড়েছে। এটি নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু বেশি স্বাভাবিকভাবেই আসে। তারা বাউন্সি উইকেটে খেলে। আমাদের ছেলেরা দেশে অনেক বেশি বল খেলে। আজ আমরা আরো কিছু বল ছেড়ে খেলতে পারতাম। যেমনটি আমরা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে খেলেছি। আশা করি আগামীকাল আমরা একটি ভালো শুরু করতে পারব। আমরা অফস্টাম্পের বাইরে আরো কিছু বল ছেড়ে খেলতে হবে, যাতে তারা আমাদের সোজা বল করতে বাধ্য হয়।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং ভালো না করার জন্য পিচের পরিবর্তনকেও তুলে ধরেছেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য খুব কঠিন একটা দিন ছিল আজ। অবশ্যই নিউ জিল্যান্ড খুব ভালো শুরু করেছিল। তারা বলে ভালো সুইং পেয়েছে। পিচে বেশ কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্তও ছিল। গতকাল পিচ কিছুটা নরম ছিল। কিন্তু গতকালের নরম অবস্থায় গর্তের সৃষ্টি করেছে। যখন পিচ শক্ত ও দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়ে পড়ে, তখন ব্যাট করা আসলেই খুব কঠিন হয়।
কোচ ইয়াসির আলী ও নুরুল হাসান সোহানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সোহান ইতিবাচক ব্যাটিং করেছে। বলের উপর তার নজর ছিল ভালো। ইয়াসির আলী মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলছে। মাউন্টে লেগ-সাইডে ধরা পড়েছিলেন দুর্ভাগ্যজনক। সেই খেলায় তিনি নিজেকে ভালোভাবে মেলে ধরেছিলেন এবং আজকেও। তিনি ডিফেন্স করেছেন দারুণভাবে। আক্রমণও করেছেন সময়মতো।’
মোহাম্মদ নাঈম শেখ শততম টেস্ট ক্রিকেটের হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর শুন্য রানে আউট হয়েছেন। দলে তার অন্তর্ভুক্ত নিয়েই প্রশ্ন ছিল। কারণ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার রেকর্ডও ভালো নয়, খেলেনও কম। সবশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২০ সালে। সেখানে ফজলে রাব্বি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সফল একজন ব্যাটসম্যান। কেন ফজলে রাব্বি সেরা একাদশে ছিলেন না। এই প্রশ্নের জবাবে অ্যাসওয়েল প্রিন্স জানান, সেরা একাদশে তিনি থাকেন না। তিনি বলেন, ‘আমি মোটেও নির্বাচনের অংশ নই। আপনি নির্বাচন প্যানেল থেকে এর উত্তর পেতে পারেন। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নাঈম একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। সেসব খেলায় সে ভালো করেছে।’
এমপি/এসআইএইচ