ব্যাট করতে নেমে অন্ধকার দেখছেন বাংলাদেশ
চোখে অন্ধকার দেখছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। উইকেটে টিকতেই পারছেন না। উইকেট যেন কচু পাতার পানি হয়ে উঠেছে তাদের কাছে। আসা-যাওয়াতে শামিল রয়েছেন তারা। নিউ জিল্যান্ডের দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছেন না। তৈরি হয়েছে দুর্বিসহ এক পরিস্থিতি। নিউ জিল্যান্ডের ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর ব্যাট করতে নেমে চা বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭। ওভার খেলেছে মাত্র ১১টি। লিটন দাস ১ ও ইয়াসির আলী ০ রান নিয়ে চা বিরতির পর আবার ব্যাট করতে নামবেন। সাউদি ও বোল্ট ২টি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। পরে আসবেন ওয়েগনার, জেমিসন ও মিচেল। এদের সামাল দুসাধ্য হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। যেভাবে উইকেট পতন হচ্ছে তা সামাল দেওয়া সম্ভব না হলে শেষ সেশনে অলআউট হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নিউ জিল্যান্ডের টম লাথাম ২৫২ ও কনওয়ে ১০১ রান করেন।
নিউ জিল্যান্ড যে বাংলাদেশের জন্য দুর্বিসহ এক জায়গা তা যেন আবার ফিরে এসেছে। মাছে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্বপ্নের মতো একটি টেস্ট গিয়েছে। যেখানে ব্যাটে-বলে সমান দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ ৮ উইকেট ম্যাচ জিতে দূর করেছিল নিউ জিল্যান্ডে জয়ের খরা। কিন্তু এক টেস্ট পর আবার চেনা রূপে। বোলাররা শুরুতে ভালো করতে পারেননি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আরও ভয়াবহ। ১২ রানে নেই ৪ উইকেট। বিশ্বাস করাই কঠিন!
ক্রাইস্টচার্চের সবুজ জমিনে টস জিতে বাংলাদেশের পেসাররা ফায়দা নিতে পারেননি। কিন্তু একদিন পর চা বিরতির প্রায় এক ঘণ্টা সময় আগে বল হাতে পেয়ে সেই পেচেই ত্রাস ছড়াচ্ছেন স্বাগতিক দলের বোলাররা। বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং দেখে মনে হয়েছে সবুজের মাঝে কোথায়ও গলদ আছে। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের বোলিং প্রমাণ করল এরকম উইকেট আসলেই পেসারদের জন্য, ব্যাটসম্যানদের জন্য নয়!
চা বিরতির আগে বাংলাদেশের যে ৪ উইকেটের পতন হয় সেখানে বোল্ট ও সাউদি ২টি করে ভাগাভাগি দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে টম লাথাম। আবার সাউদির ২টি উইকেটই ছিল বোল্ড। তাদের বাউন্স ও সুইংয়ের কাছে টিকতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা
উইকেটের পতন শুরু হয় সাদমান ইসলামকে দিয়ে। বোল্টের বলে লাথামের হাতে ধরা পড়েন ৭ রানে। বাংলাদেশের শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখ কিছুই করতে পারেননি। সেরা একাদশে ঢুকেই মাইলফলক ছুঁয়া এই ক্রিকেটার ২২ গজে কোনো রানই করতে পারেননি সাউদির বলে বোল্ড হয়ে। নাজমুল হোসেন শান্তকে ব্যক্তিগত ৪ রানে পথ দেখান বোল্ট। ক্যাচ ধরেন সেই লাথামই। দলপতি মুমিনুলকে আবার বোল্ড করেন সাউদি। তিনিও কোনো রান করতে পারেননি।
এর আগে নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করেছিল ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লাথাম ডাবল ও কনওয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন। এবাদতের করা দিনের প্রথম বলেই চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে। ৫ টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি আছে স্যার ডন ব্রাডম্যানের। এর চেয়ে বেশি ৪টি করে সেঞ্চুরি আছে সুনিল গাভাস্কার ও জর্জ হ্যাডিলির।
কনওয়ের সেঞ্চুরির পর লাথামও চার মেরে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তাসকিনের বলে। ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আর সেঞ্চুরি সংখ্যা ১২টি। বল খেলেন ৩০৫টি। এই জুটি ভাঙ্গে সেঞ্চুরি করার পরপরই কনওয়ে রানআউটের শিকার হলেন। মিরাজের থ্রোতে সরাসরি স্ট্যাম্পে লাগে। এই জুটিতে রান যোগ হয় ২১৫ রান। দিনের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ ৪ উইকেট তুলে নেয়। যার তিনটিই ছিল ১২ রানের ব্যবধানে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামার সময় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ২৮ রানে তাকে ফেরান এবাদত। স্কয়ার লেগে তার ক্যাচ ধরেন শরিফুল। পরে এবাদত কোনো রান না করতে দিয়ে আউট করেন হ্যানরি নিকোলাসকেও। উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ধরেন নুরুল হাসান সোহান। ড্যারিল মিচেলকে ৩ রানে আউট করেন শরিফুল। উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ধরেন নুরুল হাসান সোহান।
ডাবল সেঞ্চুরি করা লাথাম সঙ্গীদের আসা-যাওয়া দেখার মাঝেই লাঞ্চের পর টম ব্লুন্ডেলকে নিয়ে অক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন। মুমিনুলের এক ওভারে ৬, ৪, ৬ মেরে ২৪০ ছুঁয়ে আবারও মেরে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন। ক্যাচ ধরেন ইয়াসির আলী। শেষ হয় ৩৭৩ বলে ২৫২ রানের ইনিংস। অল্পের জন্য অতিক্রম করতে পারেননি নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের ইনিংস। পরে ব্লুন্ডেল ৬০ বলে মারমুখি ৫৭ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করে। তখন জেমিসন ৪ রানে অপরাজিত।
এমপি/টিটি