দল নিয়ে খুশি সোহান
সব কিছুই যেন খুব দ্রুতই ঘটে গেছে। টি-টোয়েন্টি দল থেকে মাহমুদউল্লাহর বিদায়। দৃশ্যপটে নুরুল হাসান সোহান। তাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়ার পর দল নিয়ে খুব একটা ভাবারও সময় পাননি। তার আগেই ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ে তাকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হতে হয়েছে।
ক্রিকেট বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক। যতোই দল ব্যর্থ হোক, প্রতিটি খেলার আগেই সবাই নতুন করে আশা বাধেন এবার ঘুচবে ব্যর্থতা। কখনো ঘুচে, কখনো ঘুচে না। কিন্তু মানুষের আশার তরি ভেঙ্গে দেন না। পরবর্তির জন্য অপেক্ষার তরি ভাসিয়ে দেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যর্থতা ডাকতে নুরুল হাসান সোহানকে দায়িত্ব দেওয়ার পর আবারও ক্রিকেট প্রিয় বাঙ্গালি জাতি নতুন করে আশা বেঁধেছেন, এবার হয়তো আসবে পরিবর্তন। নতুন অধিনায়কের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তার কথা জাতির কাছে জানাতে সংবাদকর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার নির্ধারত সময় সাড়ে এগারটার অনেক আগেই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের মিডিয়া কক্ষ সংবাদিকে ঠাসা। এ জাতীয় সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত বিসিবির কর্তা পর্যায়ে কেউ থাকেন না। কিন্তু আজ সবাইকে অবাক করে দিয়ে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি ডায়াসে বসেননি। নুরুল হাসান সোহান সংবাদ সম্মেলন কেমন করেন, তার পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এদিকে সাড়ে এগারটায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও যথা সময়ে শুরুর কোনো লক্ষণই ছিল না। ৪০ মিনিটে শুরু হয়। যার স্থায়ীত্ব ছিল ২০ মিনিট।
সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্ন নুরুল হাসান যতোটুকু সম্ভব ব্যাটিং করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সুদিনের প্রত্যাশায় নুরুল হাসান সোহানকে নেতৃত্বের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার দল কেমন হলো, সেই প্রশ্ন আসে একেবারের শেষের দিক। এমন কী দল ঘোষণার আগে তার সঙ্গে নির্বাচকদের আলাপ হয়েছিল কি না তাও জানতে চাওয়া হয়। নুরুল হাসান সোহান জানান তিনি দল নিয়ে সন্তুষ্ট। তার সঙ্গে আলাপও হয়েছে। আবার সময়ও কম ছিল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসার পর নির্বাচকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে যখন জানানো হলো তখনও কথা হয়েছে। এখানে অপশন খুব বেশি একটা ছিল তেমনও না। যারা খেলছে শেষ কয়েক বছর ধরে তারাই আছে। আমি বলবো না যে, ডিসকাস করার অনেক সময়ও ছিল। যে টিমটা পেয়েছি সেটাতে আমি হ্যাপি।’
উইন্ডিজ থেকে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরেছে দুই ধাপে ২০ ও ২১ জুলাই। সোহান ফিরেছেন ২১ জুলাই। পরের দিনই অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় তার নাম। এদিকে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশ্যে দল নিয়ে উড়াল দেবেন ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে। বর্তমানে ক্রিকেটাররা সবাই ছুটি কাটাচ্ছেন। কোচিং স্টাফদের অনেকেই আছেন নিজ নিজ দেশে ছুটিতে। তাই দেশে অফিসিয়ালি কোনো অনুশীলন হচ্ছে না। তবে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করছেন। যেমন আজ করেছেন নুরুল হাসান সোহান। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সতীর্থদের সঙ্গে দল নিয়ে সে রকম কোনো আলোচনা হয়নি নুরুলের। এখন জিম্বাবুয়েতে যাওয়ার পরই পরিকল্পনা ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জিম্বাবুয়ে যাওয়ার পর হয়তো আলোচনা হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার পর তেমন আলোচনায় বসা হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে’ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ওই জায়গায় উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আশা করছি আমরা ভালো করতে পারবো।’ আফিফ হোসেন ধ্রুবকে প্রমোশন দিয়ে উপরে খেলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে আপনি ব্যাটিং অর্ডার সেট করে কিছু করতে পারবেন না। অনেক সময় পরিস্থিতি একেক রকম থাকে। পরিস্থিতির ওপর ডিমান্ড করে।’
নুরুল হাসান সোহান যখন নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন, তখন টি-টোয়েন্টিতে তার নিজের জায়গাই পাকাপোক্ত নয়। এখন সেই অনিশ্চয়তা দূর হলো। কিন্তু এই ফরম্যাটে ব্যাট হাতে তিনি বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩৩ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৩৩। এর কারণ হিসেবে নুরুল হাসান সোহান মনে করেন তিনি যেখানে ব্যাটিং করেন, সেখানে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কম থাকে। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা যারা মিডল বা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করি এখানে আমাদের রানের সংখ্যার থেকে স্ট্রাইক রেট বা ইমপ্যাকটটা গুরুত্বপূর্ন। জিনিসটা এমন হতে পারে ১৫-২০ রান ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু ওই রান খেলার ওপর কতটা ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে ওটায় চিন্তা থাকবে। যখন আমি খেলোয়াড় হিসেবে খেলি আমার লক্ষ্য থাকে দল আমার কাছে কি চাইছে সেটা পূরণ করার। যেহেতু এই সিরিজে অধিনায়কত্ব করছি আমার লক্ষ্য থাকবে টিম হিসেবে কেমন খেলতে পারি ওইটা মেক শিউর করা।’
এমপি/