মাহমুদউল্লাহ বিশ্রামে না বলি!
হঠাৎ কী এমন হয়ে গেল যে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপর দিয়ে এমন ঝড় বয়ে গেল? যেখানে তিনি টি-টোয়েন্টি দলেও নেই, নেতৃত্বেও নেই! টেস্ট ক্রিকেটের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনোই ভালো দল ছিল না। টেস্টে যেমন মাঝে মাঝ জয় আসে, তেমনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও। ২০০৬ সালে যদিও নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ খুলনা শেষ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ৪৩ রানে হারিয়ে সূচনা করেছিল। দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। তিনি এ একটি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু শুরুর এ যাত্রা বাংলাদেশ পরবর্তী সময় ধরে রাখতে পারেনি। শুধুই হারের সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ একইভাবে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও উইন্ডিজকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে হারিয়ে শুরু করেছিল। কিন্তু এই শেষ। এরপর এ আসরের মূল পর্বে বাংলাদেশ আর কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১২৮টি ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ৪৪টিতে। যার অধিকাংশই ছোট দলগুলোর বিপক্ষে। যেখানে আইসিসিরি সহযোগী দেশও আছে বেশ কয়েকটি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা সাফল্য বলতে ঘরের মাঠে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়। পরিসংখ্যানগুলো তুলে ধরা হয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দৈন্যদশা বুঝতে। এ দলকে আশরাফুল, সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি নেতৃত্ব দিয়েও অবস্থার হেরফের করতে পারেনি, মাহমুদউল্লাহও পারেননি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যখন চরম ভরাডুবি হয়েছিল, তখনো মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্ব বা ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে বিসিবি। সেই বিশ্বকাপ শুরু হতে যখন তিন মাস বাকি, তখনই সরিয়ে দেওয়া হলো মাহমুদউল্লাহকে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থতা অব্যাহত ছিল উইন্ডিজ সফরেও। দল হেরেছে। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তার নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এত দ্রুতই যে তার নেতৃত্ব হাওয়া হয়ে যাবে, তাকে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি। মাহমুদউল্লাহর মতো টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুলও ছিলেন একইভাবে সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। এটি নিয়ে অনেকদিন বলাবলির পর মুমিনুলকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে ব্যাট হাতে ফর্মে ফিরতে তাকে উইন্ডিজ সফরে দলে রাখা হয়। সেখানে প্রথম টেস্ট খেলেনও। যদিও ব্যাট তার হাসেনি। ফলে পরের টেস্টে সেরা একাদশ থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহকে সেরকম কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। একসঙ্গে জবাই করা হয়েছে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দল থেকে বাদ দিয়ে বিশ্রামে পাঠিয়ে। এর পেছনে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্ব ও রান খরার পাশাপাশি অনেকেই আরেকটি বিষয় নিয়েও সন্দেহ করছেন। আর তা হলো উইন্ডিজ সফরে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডোমিনিকায় সমুদ্র যাত্রায় কয়েকজন ক্রিকেটার মারাত্মক রকমের অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বলছেন, ‘আপনারা প্লেয়ারদের অবস্থা দেখেন। এর লায়াবিলিটি কে নেবে? এখনো আপনার টু অ্যান্ড হাফ আওয়ার বাকি (মার্টিনেক থেকে ডোমিনিকা) আছে। ওইটার অবস্থা আরও খারাপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘চার/পাঁচজন ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। বাকিরা সব ফ্লাট। কেউ ভয়ে দাঁড়ানো অবস্থা নেই।’ ক্রিকেটারদের এ দুরাবস্থা তখন সর্বত্র তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিসিবিক এক হাত নেওয়া হয়েছিল।
একটি সূত্রে জানা গেছে, অধিনায়ক হিসেবে মিডিয়ার সামনে মাহমুদউল্লাহর এ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া বিসিবির অনেকেই ভালোভাবে নেননি। একদিকে সমালোচনা আরেক দিকে অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর এমন আচরণ আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল। তারা এ সময় মাহমুদউল্লাহর কাছে আরও সংযত আচরণ আশা করেছিলেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা আশা করেছিলেন। এরপর থেকেই বিসিবির নীতি নির্ধারকদের বেশ কয়েকজন মাহমুদউল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে জানা যায়। এ অসন্তুষ্টির সঙ্গে যোগ হয় উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলের হার, তার ব্যর্থতা, সঙ্গে দুর্বল নেতৃত্ব। ফলে মাহমুদউল্লাহকে সরানোর কারণ সামনে চলে আসে। তাই নেওয়া হয় দ্রুত সিন্ধান্ত? যদি তাই না হবে, তা হলে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্রামে পাঠানোর কথা বলে আবার ওয়ানডেতে রাখা হয়েছে?
এমপি/এসএন