ছাইদানি অস্ট্রেলিয়ারই
টেস্ট ক্রিকেটে সবেচেয় মর্যাদার লড়াই হলো অ্যাসেজ সিরিজ বা ছাইদানি। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের এই লড়াই মোটেই জমেনি। অনেকটা বিনা বাঁধাই অজিরা ছাইদানি ধরে রেখেছে। প্রথম দুই টেস্ট জিতে স্বাগতিকরা এমনিতেই এগিয়ে ছিল। সিরিজে ফিরে আসার জন্য মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের ফিরে আসার বিকল্প ছিল না। সেখানেই তারা আত্মসমর্পন করেছে বিনা যুদ্ধে। দুই দিন ও এক ঘণ্টার সামান্য কিছু বেশি সময়ে যবনিকা ঘটেছে বক্সিং ডে টেস্টের। যেখানে অজিরা জয়ী হয়েছে ইনিংস ও ১৪ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ব্যবধানে জয় দেখে মনে হবে তারা প্রথম ইনিংসে বিশাল রানের পাহাড় গড়ে জয়ী হয়েছে। আসলে তা নয়! প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২৬৭। এই রান তারা করেছিল ইংল্যান্ডকে ১৮৫ রানে অলআউট করে। এগিয়ে ছিল মাত্র ৮২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড এই রানই টপকাতে পারেনি। অলআউট হয়েছে মাত্র ৬৮ রানে। মেয়াদ ছিল মাত্র ২৭.৪ ওভার।
অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ে আছে একগাদা রেকর্ডও। অধিনায়ক হিসেবে জয় দিয়ে শুরু করার পর এবার সিরিজ জিতে যাত্রা শুরু করলেন অজি দলপতি পেসার প্যাট কামিন্স। ৩২ বছরে বয়সে অভিষেক হওয়ার পর পেসার স্কট বোল্যান্ড গড়েছে রেকর্ড। অভিষেকে সবচেয়ে কম ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট। বোলিং করেন মাত্র ৩.৪ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন রান ছিল এই মেলবোর্নেই। ১৯০৪ সালে ৬১ রান।
তৃতীয় দিন যে এভাবে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনে ধ্বস নামবে তা ছিল সবার কল্পনাতীত। প্রথম ইনিংসে তারা ১৮৫ রানে অলআউট হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৭ রানে অলআউট করে বেশি দূর যেতে দেয়নি। টেস্টের এ রকম চিত্রে একটি উত্তেজনাকর সমাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। যদিও দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩১ রান করেছিল ইংল্যান্ড। তারপরও সেখান থেকে ৬৮ রানে ইনিংস গুটিয়ে যাওয়া ছিল অবাক করার মতো।
উইকেটে ছিলেন চলতি বছর ফর্মের তুঙ্গে থাকা স্বয়ং দলপতি জো রুট। খুব বেশি দূর তিনি যেতে পারেননি। তারপরও তিনিই একা লড়াই করেছেন। দলের ৬৮ রানের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি তার, ২৮ রান। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান বেন স্টোকসের, ১১ রান। এছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। বাকি সবার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে টেলিফোন নাম্বার ৭, ৫, ০, ০, ৫, ৫, ০, ০, ২।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট ও বেন স্টোকস ৩১ রান থেকে ৪ রান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন দলের সংগ্রহকে। মিচেল স্টার্ক বেন স্টোকসকে ফিরিয়ে দিয়ে উইকেট পতনের যাত্রা শুরু করেন। দলপতি জো রুট এরপর জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে চেষ্টা করেন। তারা দলের রানকে ৬০ পর্যন্ত নিয়ে যান। এরপরই শুরু হয় বোল্যান্ড ভেল্কি। যে ভেল্কিতে পুঁড়ে ছাই হয়ে যান ইংল্যান্ডে শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যান। এই ছাই হওয়ার তালিকায় ছিলেন দলপতি রুট। বোল্যান্ড বোলিং তোপে পড়ে মাত্র ৫ রানে পড়ে ৪ উইকেট। বোল্যান্ড শিকার ধরা শুরু করেন বেয়ারস্টোকে দিয়ে। পরের ওভারে শিকার করেন জো রুটকে। এর পরের ওভারে শিকার মার্ক উড ও রবিনসন। উডকে শিকার করে তিনি অভিষেকেই শুধু ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিই গড়েননি। একই সঙ্গে দ্রুততম ৫ উইকেট নিয়ে টোসাক ও স্টুয়ার্ট ব্রডের পাশে নাম লেখান। তিনি ৫ উইকেট নেন মাত্র ১৯ বলে। একই রেকর্ড আছে টোসাক ও ব্রডেরও। আগের দিন তিনি এক ওভার বোলিং করে নিয়েছিলেন হাসিব হামিদ ও জ্যাক লিচের উইকেট। ইনিংসে তার বোলিং ফিগার ৪-১-৭-৬। অ্যান্ডারসনকে আউট করে শেষ পেরেক ঢুকান ইংরেজ শিবিরে।
এমপি/এসআইএইচ