অথচ তাইজুল অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেছিলেন!
অনেকেরই হয়তো চোখ কপালে উঠবে একদিনের ক্রিকেটে তাইজুল ইসলাম বিশ্বের প্রথম বোলার হিসেবে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেছিলেন জেনে! আসলেইতো তাই। তাইজুল ইসলামের শরীরে সাইনবোর্ড লাগানো তিনি টেস্ট বোলার। হ্যাটট্টিকতো দূরের কথা, তিনি যে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, এটাও হয়তো অনেকে বেমালুম ভুলে গেছেন।
২০১৪ সালে তার যখন সাদা পোষাকের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল, একই বছর একদিনের ক্রিকেটেও পথ চলা শুরু হয়। সাদা পোষাকে প্রতিপক্ষ ছিল উইন্ডিজ। জ্যামাইকার কিংস্টনে অভিষেকে তাইজুল পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ১৩৫ রানে। ম্যাচে উইন্ডিজ জয়ী হয়েছিল ১০ উইকেটে। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে আর সেভাবে বোলিং করার সুযোগ মিলেনি। তিন মাস পর একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকে তার প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছিল সব ম্যাচ। তাইজুল খেলেছিলেন সিরিজের শেষ ম্যাচ। টেস্টের মতো এখানেও তিনি নিজের অভিষেককে বর্ণিল করে তুলেছিলেন। টেস্টের পাঁচ উইকেট যেমন ছিল অভিষেকের মাইলফলক, তেমনি একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিক ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। কারণ তার আগে আর কেউ এমন নজির স্থাপন করতে পারেননি।
ম্যাচে তাইজুলের হ্যাটট্রিক ছিল দুই ওভার মিলে। দুই ওভারেই তিনি জোড়ায় জোড়ায় উইকেট নেন। প্রথমে নিজের ষষ্ট ওভারের প্রথম ও শেষ বলে নেন উইকেট। প্রথমে আউট করেন সুলোমুন মিরেকে এলবিডব্লিউ আউট করে, পরে পানইয়াঙ্গারাকে বোল্ড করে। পরের ওভারের প্রথম বলেই তিনি আউট করেছিলেন জন নিম্বুকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। পরের বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করে ডুকে পড়েন ইতিহাসের পাতায়। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে সুযোগ পেয়ে এভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন তাইজুল। কিন্তু তারপরও একদিনের ক্রিকেটে তার আসন পাকাপোক্ত হয়নি।
অভিষেকে এমন নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখানোর পর তিনি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু শুধামাত্র নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১০ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে উইকেট শূণ্য ছিলেন। হ্যাটট্রিক করার পর যখন তিনি দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার সুযোগ পান চার ম্যাচ পর, সেখানে উইকেট না পাওয়ার পর তার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে আরও লম্বা বিরতি পড়ার কথাই। হয়েছেও তাই। সেই লম্বা বিরতিটা ছিল অনেক বড়ই। ঘরের মাঠে একে একে তিনি খেলার সুযোগ পাননি পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের কোনো ম্যাচ। এসব কটিই সিরিজই বাংলাদেশ জিতেছিল। আবার সুযোগ পান আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে। কিন্তু এবারও তিনি ভালো করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে এক উইকেট পেলেও পরের ম্যাচে থাকেন উইকেট শূণ্য। ব্যস এভাবেই চলতে থাকে তার একদিনের ক্রিকেটের পথ চলা। কখনো কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়লে বা ব্যক্তিগত কারণে না খেললে মনে পড়ে তাইজুলের কথা। দলে ডাক পান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে মিলে সেরা একাদশে সুযোগ।
তাইজুলের এবারের সুযোগও ছিল সে রকমই। সাকিব আল হাসান না খেলাতে তার দলে ডাক পড়ে। তিনি এমনই ডাক পান যে বিসিবি থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানানোর প্রয়োজনও মনে করা হয়নি। তিনি যে দলে আছেন তা হয়তো অনেকেই জানতেন না। অঘোষিত থাকলেও প্রথম দুই ম্যাচে তার সুযোগ মিলেনি। অবশ্য সুযোগ পাওয়ার কথাও নয়। যেখানে মিরাজ-নাসুমের মতো বোলাররা আছেন। কিন্তু শেষ ম্যাচে গিয়ে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। চার স্পিনার খেলানোর ‘তথ্য’ থেকে চতুর্থ বোলার হিসেবে তিনি একাদশে ঢুকে পড়েন। তারপর দেখার ভেল্কি। যা ছিল অভিষেকের পর প্রথম। প্রথম বলেই উইকেট। এরপর আরো পাঁচ উইকেট। ১০ ওভারে ২৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট। তার শিকার ছিলেন একে একে ব্রান্ডন কিং, শাই হোপ, রভম্যান পাওয়েল, কেমো পল ও অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। কেমো পল ছাড়া বাকি চারজনই ব্যাটসম্যান। এই ম্যাচের আগে তিনি ৯ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। এখন তার উইকেট সংখ্যা ১০ ম্যাচে ১৭টি। তবে এ কথা সত্য এমন নজর কাড়া বোলিংয়ের পর তাইজুলের পরের ম্যাচ খেলা নিয়েতো শঙ্কা আছেই, দলে সুযোগ পান কি না কে জানে। সাকিব আসলেই তিনি মাইনাস!
তাইজুলের এমন বোলিংয়ে তামিম ইকবাল ছিলেন মুগ্ধ। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণি মঞ্চে তিনি বলেন, ‘তাইজুলের কথা আমাকে আলাদা করে বলতেই হবে। গোটা সফরে সে দলের সঙ্গে ছিল। কিন্তু কোনো ম্যাচ (একদিনের ম্যাচ) খেলার সুযোগ পায়নি। অনুশীলনে নিয়মিত এসেছে। কিন্তু যখন সে সুযোগ পেলো, তখন সেটিকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে।’ ২০২০ সালের ৫ মার্চ সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ একদিনের ম্যাচ খেলার পর আবার খেলার সুযোগ পাওয়াতে তাইজুল নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। তিনি বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে আজকে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। কারণ দলে সাকিব, নাসুম ছাড়াও আরও অনেক বাঁহাতি স্পিনার আছে। তাই সুযোগ পেয়ে আমি খুবই খুশি যে তা কাজে লাগাতে পেরেছি।’ দীর্ঘদিন পর সুযোগ পেলেও ভালো করতে পারবেন কি, না তা নিয়ে কোনো চাপ ছিল না বলে পুরস্কার বিতরণি মঞ্চে জানান তাইজুল। তিনি বলেন, ‘আমার মাঝে কোনো চাপ কাজ করেনি। আমি আমার বেসিক মেনে উইকেট টু উইককেট বল করে গেছি এবং তা কাজে লেগেছে।’
/এএস