ফিরে দেখা ২০২১
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হতাশার নাম ক্রিকেট
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ বিভিন্ন সেক্টরে অনেক উন্নতি করেছে। সেই উন্নতির তালিকায় আছে ক্রীড়াঙ্গনও। ক্রীড়াঙ্গনে সেটি আবর্তিত হয়েছে ক্রিকেট ঘিরে। একমাত্র ক্রিকেটই স্বাধীনতার পর দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে শামিল করেছিল। সে ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। আর কখনও অন্য কোনো ক্ষেত্রে এ রকম হয়নি। এরপর যা হয়েছে তাও এই ক্রিকেটকে ঘিরেই। তাই ক্রিকেট দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা বাঙ্গালি জাতির আশা-ভরসার প্রতীক। এক টুকরো আনন্দ বিলাস। সেই ক্রিকেটই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে একরাশ হতাশা। ব্যর্থতার অথৈ সাগরে খাচ্ছে হাবুডুবু। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চরম ব্যর্থতায় দেশবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই রক্তক্ষরণ থেকে হয়েছে ক্ষত। যে ক্ষত না শুকিয়ে আরও গভীর হচ্ছে। কারণ ক্রিকেট দলের ব্যর্থতা অব্যাহত রয়েছে। চুইংগামের মতো হচ্ছে লম্বা!
ব্যর্থতার নাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
করোনার কারণে অন্য অনেক কিছুর মতোই ২০২০ সালে গৃহবন্দি ছিল ক্রিকেট। সেখান থেকে মুক্তির আনন্দ পায় ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। সিরিজ শুরু করেছিল তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে। সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করলেও দুই টেস্টের সিরিজে নিজেরাই হয় হোয়াইটওয়াশ। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারলেও জিম্বাবুয়ে-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ ছিল জয়-পরাজয়ের মিশ্রণে। এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রীতিমতো নাজেহাল করে ছাড়ে। দুইটিই ছিল পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ও নিউ জিল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে জয় পায়।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের এ রকম অর্জনে বুক ভরা আশা নিয়ে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আর সেখানেই নেমে আসে ঘোর অমানিশা। মূল পর্বে যাওয়ার আগে ছিল প্রাথমিক রাউন্ডে উতরে যাওয়া। সেখানে প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে খায় হোচট। সেই হোচট এমনই বিষ ফোঁড় হয়ে দেখা দেয় যে, কোনো রকমে মূল পর্বে যেতে পারলেও সেখানে গিয়ে আর কোনো ম্যাচ জিততেই পারেনি। সময় যত গড়িয়েছে নিজেদের মানের অবনতি তত হতে থাকে। নিম্নগামী রেখার মতো তা একেবারে নিচে নেমে আসে। শেষ দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে শতরানও করতে পারেনি।
জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ যেভাবে হেরেছিল, তাতে করে মনে হয়েছে আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে নবিশ শিশু। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর স্বয়ং বিসিবি সভাপতিও প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের একহাত নেন। বিসিবি সভাপতির এভাবে প্রকাশ্যে বলাটাকেও অনেকে ভালোভাবে নেননি। তার কথার জবাব মুশফিক-মাহমুদউল্লাহও পরোক্ষভাবে দেন। মুশফিক তো বলেই ছিলেন আয়নায় নিজেদের মুখ দেখার জন্য! এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীর্যক বাক্যবানে জর্জরিত হতে থাকে দল ও দলের ক্রিকেটাররা। সেই ঝড় এখনও থামেনি। এই ঝড় আরও বেগবান হয়েছে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাজেভাবে হেরে। বাংলাদেশ দল এতোটাই খারাপ খেলেছে যে দুই টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সবমিলিয়ে তিনদিনও খেলা হয়নি। তারপরও হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন সূর্যোদয়ের আশায় বাংলাদেশ দল গিয়েছে নিউ জিল্যান্ডে। নতুন বছরের প্রথম দিনই মাঠে নামবে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ৭টি। পাঁচটিতে হারের বিপরীতে জয় মাত্র একটিতে। সেই জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২০ রানে। একমাত্র ড্র ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টি ২৭ ম্যাচ খেলে জয় ১১টি। যার সাতটিই ছিল নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে হোম কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে। এ ছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুইটি ও ওমান, পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে একটি করে জয় আছে। ১৬টি হারের মাঝে সবচেয়ে বেশি হার ছিল নিউ জিল্যান্ডের কাছে পাঁচটি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল দুইটিতে। একটি করে হার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সফল ওয়ানডেতে। চলতি বছরও সেই ধারাবাহিকতা ছিল। ১২ ম্যাচ খেলে আটটিতেই পেয়েছে জয়। জয়গুলো ছিল ওয়েস্টইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি করে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুইটি। চার হারের তিনটি ছিল নিউ জিল্যান্ড ও একটি শ্রীলঙ্কার কাছে।
টেস্ট ক্রিকেটে লিটন দাস ৭ ম্যাচের ১২ ইনিংসে ৫৯৪ রান করে বাংলাদেশিদের মাঝে আছেন সবার উপরে আর বিশ্বে বারো নম্বরে। মমিুনল হক ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংস, ৫০৩ রান করে আছেন লিটনের পরেই। বিশ্বে তার অবস্থান আবার সতেরো। বোলিংয়ে সবার উপরে তাইজুল। ৬ ম্যাচে ১০ ইনিংস ৯১৫ রানে ৩০ উইকেট নিয়ে বিশ্ব তালিকায় আছেন আটে। তার সেরা বোলিং সেরা ৭/১১৬। মেহেদী হাসান মিরাজ ৭ ম্যাচে ১২ ইনিংস ৯১৮ রানে ২৫ উইকেট নিয়ে আছেন বাংলাদেশিদের মাঝে দ্বিতীয় স্থানে। তার সেরা বোলিং ৫/৮২। বিশ্বে তার অবস্থান ষোলো নম্বরে।
ওয়ানডেতে দেশের মাঝে সবার উপরে তামিম ইকবাল। ১২ ম্যাচে ৪৬৪ রান করে বিশ্বে আছেন তিন নম্বরে। মুশফিক ৯ ম্যাচে ৪০৭ রান করে তামিম ইকবালের পরে থাকলেও বিশ্বে তার অবস্থান ছয়ে। তিনে থাকা মাহমুদউল্লাহ ১২ ম্যাচে ৩৯৯ রান করে আছেন বিশ্ব তালিকায় আটে। বোলিংয়ে দেশি বোলারদের মধ্যে সবার উপরে মোস্তাফিজ। ১০ ম্যাচে ৩৮৮ রান দিয়ে তার উইকেট ১৮টি। সেরা বোলিং ১৬ রানে ৩ উইকেট। বিশ্বে তার অবস্থান চারে। সাকিব ৯ ম্যাচে ২৯৮ রান দিয়ে ১৭ উইকেট নিয়ে দেশে ও বিশ্বে আছেন মোস্তাফিজের পরের স্থানেই। তার বোলিং ২৫ রানে ৪ উইকেট।
টি-টেয়েন্টিতে মোহাম্মদ নাঈম ২৬ ম্যাচে ৫৭৫ রান করে দেশি ব্যাটসম্যানদের মাঝে এক ও বিশ্বে ছয় নম্বরে আছেন। ২৬ ম্যাচে ৪৯৬ রান করে মাহমুদউল্লাহ নাঈমের পরে থাকলেও বিশ্বে আছেন নয় নম্বরে। ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও দেশিদের মাঝে সবার উপরে মোস্তাফিজ। ২০ ম্যাচে তার উইকেট ২৮টি। বিশ্বে তার অবস্থান পাঁচে। এখানেও দেশিদের মাঝে সাকিব আছেন তার পরের স্থানে। ১৮ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বে সাকিবের অবস্থান নয়ে।
টেস্টে সেঞ্চুরি হয়েছে সাতটি। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল ২টি করে সেঞ্চুরি করেছেন। নাজমুলের ইনিংস ছিল ১৬৩ ও অপরাজিত ১১৭। মুমিনুলের দুইটি সেঞ্চুরি ছিল (১২৭ ও ১১৫)। একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন সাদমান ইসলাম (১১৫), মাহমুদউল্লাহ (১৫০) ও লিটন দাস (১১৪)। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন দুইজন। তামিম ইবাল ১১২, লিটন দাস ১০২। এ ছাড়া একটি ম্যাচে সাকিব ৯৬ রানে অপরজিত ছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এমনকি সত্তরোর্ধ্ব ইনিংসও নেই একটি।
তামিম ইকবালের নিজেকে সরিয়ে নেওয়া
জিম্বাবুয়ে সফরের পর তামিম ইকবালকে আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি। ইনজুরির কারণে তিনি টি-টেয়েন্টি সিরিজের পর টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি দলের বাইরেই আছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি নিজ থেকেই খেলবেন না বলে বিসিবিকে জানিয়ে দেন। এর মাঝে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে ছাড়া টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
সাকিবের ফেরা ও নিষেধাজ্ঞা!
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার জন্য আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ করে তিনি আবার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফেরেন ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজরে বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। সেই সিরিজে তিনি সেরা ক্রিকেটার হন। নিষিদ্ধ থাকার কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটের দল-বদল তিনি করতে পারেননি। কিন্তু সে বছর খেলাই হয়নি। পরে এবার ৫০ ওভারের খেলার পরিবর্তে ২০ ওভারের খেলা হয়। সাকিবকে দলে নেয় মোহামেডান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে খেলায় আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে ফেলেন। তর্কে জড়িয়ে পড়েন আম্পায়ারের সঙ্গেও। এ ঘটনায় সাকিব তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি আবার লিগে মোহামেডানের হয়ে অংশ নেন। লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী।
এখানেই শেষ নয় সাকিবের ঘটনা। নিউ জিল্যান্ড সফরে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে টেস্ট সিরিজ না খেলার জন্য ছুটি নেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নেন বলে জানা যায়। খেলার পাশাপাশি সাকিব ব্যবসায়ীও হয়ে উঠেছেন। এ বছর তিনি একটি ব্যাংকের সঙ্গে মালিক হিসেবে সম্পৃক্ত হন। সাকিবের সঙ্গে তার মাও আছেন মালিকপক্ষ হিসেবে।
বিসিবির বিতর্কিত নির্বাচন
এ বছর ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। গত দুই বারের মতো এবারও বলা যায় নির্বাচন হয়নি। তিন ক্যাটগরিতে নির্বাচন হলেও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্লাব কোটায় ছিল নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও তারা ছিলেন ডামি প্রার্থী। তবে এই কোটায় পরিচালনা পরষদে ঢুকতে জোর লবিং হয়েছিল। যে কারণে সেখানে কিছু পরিবর্তনও আনতে হয়েছে। প্রথমে বিসিবি সভাপতির অঘোষিত তালিকায় থাকলেও পরে বাদ পড়ে যান মোহামেডান ক্লাবের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান। তিনি এককভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচনের আগের দিন প্রত্যাহার করে নেন। বিসিবির আগের পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল মনোনয়ন পত্র কিনলেও পরে জমা দেননি। জমজমাট নির্বাচন ছিল বাকি দুই ক্যাটাগরিতে। ‘এ' ক্যাটাগরিতে খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ক্রিকেট কোচ ও বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। একইভাবে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে হেরে যান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট।
এই নির্বাচনে নতুন করে পরিচালক হয়ে আসেন বেশ কয়েকজন। আবার বেশ কয়েকজন পরিচালক নিজ থেকেই সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের পর নাজমুল হাসান পাপন টানা তৃতীয়বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হন।
প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার পরও বিসিবি এই নির্বাচনে অদ্ভুত কিছু নিয়ম করে। করোনার কারণে পোস্টাল ভোট, ই-মেইলে ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে করোনাকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও সে সময় দেশের সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। স্কুলও খুলে দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে জয়ী হতেই এ রকম ব্যবস্থা করা হয়েছিল অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো সদোত্তর দিতে পারেনি। এমনকি কতজন পোস্টাল ভোট দিয়েছেন, কতজন ই-মেইলে ভোট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন ফলাফল প্রকাশের সময় তাও জানায়নি।
মোহামেডান ক্লাবের নির্বাচন
বাংলাদশের ক্লাবগুলোতে নির্বাচন হয়ই না। সেখানে ব্যতীক্রম ছিল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। ক্যাসিনোকাণ্ডের কারণে থমকে যাওয়া ক্লাবটিতে এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। ১৬টি পরিচালক পদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ক্লাবের গভর্নিংবডির সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অব.) আব্দুল মুবীন।
নির্বাচনের পর ফুটবল-ক্রিকেট-হকিতে শক্তিশালী দল গড়া হয়। ক্রিকেটে আগামী মৌসুমের জন্য সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-তাসকিনদের নিয়ে শক্তিশালী দলও গড়া হয়। কিন্তু বিসিবির নির্বাচনকে ঘিরে আবার ক্লাবটিতে অন্তঃদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিশেষ করে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে। মোহামেডান ক্লাব থেকে আগে কাউন্সিলর হয়েছিলেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও মাহবুব আনাম। এবারও এই দু্ইজন আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ক্যাসিনোকাণ্ডের কারণে লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে কাউন্সিলরশিপ দিতে আগ্রহী ছিলেন না ক্লাবটির গভর্নিংবডির সভাপতি। পরে লোকমান হোসেনের পরিবর্তে সেখানে কাউন্সিলর করা হয়েছিল ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামানকে। মাহবুব আনাম ছিলেন অপর কাউন্সিলর।
মেয়েদের সাফল্য
ছেলেদের হতাশার বছরে আনন্দ বার্তা ছিল মেয়েদের ক্রিকেটে। প্রথমবারের মতো তারা মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে প্রথম দিন ম্যাচের দুইটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। শুরু করেছিল পাকিস্তানকে হারিয়ে। পরে অমিক্রনের কারণে আইসিসি আসর স্থগিত করে দেয়। এতে করে র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে বাঘিনীরা বিশ্বকাপে খেলার সনদ পেয়ে যায়। এই আসর খেলার আগে তারা জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হার মানিয়েছিল।
মাহমুদউল্লাহর অবসর নিয়ে নাটক
পঞ্চপাণ্ডবের একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তিনি আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে দলে থেকেও তিনি বাদ পড়েছিলেন। টি-টোয়েন্টি দলের এই অধিনায়ক দীর্ঘদিন টেস্ট দলের বাইরে থাকার পর জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে আবার ডাক পেয়েছিলেন। ফিরেই খেলেন ১৫০ রানের ইনিংস। আর সে ইনিংস খেলার পরই একই টেস্টের মাঝ পথে ড্রেসিংরুমে তিনি সতীর্থদের জানান সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে তার অবসরের কথা। হারারেতে টেস্টের শেষ দিন সতীর্থরা তাকে গার্ড অব অর্নারও প্রদান করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মিডিয়ার সামনে তিনি সে কথা ঘোষণা দেননি। জানা গেছে বিসিবির উপর মহলের নির্দেশেই মাহমুদউল্লাকে বিষয়টি চেপে যেতে হয়েছিল। পরে তার সেই ঘোষণা এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল ঘোষণার পর বিসিবি থেকে পাঠানো প্রেস রিলিজে।
নাসিরের ঘটনা
বছরের শুরুতেই নাসির হোসেন অন্যজনের বিবাহিত স্ত্রীকে বিয়ে করে বিতর্কের জন্ম দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাস দিবসে নাসির বিয়ে করেন কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মিকে। জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠান করেন ১৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে আবির্ভূত হন রাকিব হাসান নামে এক ব্যক্তি। যিনি তামিমা তাম্মির স্বামী। তাদের ৮ বছরের এক কন্যা সন্তানও আছে। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তামিমাকে বিয়ে করা নিয়ে নাসির-রকিবের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে নাসির সব স্বীকারও করেন যে, তিনি জেনে-শুনেই বিয়ে করেছেন। বিষয়টি পরে আইন-আদালতে গড়ায়।
এমপি/টিটি