তামিম-পাপনের কথার লড়াই
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার অভিভাবক। কিন্ত্র প্রায় ক্ষেত্রেই তিনি তার সেই অভিভাবকত্ব ধরে রাখতে পারছেন না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রাথমিক পর্বের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সমালোচনা করেছিলেন।
এ নিয়ে পরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মুশফিকুর রহিম পরোক্ষভাবে বিসিবির সভাপতিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন আয়নায় নিজেদের মুখ দেখতে। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পূর্বে তিনি আবারও দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্য করে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি সরাসরি মুশফিকুর রহিমের নামও উল্লেখ করেছিলেন।
এর জবাবে চট্টগ্রাম টেস্টে মুশফিক সেঞ্চুরি করার পর তার স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, বিকল্প আছে তো? আর মুশফিকুর রহিম জানিয়েছিলেন আপাতত তিন ফরম্যাটেই তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন। এবার তামিম ইকবালকে নিয়ে বিসিবি সভাপতি করেছেন বিস্ফোরকব মন্তব্য।
রবিবার (৫ জুন) একটি রকি টেলিকমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানে তামিম ইকবাল তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বলার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না বলে জানিয়ে ছিলেন। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি সোমবার একটি বিদেশি ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে তামিম মিথ্যাচার করেছেন বলে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এবার তামিম ইকবাল দিয়েছেন তার জবাব।
নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২৬৯ শব্দের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন তামিম ইকবাল। যেখানে তিনি বিসিবির সভাপতির কথার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি কোনো মিথ্যাচরা করেননি এমন কি তার বক্তব্যে কোথাও তিনি বিসিবির কাউকে দোষারোপও করেননি বলে উল্লেখ করেন।
তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘আামার আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি কথার সূত্র ধরে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বা মিডিয়ায় কিছু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে দেখতে পাচ্ছি। দুইদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে আমি স্পষ্ট করে বলেছি, আমার ঘোষণা আমি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না, অন্যরাই নানা কিছু বলে দিচ্ছে। এখানে বোর্ড কমিউনিকেট করেনি বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি, এ রকম কোনো কথা আমি একবারও বলিনি।’
বোর্ড থেকে কয়েকবারই আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে টি-টোয়েন্টি নিয়ে। আমি ৬ মাসের বিরতি নিয়েছি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করি। এরপরও বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে কয়েক দফায়। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আমি কখনোই তুলিনি।
আমি সেদিন অনুষ্ঠানে যা বলেছি, আজকে আবার বলছি, ‘টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার যে প্লান, সেটা তো আমাকে বলার সুযোগই দেওয়া হয় না। হয় আপনারা (মিডিয়া) বলে দেন, নয়তো অন্য কেউ বলে দেয়। তো এভাবেই চলতে থাকুক। আমাকে তো বলার সুযোগ দেওয়া হয় না। এতদিন ধরে আমি ক্রিকেট খেলি, এটা ডিজার্ভ করি যে আমি কী চিন্তা করি না করি, এটা আমার মুখ থেকে শোনা। কিন্তু হয় আপনারা কোনো ধারণা দিয়ে দেন, নয়তো অন্য কেউ এসে বলে দেয়। যখন বলেই দেয়, তখন আমার তো কিছু বলার নেই।’
এটুকুই বলেছিলাম। এখানে কী উল্লেখ আছে যে, কেউ যোগাযোগ করেনি? এ রকম কোনো শব্দ বা ইঙ্গিত আছে? খুবই সাধারণ ভাষায় বলেছি, আমার কথা আমাকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। ৬ মাসের বিরতি নিয়েছি, এর মধ্যেও মিডিয়া নানা কথা লিখে বা বলে যাচ্ছে, অন্যরাও কথা বলেই যাচ্ছেন।
বোর্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নিয়মিতই আছে এবং তারা খুব ভালোভাবেই জানে, টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার ভাবনা কোনটি। আমি স্রেফ নিজে সেই কথাটুকু বলতে চাই, সেই সময়টুকু চাই।
সময় হলে আমার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আমি জানাব। ৬ মাস হতে তো এখনো দেড় মাসের বেশি বাকি। কিন্তু সেই সময়টার অপেক্ষা কেউ করছে না। এটাই দুঃখজনক।
তামিম ইকবালের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকবাজকে সোমবার বলেছিলেন, ‘এটা স্রেফ মিথা কথা। আমার বাসায় তাকে ডেকে টি-টোয়েন্টি খেলতে আমি চারবার অনুরোধ করেছি। তাকে খেলার জন্য বোর্ডের অন্য সদস্যরাও অনুরোধ করেছে, কিন্তু সে বলেছে খেলবে না। এখন দেখেন কী বলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে ফেরানোর জন্য অনেকবার চেষ্টা করা হলেও সে টি-টোয়েন্টি খেলবে না বলে লিখিত দিয়েছে। আমি আসলে বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায়। সে যা বলে তাকে বলতে দিন। যা প্রমাণ আছে আমাদের হাতে, তা হাজির করব আমরা।’
এমপি/এমএমএ/