বাংলাদেশের জন্য হুমকি নতুন বল: সিডন্স
নতুন বছর বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল স্বপ্নের মতো। যে নিউজিল্যান্ডে তিন ফরম্যাটেই ছিল না কোন জয়, সেখানে বাংলাদেশ দল অসাধ্য সাধন করে। নিউ জিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনকে জয় করেছিল মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট আট উইকেটে জিতে। এই জয় ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এমন জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়েছিল সাদা পোষাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে দুই দিন কেটে গেছে। কিন্তু সবই ছিল ভুল ধারনা। এই জয়ের পর পরবর্তি টেস্টগুলো বাংলাদেশের জন্য হয়ে আসে দু:স্বপ্ন নিয়ে। সর্বত্রই বড় ব্যবধানে হার বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গিয়েছিল সেই আগের জায়গাতেই।
বাংলাদেশের এই দু:সময় দূর হয়নি ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও। এমন দুরাবস্থার মাঝেই বাংলাদেশ দল উইন্ডিজে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে। উইন্ডিজের আগের শক্তি না থাকলেও বর্তমান শক্তির সঙ্গেও পেরে উঠে না বাংলাদেশ দল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ টেস্টে দলের একটি অংশ উইন্ডিজ রওয়ানা হয়ে গেছে। টেস্ট দলের বাকিরা যাবে ৬ জুন। এরপর ২২ জুন যাবে ওয়ানডে দলের সদস্যরা। আপাতত যারা দেশে আছেন তাদের নিয়ে কাজ করছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে দলের যে দূরাবস্থা তার আলোকে উইন্ডিজ সফর কেমন চ্যালেঞ্জিং হবে জানতে চাওয়া হলে জেমি বলেন, 'মূল হুমকি তো নতুন বল। নতুন বলের ব্যাটিংয়ে আমাদের আরও ভালো করতে হবে। মুমিনুল ফর্মে ফিরলে দারুণ হয়। আমি জানি, শান্ত খুব ভালো ক্রিকেটার। আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, শান্ত খুব ভালো ব্যাটসম্যান। ওর ফর্মে ফেরা প্রয়োজন আমাদের জন্য। আমাদের উদ্বোধনী জুটি চট্টগ্রাম টেস্টে যেভাবে খেলেছে, সেরকম প্রয়োজন।
তামিম ও মুশফিক ভালো ফর্মে আছে, কাজেই ভালো কিছু হতে পারে বলে মনে হয়। তবে ২০ রানে ৫ উইকেট, ২০ রানে ৪ উইকেট, এসব থামাতে হবে আমাদের। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। সম্ভবত অনেক দিন থেকেই এটা আমাদের সমস্যা। নিশ্চিত করতে হবে যেন সমাধান বের করতে পারি'। চাপের কারণে এ রকমটি হচ্ছে বলে জানান সিডন্স। তিনি বলেন, 'স্রেফ চাপের কারণে। এই সময়টা (নতুন বলের সামনে) ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন। ইংল্যান্ডে চলতি টেস্ট ম্যাচের দিকে যদি তাকান, দুই দলের ক্ষেত্রেই এটা হয়েছে। এরকম হয়েই থাকে, খেলাটাই এমন। নতুন বলের ব্যাটিং, দিনের শেষ ঘণ্টায় নতুন বল খেলা, এসব সবসময়ই কঠিন।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। অবশ্য উইন্ডিজের সেই দলটি দ্বিতীয় সারির। বোর্ডের সঙ্গে আর্থিক বিষয় নিয়ে দাবী-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র ক্রিকেটাররা না খেলার ঘোষণা দিলে তখন বোর্ড বাধ্য হয়ে নতুনদের মাঠে নামিয়েছিল। সেই সফরে জেমি সিডন্স ছিলেন দলের প্রধাণ কোচ। সেই সিরিজের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, 'এরপরও তো আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছি। তবে ক্রিকেটারদের হয়তো ওই সফরের ভালো কিছু স্মৃতি থাকবে, বিশেষ করে সিনিয়রদের। তবে এখন তো পুরোটাই নতুন। আমাদের দল বদলে গেছে, ওদের দল তো বদলে গেছেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে হলে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। তবে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমরা যাচ্ছি। দারুণ কিছু পারফরম্যান্স আমাদের ছিল। স্রেফ কিছু বাজে মুহূর্তও ছিল। ওই বাজে মুহূর্তগুলো বন্ধ করতে হবে আমাদের, যেটির চড়ামূল্য দিতে হয়। ২০ রানে ৫ উইকেট, ২০ রানে ৪ উইকেট, এসব হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের বোলিং ইউনিটকেও আরও মিতব্যয়ী হতে হবে।'
সিডন্সের ক্লাসে মুনিম শাহরিয়ার নতুন। ফিরে এসেছেন এনামুল হক বিজয়। তাদের সর্ম্পকে তিনি বলেন, 'ওরা সবাই পরস্পর থেকে আলাদা ধরনের। মুনিম অনুশীলন করছে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংস ওপেন করার ব্যাটিং। মিরাজ তিন সংস্করণের জন্যই অনুশীলন করছে। টি-টোয়েন্টিতে আরও ভালো ক্রিকেটার হয়ে ওঠার চেষ্টাও সে করছে, যেন দলে জায়গার দাবি জানাতে পারে। পাশাপাশি টেস্ট ম্যাচের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিয়াদ প্রস্তুত হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের জন্য। কেউ লাল বলে, কেউ সাদা বলে অনুশীলন করছে। একেকজনের মনোযোগ একেক দিকে'।
দারুণ ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহিম এই সফরে নেই। পবিত্র হজ করবেন বলে তিনি ছুটি নিয়েছেন। মুশফিকের শূন্যতা নিয়ে তিনি বলেন, 'কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের কাজটা আরও কঠিন হবে তাকে ছাড়া। মুশফিকের জায়গায় হয়তো রাব্বি খেলবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচে সে ভালোই খেলেছে। সে আরেকটি সুযোগ পাবে। সে কীভাবে সুযোগটা নেয়, দেখতে মুখিয়ে আছি আমি। ভালো ব্যাটসম্যান'।
হারে হারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটোরদের মনোবল বাড়াতে সেনাবহিনীর আইএসএসবিতে মানসিক ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, 'যদি কেউ নিজের কাছে ভালো হয় এবং ক্রিকেট বোধ ভালো থাকে, তাহলে এটা অবশ্যই সহায়তা করবে। তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এসবকে ক্রিকেটের কাজে লাগানো। প্রভাব রাখার মতো খুব বেশি সময়ও তো আসলে নেই। কাজেই আমার মনে হয় না মানসিক শক্তির ব্যাপারটি খুব প্রভাব রাখবে। দু-একটি ব্যাপার কাজ করতে পারে। দেখা যাক, ওয়েস্ট ইন্ডজে গেলে বোঝা যেতে পারে'।
দলের কোচিং স্টাফের বরাত দিয়ে কিছু দিন আগে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টানা ১০ দিন খেলার সামর্থ নেই। সিডন্স এ কথার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি বলেন, 'আমার তা মনে হয় না। মুশফিক, লিটন…এমনকি তামিম… তামিম টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছে বেশ আগে, তবে এখনও তার সামর্থ্য আছে এটা করার। মুশফিক তো এই সিরিজেই করে দেখাল। লিটন দুই টেস্টেই পারফর্ম করেছে। এসবই প্রমাণ যে এটা সত্যি নয়। তরুণদের কাছ থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স প্রয়োজন এখন। সিনিয়ররা জ্বলে উঠছে, তরুণদের এগিয়ে আসা উচিত এখন। জয়কে নিয়ে ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত ২-৩ বছর ধরে খেলছে, তবে এখনও তো মোটে ১৭ টেস্ট খেলেছে। ওদের নিয়ে তাই আমাদের সময় আছে। সিনিয়রদের পারফর্ম করে যেতে হবে'।
এমপি/এএজেড