সাফল্যের ভাগ নিলে ব্যর্থতার দায়ও বিসিবির নেওয়া উচিত
মিরপুরের উইকেটের চরিত্র বুঝা দায়। কখনো রান খরা। কখনো রান বন্যা। তবে রান খরাই বেশি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও রান করতে ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করতে হয়। তামিম-মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলরা ভালো করতে না পারলেই কিংবা রান খরায় পড়লেই দোষ চাপে উইকেটে উপর। আরও পরিষ্কার করে বললে কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার উপর।
আবার এই মিরপুরেই বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়া- ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে। ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ও এসেছে এই মিরপুরে। আবার নিউ জিল্যান্ডকে ধবলধোলাইও করা হয়েছে মিরপুরে। এতো সাফল্য মুহুর্তেই বিলীন হয়ে যায় একটি বা দুইটি ম্যাচে ভালো করতে না পারলে। যার দোষ গিয়ে পড়ে গামিনির উপর। কিন্তু গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম গামিনির উপর দোষ দিতে নারাজ। ব্যর্থতারে দায় তিনি নিজের উপর নিয়েছেন। ক্রিকেট বোর্ডেরও নেয়া উচিত বলে জানান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজকে সামনে রেখে আজ পিচ পরিদর্শনে এনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কাউকে নিয়ে আলাদাভাবে মন্তব্য করব না। আপনাদেরকে যেটা একটু আগে বললাম তিন হাজার খেলা হয়, আপনারা খালি মেপে দেখবেন, মিরপুরের মত স্টেডিয়ামে আমরা ৬০ দিনের বেশি খেলা উচিত না। সেখানে জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১২০ দিন খেলেছি আমরা। কন্টিনিউয়াস। এখানে স্বয়ং বিধাতা এসেও আমার মনে হয় না কোনোভাবে সম্ভব। দায়টা আমি নেব, আমাদের বোর্ড হিসেবে নেওয়া উচিত। আপনারা যদি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রোশ করেন আমার মনে হয় এটা খুব অন্যায় হবে। কারণ এই মাঠে যে জয়গুলো আছে তার মালাটাতো অন্য কাউকে পরাতে পারি। কিন্তু মালাটাতো আমরা বোর্ডই নেই ।’
তিনি বাংলাদেশের জয়গুলো মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ আপনারা কিন্তু জয়গুলো দেখেন। , আমরা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মত পরাশক্তির বিপক্ষে টেস্ট জয় করেছি। আমরা নিউ জিল্যান্ডের মত দলকে একই মাঠে ফোর নীলে হারিয়েছি। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছি এবং সব দলের বিপক্ষে জিতেছি। আমাদের যে সমালোচনা গুলো হয় অজ্ঞতার কারণে হয়। আমরা যদি বৈজ্ঞানিকভাবে উপলদ্ধি করি, তাহলে অনেক কিছু ভালো শোনাব ।’
মাহবুব আনাম শুনালেন উইকেট তৈরি করতে গিয়ে সমস্যার কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আরেকটা সমস্যা উইকেট বানানোর জন্য যে মাটিটা দরকার, সে মাটিতে যা গুণ থাকা দরকার তা সব জায়াগায় পাওয়া যায় না। আপনারা যদি দেখে থাকেন মিরপুরের উইকেট কালো মাটি দিয়ে বানানো। এই উইকেট আমরা পার্থের কিউরেটর দিয়য়ে বানিয়েছিলাম।’
বাংলাদেশে মাঠের সমস্যা কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ আমাদের যে পরিমাণ খেলা তাতে ২০টা আন্তর্জাতিক মানের মাঠ তৈরি না করলে কোন ভাবেই সম্ভব না ।‘ কিন্তু চাইলেইতো আর ২০ টা মাঠ তৈরি করা সম্ভব নয়।
তাই যে মাঠগুলো আছে, সে গুলোর উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে মাহবুব আনাম বলেন, ‘আপনারা জানেন গতবছর আমরা সিলেটের পর চট্টগ্রামের কাজ ধরেছি। সেটা অতিসত্বর শেষ হয়ে যাবে। এই অফ সিজনে আমরা রাজশাহীতে কাজ ধরবো, আমরা বগুড়াতে কিছু কাজ ধরেছি। সেটা বাইরের অনুশীলন উইকেট। আমরা প্রত্যেকটা স্টেডিয়ামের একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছি, যেটা প্রেসিডেন্ট মহোদয় আগেই বলেছেন যে প্রত্যেকটা রিজিয়নে আমাদের ভালো একটা ফেসিলিটিজজ থাকবে। যেটাতে খেলার বাইরে অনুশীলন এবং একাডেমি থাকবে। তো মাস্টারপ্ল্যান এর জন্য আমরা এখন রাজশাহী আর খুলনা- এই দুইটাকে সার্ভে করে, কোথায় কি প্রস্তুত করা যায় সেগুলো আমরা দেখব। এ বছরে আমাদের পরিকল্পনাই মিরপুরের অ্যাডিশনাল উইকেট এবং রাজশাহী আর বগুড়া- এই তিনটা ভেন্যুকে আমরা সম্পূর্ণরূপে আপডেট করব। ‘
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মাহবুব আনাম বলেন, ‘মিরপুরে অনুশীলনের জন্য সেন্ট্রারে আমরা আরো চারটি উইকেট তৈরি করতে যাচ্ছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা কাজে হাত দিব। কারণ আপনারা জানেন এখানে বিভিন্ন সময় জাতীয় দল বা অন্যান্য দল অনুশীলন করে থাকে। কাজেই সেন্ট্রারে আমাদের যে আটটি উইকেট আছে, সেগুলো ইফেক্টেড হয়। সে ক্ষেত্রে লোকাল খেলাগুলোর জন্য আমরা ভালো উইকেট দিতে পারি না। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেন্টারে আমরা দুই দিকে আট-আট করে ১৬ ফিটের আমরা আরো চারটি উইকেট করব যেগুলো অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা হবে।’
বাংলাদেশে যে কয়টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে, তার সব কটিই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের বানানো। বিসিবি নিজের টাকা দিয়ে পূ্র্বাচলে শেখ হাসিনা আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়াম নির্মান করছে। এই সংখ্যা তারা বাড়ানোর দিকে মনযোগি হতে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে।
মাহবুব আনাম বলেন, ‘ ইতোমধ্যে ঢাকায় বেশ কিছু মাঠ ক্রয়ের ব্যাপারে কথা হয়েছে। আমরা জায়গা পরিদর্শন করেছি। এগুলো যেহেতু প্রাইভেট সেক্টরের জমি, সেই জমিগুলোর কাগজপত্র আমরা যাচাই-বাছাই করছি। বাছাই শেষ হলে আগামী বোর্ড মিটিংয়ে হয়তো আমরা সেগুলো ক্রয়ের জন্য পরিকল্পনা পেশ করব। আমাদের ইচ্ছা ঢাকায় যাতে ছয়টি উন্নত মানের ভেন্যু থাকে। তাতে ঢাকায় যে পরিমাণ খেলাগুলো হয়- প্রিমিয়ার লিগ বা অন্যান্য খেল, সেগুলো যাতে সুন্দরভাবে করা যায়। এখন আমরা ফতুল্লাকে নিয়ে স্ট্রাগল করছি। ফতুল্লার কাজ শুরু হলে ওখানে আমরা দুইটা মাঠ পেয়ে যাব। পূর্বাচলে আমরা দুইটি মাঠ করবো। এর বাইরে মিরপুর তো রয়েছেই। বিকেএসপি আছে। তার বাইরেও দুটো মাঠ করার মত ঢাকার আশেপাশে জায়গা ক্রয় করা হবে ‘
এমপি/এমএসপি