সিরিজ জয়কে সবার উপরে রাখবেন তামিম
'মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
গত ২০ বছরে যা হয়নি, এবার এক সফরেই তা হয়েছে। টেস্ট মযার্দা পাওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা অন্য কোনো আসর খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাতে কোনো ফরম্যাটেই জিততে পারেনি। এবারও আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা মনে নিয়েই বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল। এ রকমটি হওয়ার অসংখ্য কারণও ছিল! অতীতের মলিন রেকর্ডের সঙ্গে কিছুদিন আগে প্রোটিয়ারা ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। সেখানে স্বাগতিকদের সামনে বাংলাদেশ কী আর এমন শক্তি? যে কারণে দেশ ছাড়ার আগে ওয়ানডে কাপ্তান তামিম ইকবাল সরাসরি জয়ের কোনো কথা না বলেননি। তবে পরোক্ষভাবে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তামিম ইকবালের সেই পরিবর্তন প্রথম ম্যাচে এসেই লুটিয়ে পড়ে বাংলাদেশের শিবিরে।
দূর হয় দীর্ঘ ২০ বছরের খরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে ধাবমান হরিণের মতো এগুতে থাকা বাংলাদেশ দল সেখানেই থেমে থাকতে চায়নি। সিরিজ জয়ের নতুন স্বপ্নেরও বীজ বুনন করে। চেয়েছিল জোহানেসবার্গেই সেই বীজকে কলি থেকে ফুলে রূপান্তর করতে। কিন্তু পারেনি। হেরেছিল ৯ উইকেটে। কিন্তু সেঞ্চুরিয়ানে এসে ফুল হয়ে ফুটে দক্ষিণ আফ্রিকা পাল্টা আঘাত হেনে ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে।
দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি ছিল সবচেয়ে সেরা ওয়ানডে সিরিজ জয়। যে কারণে তামিম ইকবাল ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন এটি তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। যদিও ঘরের মাঠে ২-১৫ সালে একই (২-১) ব্যবধানে সিরিজ জেতার নজির ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়, চাট্টিখানি কথা নয়।
তাইতো তামিম ইকবালের কণ্ঠে ছিল, ‘অনেক বড় অর্জন এটি। আমার ক্যারিয়ারে এটি খুব সম্ভবত বড় জয়গুলোর একটি। এমনকি আমারা দলে যে সিনিয়র ক্রিকেটার আছি তাদেরও। অবশ্যই এ সিরিজ জয় আমার কাছে সবার উপরে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ প্রথমবারের মতো সিরিজ জেতা তাও দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রথম ম্যাচ জেতার পর বিশ্বাস আসা শুরু হল যে আমাদের সিরিজ জয়ের সুযোগ আছে। আজ দারুণ টিম পারফরম্যান্স ছিল। এর চেয়ে খুশি আর হতেই পারি না।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতা খুবই কঠিন। ওদের গত সিরিজ দেখুন, পূর্ণ শক্তির ভারতের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে। আমাদের একটা বিশ্বাস অবশ্যই ছিল যে আমরা জিততে পারি। কিন্তু সিরিজ জিততে আমাদের অত্যন্ত ভালো খেলতে হতো।’
এমন সাফল্যের পর নিজেদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বাড়বে বলে জানান তামিম। তিনি বলেন, ‘এ সাফল্য আমাদের বিশ্বাস যোগাবে যে বিদেশে সফরে শুধু হারব না, ম্যাচও জিততে পারি, এমন কী সিরিজও। এ সিরিজ জয় দলের সবার মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে।’
তামিম ইকবাল বলেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটে আমাদের অনেক গর্ব। আমরা বিশ্বাস করি এ ফরম্যাটে আমরা অনেক ভালো দল। আমাদের হোম সিরিজে বিশ্বের সব দলকেই হারিয়েছি। আমার মতে, এ ফরম্যাটে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং গত ৫-৬ বছর ধরেই খুব ভালো করছি। বিদেশে জেতাই বাকি ছিল। এ সিরিজে আমরা তা করে দেখিয়েছি।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫৪ রানে যে আটকে রাখতে পারবেন তা কিন্তু তামিম ইকবালের ভাবনায় ভুলেও একবার আসেনি। তিনি বলেন, ‘এটা মনে করিনি দেড়শ রানে অলআউট করে দেব। কোচ থেকে শুরু করে সবাই একটা কথাই বলেছি- আমাদের যা আছে সব যেন মাঠে দিয়ে আসি। দুটি উইকেট তুলে নেওয়ার পর আমার মাথায় একটা ভাবনাই ছিল- আমরা আগ্রাসী থাকব। তাসকিন যত জোরে বল করতে পারে এবং যেন উইকেট পেতে পারে। মাঝেমাঝে আমাদের এরকম হয়- ৩-৪টা উইকেট নিয়ে নেই। এরপর বড় পার্টনারশিপ হয়ে যায়। ভালো সংগ্রহ জড়ো করে ফেলে। আজকের মনোভাব এমন ছিল- যা-ই হোক আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
টার্গেট কম থাকলেও তামিম ইকবালরা যখন তাড়া করতে নেমেছিলেন, তখন তারা ভাবনায় রেখেছিলেন তাদের সামনে টার্গেট ২৭০-২৮০ রান। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম ইনিংস শেষে মাঠে গোল হয়ে আমার বার্তা ছিল আমরা এ ইনিংস যেন ১৫৪ রান হিসেবে না খেলি। আমরা যেন চিন্তা করি ২৭০-২৮০ তাড়া করছি। কারণ এসব ছোট খেলা কখনো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। দ্রুত ওরা ২ উইকেট পেলে আগ্রাসী থাকার চেষ্টা করব।’
সিরিজ জয়ে ২২ গজে দলের এমন সাফল্যে তামিম ইকবাল প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অকুণ্ঠ সমর্থনেরও প্রশংসা করেছেন। দর্শকরা ছিলেন দ্বাদশ ক্রিকেটার। আর সেঞ্চুরিয়ানকে মনে হয়েছে মিনি ঢাকা। তামিম ইকবাল বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছে এটি মিনি ঢাকা। দর্শকরা অসাধারণ ছিল। রাসেল, আমাদের হেড কোচ যেমনটা বলে- তারাই আমাদের দলের দ্বাদশ ব্যক্তি। আমরা যেখানেই খেলি, জিতি অথবা হারি তারা সবসময় থাকে আমাদের পাশে।’
এমপি/এসএন